سواه ۹ অধিষ্ঠাপিত করিয়াছেন, এই কার্য্যের মহত্ত্ব তন্মহত্বং মহত্ত্বং—যতদিন বঙ্গসাহিত্য থাকিবে, ততদিন ঘোষিত হইবে। আমার একটি শিষ্যের মত, সাহিত্য সেবারত ভদ্রলোক আমাকে সেদিন চুপি চুপি জিজ্ঞাসা করিতেছিলেন, “অভিভাষণ কাহাকে বলে ? আমি বলিলাম, “তা" ভাল জানি না ; গত বৎসরের পূৰ্ব্বে অতবড় কঠিন কথা আমি কখনও ব্যবহার করি নাই।” আবার প্রশ্ন হইল,-“যেখানে অভিভাষণ হয়, সেখানকার কথা কি বলিতে হয় ?” আমি বলিলাম,—“মহারাজ তাই করিয়াছিলেন, আমাদিগকে মহাকবি কালিদাসের কুটুম্ব করিবার উদ্যোগ করিয়াছিলেন । আমি ত সে সব কিছু পারিব না; চট্টগ্রামের কথা আমি ত কিছু জানি না। বৈবাহিকের “বিশ্বকোষ” উদঘাটন করিয়া কতকটা বিদ্যা জাহির করা যায়, কিন্তু তাহাও পারিব না।” “তবে আপনি বলবেন কি ?” আমি উত্তর করিলাম,—“আমি বলিব সাহিত্য সম্বন্ধে, ভাষা সম্বন্ধে, আর আমার চিরদিনের কথা বাঙ্গালার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে।” এবার শিষ্য গুরু সাজিলেন, বলিলেন,—“ও শেষ কথাটা বলিয়া আর কোন ফল নাই।” আমিও গম্ভীরভাবে আমার গুরুত্ব রক্ষা করিয়া গীত আওড়াইয়া বলিলাম,— “কৰ্ম্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।” আমার গুরু গাম্ভীর্য্যে শিস্য তুষ্ণীভূত হইলেন। বাস্তবিক আমি চট্টগ্রামের প্রায় কিছুই জানি না। জানিতাম সেই একজনকে—চট্টগ্রামের একমেবাদ্বিতীয়ং সেই নবীনচন্দ্র সেনকে । জানিতাম কেন বলি, র্তাহার সস্থিত বিশেষ বন্ধুত্বই ছিল । কিন্তু সে রবীন ত আর নাই। বঙ্গদর্শন ১২শ বর্ষ, চৈত্র, ১৩১৯ শোককাহিনী আর বাড়াইব না। আমার বড় পান্সে চোখ, অশ্রবর্ষিণী লেখনী এখনই সভা নষ্ট করিবে। বরং এমন করিয়া বলি, যিনি হাসিতে হয় হামুন, আর যিনি কাদিতে হয়, কাদিতে থাকুন।— আজি আমার এই কৃষ্ণমূৰ্ত্তির বাম গার্শ্বে সেই নবনীত-নিন্দিত কান্তি, হাস্তোজ্জলমুখ, দুৰ্বমুখী,স্থবিন্যস্ত-কেশকলাপ, জলভরা প্রাণভরা বিশাল চক্ষু যদি বসাইতে পারিতাম, তাহা হইলে আপনার সেই অপূৰ্ব্ব যুগলমূৰ্ত্তি নিরীক্ষণ করিয়া মোহিত হইতেন। কিন্তু সে নিতানবনীতশ্রী আর ত দেখিতে পাইব না। আর এখানকার ক্রযুক্ত আবদুল করিম সাহেবের কপার আমরা জানিয়াছি যে, অনেক গুলি মুসলমান কবি বাঙ্গালায় রাধাকৃষ্ণলীলা প্রভৃতি অতি গুহ বিষয়ে, অতি সুন্দর পদাবলি লিথিয় ভক্তিসাধনা পরিতৃপ্ত করিয়াছেন এবং ভক্ত বলিয়া বিখ্যাত হইয়াছেন। করিম সাহেবই সৰ্ব্ব প্রথমে কৰি আলিওয়ালের পরিচয় আমাদের নিকট দেন এমন নহে, তিনি আরও বিস্তর ছোটবড় হিন্দু মুসলমান কবির পরিচয় আমাদিগের কাছে দিয়াছেন ; তাহার মধ্যে মুসলমান শৈয়দ মর্ভূজ আলি, এত্তিম নাছির, সৈয়দ সোলতান, নূরমহম্মদ, সৈয়দ আমাইদিন, উজীর আলি পণ্ডিত এবং হিন্দু কৰি নটবল্লভ, দ্বিজ রঘুনাথ, ভবানন্দ, বাস্থদেব প্রভৃতির পদাবলিও তিনি প্রকাশিত করিয়াছেন। করিম সাহেব এই জন্ত সমগ্র সাহিত্যসেবীর কাছে ধন্যবাদ পাইবার যোগ্য। চট্টগ্রামের সাহিত্য-সেবার আর যাহা কিছু পরিচয় পাইয়াছি, তাহা পরিশিষ্টে বলিব। এইখানে দাড়াইয়া যদি বলি, সৌন্দৰ্য্যময়ের
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৭১৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।