৭১২ তাহাতেও বিশেষ ফল হয় না। আমাদের দুর্দশাই এই, আমরা দূরে পশ্চিমদিকে নিয়তই নয়ন নিক্ষেপ করিয়া আছি, কখন আপনাদের দিকে, আপনাদের ঘরর দিকে, আপনাদের গৃহস্থালির দিকে, আপনাদের কাব্যের দিকে দৃষ্ট নিক্ষেপ কর নী। ঐ সমালোচক নবীনচন্দ্র ও কবি নবী চন্দ্রের মধ্যে তুলনা করিয়াই দেখুন না। তিনি বঙ্কিমচন্ত্রের সমালোচনা কালে কেমন আমাদের আদর্শের কথা তুলিলেন, কিন্তু তাহার কাব্যের মুভদ্রা, মলোচনা, শৈলজা—এ সকল কি ? তাহারই কথায় জিজ্ঞাসা করিতে ইচ্ছা হয়,—ভারতীয় সাহিত্যের হিসাবে উৎকৃষ্ট কি ? সেই ষে কুৰুক্ষেত্র সমরের অবসর সময়ে রাত্রিকালে হিন্দুরমণী দীপ লইয়া হতাহতের অনুসন্ধান করিতেছেন—সেটি কি ফোরেন্স নাইটিংগেলের এক রূপ সংস্করণ নয় ? - অতিথি ভারতে চিরদিনই পূজ্য। সেই অতিথি অঙ্গনে উপস্থিত; কুলবধূ তাহাকে অর্ঘ্য দিবার জন্ত করঙ্ক পরিষ্কার করিতেছেন, এমন সময়ে তাহার স্বামী পথশ্রান্ত হইয়া আসিলেন। সেই মহাব্ৰত আতিথ্য পড়িয়া রহিল, অতিথি স্বাগত-সেবা না পাইয়া দাড়াইয়া রছিলেন, কুলবধূ করষ্ক অধোঁত রাখিয়া দিয়া পতিসেবার জন্ত ব্যস্ত হইলেন।—এই না হৈল আমাদের সধবা কুলবধূর আদর্শ। যদি স্বামিসেবা বিস্তৃত হইয়া কুলবধু পরপুরুষের হতাহতের সেবায় ব্যাপৃত হন, ভাহা হইলে সেই আদর্শ থাকে কি ? কখনই থাকে না। প্রাচীন উচ্চ আদর্শ আমাদের সাহিত্যে রাখিতেই হইবে। পুরাণইতিহাসের আদর্শ যদি সমাজে নৃা থাকে, সমাজের আদশ যদি সাহিত্যে প্রতিফলিত না বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, চৈত্র, ১৩১৯ হয়। তবে বিকৃত সাহিতের দোষে সমাজও বিকৃত হইবে। আমাদের গৃহস্থালির মধ্যে যে শান্তি,যে প্রীতি, দয়া-মায়, আতিথ্য, দেবভক্তি, গুরুজনে ভক্তি আছে, তাহা ক্রমে লুপ্ত হইবে,—আমরা মন্ত্রব্যত্ব হারাইয়া সৰ্ব্বস্বাস্ত হইব । n এখন ভাষার কথা। বঙ্গাক্ষরে লিখিত বা মুদ্রিত হইলেই বঙ্গভাষা হয় না ; বঙ্গীয় শব্দ বিন্যস্ত হইলেও বঙ্গভাষা হয় না । ভাষাশরীরের অভ্যন্তরে একটি প্রাণপদার্থ আছে, সেইটি বাঙ্গালির মত হইলে তবে বাঙ্গালির উপযোগী ভাষা হয় । ভাষা বুঝিতে হইলে প্রাণ-পদাৰ্থ বুঝিতে হয়। ভাষা প্রাণের জিনিষ। প্রাণের ব্যাকুলতায় শিশুদিগের ভাষা ফুটিতে থাকে। কথিত হইয়াছে যে, নঞ বাচক শব্দ সভ্য অসভ্য, অনেক ভাষাতেই তুল্য রূপ; ন’ fig Etz S 1 A, A, Gf, no, not, nil ইত্যাদি। কেন এমন-ক্ষইল? সকল দেশেই দেখা যায়, ছেলেরা দুধ খাইতে বড় নারাজ,— তা মাতৃস্তন হইতেই কি আর পত্রপুট ৰা কোনরূপ মূল্যবান্ পাত্র হইতেই বা কি। . মা ছেলেকে ফোলে ফেলিয়া বলপূৰ্ব্বক দুধ খাওয়াইবার চেষ্টা করিতেছেন, আর ছেলে দাত টিপিয়া, মাথা নাড়িয়া প্রাণের ব্যাকুলতায় কোনরূপ নিষেধবাচক বা অসন্মতি স্থচক শব্দ বাহির করিবার চেষ্টা করিতেছে,—ীত টিপিয়া থাকিলে আঁর কি শৰ বাহির হইতে পারে— ছেলেটি বলিতেছে, “ন ন নে নৈ নি নি’ ইত্যাদি। এই সাৰ্ব্বদৈশিক ব্যাপার হইতে ন হইয়াছে নিষেধবাচক বা অসন্মতিসূচক। এই ভাষাপুরাণের মধ্যে কতটুকু ইতিহাস
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৭১৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।