পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৪৬ তোমার সাক্ষাতে করি আপনে নাচিন্তু । চিত্তের অভীষ্ট যত সকলি পাইকু ॥ কি চাহিমু প্ৰভু কি বা শেষ আছে আর । সাক্ষাতে দেখিয় প্রভু তোর অবতার ॥ কি চাহিমু কি বা নাহি জানহ আপনে । কি বা নাহি দেণ তুমি কি বা দরশনে ॥ ক্ষণকাল পরে পুনরায়— 會 - অদ্বৈত বোলেন যদি ভক্তি বিলাইব । স্ত্রী শূদ্র আদি যত মুখেরে সে দিব । বিদ্যাধন কুল আদি তপস্যার মদে । তোর ভক্ত তোর ভক্তি যেচে মনে বাধে ॥ সে পাপিষ্ঠ সব দেখি মঞ্চক পুড়িয়া । চণ্ডাল নচুক তোর নাম গুণ গায়া ॥” একদিন সংকীৰ্ত্তনান্তে উপবিষ্ট হইয়! গৌর “পুণ্ডরীক, পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি” বলিয়া অবিরাম রোদন করিতে লাগিলেন । পুণ্ডরীক শ্ৰীকৃষ্ণের নাম। ভক্তগণ প্রথমে ভাবিলেন বুঝি বা শ্ৰীকৃষ্ণের উদেখেই গৌর রোদন করিতেছেন, কিন্তু বিদ্যানিধি উপাধি শুনিয়া তাহার। সংশয়াপন্ন হইয়া, গৌর প্রকৃতিস্থ হইলে জিজ্ঞাসা করিলেন কাগর জন্য তিনি রোদন করিতেছিলেন। তখন গেীর বলিলেন “পুণ্ডরীক চট্টগ্রামে ব্রাহ্মণ কুলে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন। তিনি বান্থিক বিষয়ীর আচার পালন করেন – কিন্তু অন্তরে তাহার মত ভক্ত দুৰ্লভ । তাহার অদর্শনে আমি বড় কষ্ট ভোগ করিতেছি।” এই ঘটনার কয়েকদিন পরে পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি বহুসংখ্যক দাস দাসী সমভিব্যাহারে নবদ্বীপে সমাগত হইলেন। মুকুন্দ দত্তের নিবাস চট্টগ্রামে। তিমি বিদ্যানিধিকে জানিতেন। একদিন প্রিয় বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ষ, ফাস্তুন, ১৩১৯ বন্ধু গদাধরের সহিত মুকুন্দ বিদ্যানিধির সহিত সাক্ষাৎ করিবার জষ্ঠ গমন করিলেন । গদাধর দেখিলেন বিদ্যানিধি রাজপুত্রের ন্যায় মহামূল্য চন্দ্ৰাতপ তলে বিচিত্র আস্তরণ শোভিত খট্রার উপর উপবিষ্ট আছেন। দুইজন ভৃত্য ময়ূরপুচ্ছ-নিৰ্ম্মিত পাখাদ্ধার র্তাহাকে ব্যজন করিতেছে। বিদ্যানিধির ভোগবিলাসের প্রাচুর্য্য দেখিয়া গদাধরের মনে অবজ্ঞার উদয় হইল। তখন মুকুন্দ স্বীয় স্বাভাবিক সুকণ্ঠে ভাগবত হইতে আবৃত্তি করিলেন । “আছে৷ বকী যং স্তনকালকূটং জিঘাংসয়াহপায়য়দপ্যসাধ্বী । লেভে গতিং ধাক্ৰ্যচিতাং ততোহন্তং কং বা দয়ালুং শরণং ব্রজেম ॥” অসাধ্বী রাক্ষসী পুতনা যাহার বধেচ্ছায় কালকূটসম্পত স্তন তাহাকে পান করাইয়াও তাহার নিকটে তাহার ধাত্রীর উপযুক্ত গতি লাভ করিয়াছিল তদপেক্ষ দয়ালু আর কে আছে—যাহার শরণ লইব ? এই শ্লোক পঠিত হইবামাত্র বিদ্যানিধির নয়নে বন্যা ছুটিল। তিনি প্রেমে পুলকিত হইয়া “বোল বোল” বলিয়৷ নৃত্য করিতে লাগিলেন । র্তাহার বাহ্যজ্ঞান বিলুপ্ত হই। এবং তিনি উন্মত্তের মত “কৃষ্ণরে বাপরে” বলিয়া করুণ কণ্ঠে অবিরাম রোদন করিতে লাগিলেন। এই দৃপ্ত দেখিয়া ’ গদাধর বিস্থিত হইলেন-এবং ঈদৃশ ভক্তের প্রতি অবজ্ঞা করিয়াছেন বলিয়া নিতান্ত অমৃতপ্ত হইয়া স্বীয় পাপের প্রায়শ্চিত্তের জষ্ঠ র্তাহার নিকট মন্ত্রদীক্ষা গ্রহণ করিবার অভিপ্রায় জ্ঞাপন করিলেন। বিদ্যানিধি