পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯শ সংখ্যা | বুঝাইয়া দিল। ছেদির অকপট আত্মীয়তায় সরলচিত্ত প্রজাবৃন্দ বিমুগ্ধ হইল। বৎসরান্তে খাজনা, আদায় করিয়া ছেদি কাহাকেও রসিদ দিল না। সকলকে বুঝাইয়া দিল যে ছাপ রসিদ আনিতে লোক গিয়াছে, আসিলেই সকলকে রসিদ পাঠাইয়া দেওয়া হইবে। e পর বৎসরও ছেদি খাজনা লইয়। রসিদ দিল না। প্রজাদের বলিল যে রসিদ আসিয়াছিল বটে, কিন্তু রসিদে জমিদারের স্বাক্ষর ছিল না। সেইজন্য সে সমস্ত রসিদ জমিদারের নিকট ফেরত দিয়াছে। জুয়াচোর জমিদার তাহদের সরল পাইয়৷ ঠকাইবার চেষ্টা করিতে পারে, কিন্তু মুন্সী ছেদিপ্রসাদকে যিনি ঠকাঠবেন তাহাকে ‘গঙ্গাজি"তে মুখ ধুইয়া আসিতে হইবে। e পাটোয়ারির চতুরতা এবং প্রজাঞ্জাতি দেখিয়া প্রজাবৃন্দ অধিকতর বিমুগ্ধ হইল , তৃতীয় বৎসরে ছেদি প্রজাদের ডাকাইয়৷ গোপনে বলিল যে পাষণ্ড জমিদার তাহদের খাজান সম্বন্ধে কি একটা গোলযোগ করিবার চেষ্টায় আছে, এই সময় হইতে তাহাদের এ বিষয়ে সাবধান হওয়া কৰ্ত্তব্য,• নহিলে ইহার পর বড় বিপদে পড়িতে হইবে। 'প্রজারা ব্যগ্র হইয়। জিজ্ঞাসা করিলে এ জন্য কি উপায় অবলম্বন করা কৰ্ত্তব্য। ছেদি বলিল তত্বাদের যাহার নিকটে যত পুরাতন রসিদ আছে,সমস্ত যদি তাহারা তাহার কাছে আনিয়া দেয় তাহা হইলে সে অবশুই একটা সদ্বপায় বাহির করিতে পারে। প্রজারা তাহাই বেহার-চিত্র ৬৭৩ করিল। ছেদি প্রসাদ রসিদগুলি লইয়৷ সিন্দুকে তুলিয়। রাখিল। প্রজাদের বলিল, এ সম্বন্ধে একবার সদরে গিয়া উকীলদের সঙ্গে পরামর্শ কর। অবশ্যক । এই সুযোগে ছেদি প্রজাদের তৃতীয় বৎসরের খাজনারও রসিদ্ধ দল না। . চতুর্থ বৎসরের প্রারম্ভে ছেদি জমিদারের উদেশে উচ্চকণ্ঠে অশ্রাব্য গাণি দিতে দিতে প্রজাবৃন্দকে জানাইল যে পাষণ্ড জমিদার শতকরা ৫০। টাকা হিসাবে অধিক খাজনা দাবি করিয়াছে। প্রথমাবধিই পাষণ্ডের এই প্রকার দুরভিসন্ধি ছিল, কিন্তু ছেদি তাহাকে বহু কষ্টে এতদিন নিরস্ত করিয়া রাখিয়াছিল! সক্রোধে ছেদি প্রজাদের আদেশ করিল তাহারা যেন কোন মতেই এই হত্যাচারী জমিদারের অন্যায় তাদেশ পালনে সম্মত না হয় । Es কিন্তু কিছুদিন পরেই প্রবঞ্চিত প্রজাবৰ্গ সভয়ে জানিল যে তাহদের নামে তিন বৎসরের বাকি খাজনার নালিশ হইয়াছে এবং ছেদিপ্রসাদের গিন্দুক হইতে প্রজাদের সমস্ত পুরাতন রসিদ জমিদারের গুপ্তচর কর্তৃক অপহৃত হইয়াছে। প্রজারা আসিয়া ছেদির কাছে কঁাদিয়া পড়িল ৷ শুনিয়া ছেদি প্রসাদ ক্রোধে আত্মসম্বরণ করিতে পারিল না "উঃ এতদূর অত্যাচার, এরূপ ভীষণ বিশ্বাসঘাতকতা !” বলিতে বলিতে ছেদি নিতান্ত উত্তেজিত হইয়া উঠিল । কিন্তু ফল কিছুই চইল না : বিনা রসিদে খাজনা দেওয়ার কথা আদাই তে গ্রাহ্য হইবার সস্তাবনা ছিল না—পুরাতন রসিদের অভাবে খাজনার হার সম্বন্ধুে প্রমাণও