১২শ সংখ্যা ] আছে, তাহা বলিতে পারি আর নাই পারি,প্রাণের ব্যাকুলতায় যে ভাষার উৎপত্তি সে কথা নিশ্চয়। পশুপক্ষীর কি প্রাণের ব্যাকুলত নাই ? আছে বৈ কি। তবে তাঁহাদের মধ্যে আমাদের মত ভাষা নাই কেন ? ইহার উত্তরে আবার একটি বিচিত্র রহস্তময় কূথা বলিতে হইতেছে। মামুষের প্রাণ তিনটি । দার্শনিক মতে পঞ্চ প্রচুণর কথা আছে, সে বায়ুগত প্ৰাণ ; তাতার কথা এখন ধরিব না। প্রাণ তিনটি ; সেই জন্য শাস্ত্রে প্রাণ নিত্য বহুবচনান্ত পদ,— ত্বং হি প্রাণাঃ শরীরে । তিনটি প্রাণ কোথা . হইতে আসিল ? একটি পিতৃস্থানে ঔরসে পাইয়াছি, একটি মাতৃস্থানে জঠরে পাইয়াছি, আর একটি আমার নিজস্ব-কৰ্ম্মস্থত্রে পাইয়াছি। সংস্কৃত বচন তুলিয়া প্রবন্ধ দুৰ্ব্বোধ্য করিব না ; কিন্তু অনেকে আমার , কথা প্রত্যক্ষ করিয়া থাকিবেন । মনের ভিতর শ্রেয় ও প্রেয়ুর মধ্যে বিবাঞ্ছ আঁত প্রাচীন শাস্ত্রে আছে ; উপনিষদে আছে। মুমতি-কুমতির কলহ অনেক বাঙ্গালী গ্রন্থকারও লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। কিন্তু এই শ্রেয় প্রেয় ব সুমতিকুমতি-কলহে একটি’ তৃতীয় প্রাণ মধ্যস্থরূপে প্রকাশিত হন,- এ কথা স্পষ্ট করিয়া কেই না লিখিলেও, আমি বলি আপনাদের মধ্যে কেহু,না কেহ অবহু প্রত্যক্ষ করিয়াছেন। ফল কথা প্রাণ তিনটি, ব্যষ্টিভাবে দেখা যাউক আর নাই যাউক, সমষ্টিভাবে অনেক সময়েই অনুভূত হই থাকে। পিতামাতার চেহার", ধরণধারণ, আকৃতি-প্রকৃতি, স্বভাব-মেজাজ– এই সকল যে সন্তানে পার, তাহা অনেকেই জানেন ও মানেন। আমরা পৃথকৃ পৃথক্ প্রাণও অভিভায়ণ ">○ পিত মাতার নিকট হইতে পাইয়া থাকি। আমরা কে ? আমি কে ? সেই কৰ্ম্মফল ভোগী পুরুষ। তবেই তিনটা জড়াইয়া একটা হইল । এই প্রাণ বা মহাপ্রাণ আছে বলিয়াই আমরা প্রাণের আবেগ প্রকাশ করিতে পারি— তাহারই নাম ভাষা। যে ভাষায় প্রাণ নাই, সে ভাই নয়। এক সময়ে ভারতবর্ষে ঋষিমুনিদের, ব্রাহ্মণদের প্রাণ ছিল। সেই প্রাণের স্ফূৰ্ত্তিতে র্তাহারা দেবভাষায় মন্ত্রশক্তিবলে প্রাণের দেবতার সহিত সম্পর্ক পাতাইয়াছিলেন। এক সময়ে ক্ষত্রিয়ের প্রাণ ছিল । সূৰ্য্যচন্দ্রবংশীয়ের সেই প্রাণের বলে পুরাণ ইতিহাসে অধিনায়কত্ব করিয়াছেন। এক সময়ে বৈঙ্গের বা পণিকের বা বণিকের প্রাণ ছিল। তাঙ্গর সমুদ্রপথে পোতারোহণে একদিকে ফিনিসিয়া ও বিনিস্, অন্যদিকে যবদ্বীপ, সুমাত্রা, বলি, বণীয়, চীন, জাপান—এমন কি কাহারও কাহারও মতে, সুদূর আমেরিকা পৰ্য্যস্ত ভারতের বাণিজ্য বিস্তার করিয়াছিলেন। কিন্তু তে তিনো দিবসাঃ গতা: সে দিন আর নাই । সেই প্রাণীদিগের প্রাণবন্ত; আর নাই । যদি থাকেন ত লোকচক্ষুর প্রায় অগোচরে, সমাজের নিভৃত নিলয়ে লুকাইয়া আছেন। ভারতের প্রাণ বাঙ্গালার ক্ষীণ প্রাণ এখন কেবল শস্তোৎপাদক কৃষকের হস্তে। এইজন্য ইংরেজের বলেন, ভারতবাসী প্রধানতঃ কৃষিজীবী। ঠিক কথা । বিদ্যা সাহেবদের কাছে ; ক্ষত্রিয়ত্ব গোরার কাছে ; কলকারখানা, রেলগাড়া, ষ্টিমার—সকলই সাহেবদের কাছে। ভারতবাসীর কোন দিকে যদি কিছু উৎপন্ন করিবার ক্ষমতা থাকে ত সে কেবল চাষে।
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৭১৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।