১২শ সংখ্যা ] জগৎ সৌনর্ঘ্যের ভাণ্ডার, বোধ হয় তাহ হইলে কেহই আমার প্রতিবাদ করিবেন ন। এই মধুমাসে মধুর সন্মিলন, মধুর মলয়নিল সাগর-বক্ষ বাহিয়া প্রাণ শীতল করিতেছে, নানাবিধ বিহঙ্গের কলকাকলি রবে স্বভাবের কুঞ্জভবন সকল মুখরিত হইতেছে। ফুল ফুটিয়াছে,সৌরভ ছুটয়াছে ; আম্রশাখা মুঞ্জরিত, মধুমক্ষিক সকল ম’ ম’ শব্দে অনবরত মধ্যম পঞ্চম মুরে ঝঙ্কার দিতেছে। শাখিবর লতার বহুধারা বাহুলতা বেষ্টনে স্তব্ধপ্রায় হইয়া, “প্রিয়তমা নিদ্রা যায়, পাছে বিঘ্ন হয় তায়, নাহি নড়ে, কথা নাহি কয়।” চারিদিকে সৌন্দর্য্যের ছড়াছড়ি দেখিবার জিনিষ, উপভোগের সামগ্রী। কিন্তু সকলে দেখিতে পায় না, উপভোগ করিতে পারে না। উপভোগ করিতে না পারিলে মনুষ্যত্ব কমিয় বায়ু, মনুষ্য বৰ্ব্বর থাকিয়া যায় বা ক্রমে,হইয়া পড়ে । সকলরাপ সৌন্দর্য্য উপভোগের ক্ষমতাই প্রকৃত মনুষ্যত্নের*নিদর্শন। .” এই সৌন্দর্য্য আকাশে পাতালে, ভূতলে পৰ্ব্বত-শিখরে—সকল দিকে, সকল সময়ে অজক্স ছড়ান আছে। রথার্শ্বগজপদাতি-সেবিত নৃপতি যেমন হীরামরকর্তমাণিক্যমণ্ডিত প্রাসাদে সৌন্দৰ্য্য দেখিতে পান, দীনদরিদ্র পর্ণকুটারবাণী কৃষক ও সেইরূপ তাহার শস্তহামল ক্ষেত্রে নয়ন ভরিয়া সৌন্দৰ্য্য দেখিতে পায়। তবে উপভোগের প্রবৃত্তি ও ক্ষমতা হয় ত সম্রাটেরও কখন কখন থাকেন, তিনি দুগ্ধফেননিভশ্যায় শান্বিত হইয়াও মন্দাহনে দগ্ধ হন, আবার দীনহীন দরিদ্র তাহার পর্ণ শয্যায় শায়িত হইয়া সৌন্দৰ্য্যময়ের আনন্দ-রূপে বিভোর হইয়া থাকে। অভিভাষণ Գ օ:Տ ভগবান বৈচিত্র্য-প্রিয় ; জগৎ বৈচিত্র্যময়। ভগবান শৃঙ্খলাপ্রিয়, জগৎ শৃঙ্খলাময়। বৈচিত্র্যের সঙ্গে সঙ্গে যে শৃঙ্খল,—বহুর মধ্যে এক ভাব, তাহাই জগতের মূল ; বৈচিত্র্যের মধ্যে যে শৃঙ্খলা তাহাই সৌন্দর্য্যের মূল। এই সৌন্দৰ্য্য ধিনি উপলব্ধি করিতে পারেন, তিনি পুরিতৃপ্ত হন, প্রফুল্ল হন ; তাষ্টার" মনে মঙ্গলময়ের মঙ্গলভাব আপন আপনি উদিত হয়। অল্পবিস্তর সকলেরই হয়,—হয় ত ভারতবাসীর এবং যুদীয়াবাসীর অধিক পরিমাণে হয়। সেই জন্তই অন্ত জাতি বিস্কৃতির অতলে বিলুপ্ত হইলেও, ভারতবাণী ও যুদী আজিও জীবন্ত রহিয়াছে, শত নিৰ্য্যাতনেও তাহারা জীবন্ত । সুকুমার সাহিত্য-সেবায় এই সৌন্দর্য্য উপভোগের ক্ষমতা জন্মায়ু, বৃদ্ধি পায় এবং झुप्र ! রস-রচনার নাম সাহিত্য। সৌন্দর্ঘ্যের নাড়া চাড়া করিলে রস বাহির হয়। “ধূৰ্ম্মিক লোক সংসারের শ্রেষ্ঠ জীব” বলিলে স্বরূপ উক্তি হয়, সত্য কথা বলা হয়, কিন্তু “ধাৰ্ম্মিক লোক পৃথিবীর অলঙ্কার” বলিলে সেই একই কথা সুন্দর করিয়া বলা হয়, তাহাতে রস জন্মায়। প্রথমটি কেবলমাত্র ভাষা, দ্বিতীয়টি সাহিত্যের টুকরা নমুনা । বহুকালের শিক্ষার এবং অভ্যাসের গুণে, জলবায়ুর প্রকৃতিবশে আমরা একরূপ কোমলश्रडाद হইয়াছি ; আমাদের মাতৃভাষা এত সহজে সুন্দর হয় যে, আমরা মনে করিলেই সাহিত্যের সৌন্দৰ্য্য স্বচ্ছন্দে উপভোগ করিতে পারি। “ভালবার্সি",একটি অতি সাধারণ কথা। ‘আমি ত্ত্বোমাকে ভালবাসি’ কি না-ভাল বলিয়া জানি ও বিশ্বাস করি। কথাটি বৈদিক
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৭১৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।