পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৭১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

이》8 চাষেই আমাদের প্রাণ বাচে, চাষেই আমাদের প্রাণ আছে। সে প্রাণে আড়ম্বর নাই, জয়ডঙ্কা নাই, সভা নাই, বক্তৃতা নাই, সন্মিলন . নাই, আস্ফালন নাই— এ সকল কিছুই নাই, তবু প্রাণ আছে, উৎপন্ন করিবার, শক্তি আছে ; তোমার আমা কাহারও তা নাই। স্লেচ্ছর্ষি জন ব্রাইটের মহম্বাক্য স্মরণ করুন,“A nation lives in the cottage” কুটীরবাসীকে লইয়াই দেশ বা জাতি। ঐ কথা ইংলণ্ডের মনীষী-মুখে। যে ইংলণ্ড প্রতাপে অদ্বিতীয়, শৌর্য্যেবীর্য্যে অসামান্ত, সেনা-পত্যে রণতরীসাকল্যে জগতে দুৰ্দ্ধর্ষ-সেই ইংলণ্ডের জন ব্রাইট বলিতেছেন,—কুটীরবাসী লইরাই দেশ। আর, আমাদের উপরিস্তরে কিছু নাই বলিলেও চলে, অথচ আমরা নিম্নস্তরের গৌরব বুঝি না যেখানে সমাজের প্রাণ সেখানকার গৌরব বুঝি না। নিম্নস্তরকে অবহেলা করিলে দেশের প্রাণে অবহেলা করা হয়। নিম্নস্তরের ভাষায় অবহেলা, অবজ্ঞা, উপহাস ঘৃণা করিলে আমরা নিশ্চয়ই প্রাণ হীরাইব । অবহেলা করিতে সংস্কৃত পারেন, ল্যাটিন পারেন, হীব্র পারেন, গ্ৰীক পারেন, আরবি— হয় ত পুরাতন পারসীও পারেন ; কিন্তু ইংরাজি পারেন না, ফরাসি পারেন না, জৰ্ম্মাণ পারেন না—মৃত ভাষায় পারেন, জীবন্ত ভাষায় পারেন না। আমরা যদি আমাদের মাতৃভাষাকে জীবন্ত প্রাণবন্ত করিতে বা রাখিতে চাই, তাহ হইলে আমাদিগের নিম্নস্তরের ভাষাকে অবহেলা করিলে চলিবে না। ভাষাতে যাদুঘরের মত রাশি রাশি কঙ্কাল, পেটে মসলা-পূর বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, চৈত্র, ১৩১৯ পশুপক্ষী রাখিলে চলিবে না ; চিড়িয়াখানার মত জীবন্ত পশুপক্ষী বন্দী করিয়া রাখিলেও চলিবে না, সেখানেও প্রাণ কম। ভাষাকে একটি বড় দেশী মেলার মত করিতে হইবে। তাহার মধ্যে জনত চাই, ক্রেতাবিক্রেতার চলাচল চাই, জনতার মধ্যে উচ্চ রোল চাই, হর্ষের উল্লাস চাই, বিষাদের বার্তা চাই, সুখ-দুঃখজড়িত উচ্চ নীচ মানবসঙ্ঘের ংঘর্ষণ চাই—অর্থাৎ চলন্ত প্রাণ চাই । কুলীন-মৌলিক, অপ্রাকৃত-প্রাকৃত, সন্ত্রান্ত ইতর,—সমাজের নানা স্তরে এইরূপ বিভেদ করিয়া আমরা বি. র গণ্ডগোল করিয়া থাকি । মাতৃ-ভাষার মহিমময়ী শাখাশ্রেণীতে আবার সেইরূপ কুলীন-মৌলিক বিভেদ বলবৎ করিয়া আর গণ্ডগোল না করিলেই ভাল হয়। পূৰ্ব্বে দেশ-প্রচলিত ভাষার তিনটি অঙ্গ ছিল; (১ তৎসম অর্থাৎ সংস্কৃতসম, (২) তদ্ভব অর্থাৎ সংস্কৃতোদ্ভব, এবং (৩) দেশজ। এখন আমাদের অদৃষ্টবশে-হইয়াছে চারিটি,-আর একটি বিদেশজ। কিন্তু ইহাদের মধ্যে কুলীনমৌলিক কোন বিভেদ থাকিতেই পারে না । ঐ বিদেশী ডাক্তার আসিয়া, জুতাশুদ্ধ তোমার ছেলের বিছানার পাশে বসিয়া, ঘড়ি খুলিয়া নাড়ীর স্পন্দন গণনা করিতেছেন, উহাকে কতদিন আর বিদেশী বলিয়া ঘৃণার চক্ষে দেখিবে বল ? উনি তোমার সন্তানের প্রাণদাতা, তোমার মহোপকারী বন্ধু। তাহাকে তোমার সংলারের একজন না ভাবিয়া কিরূপে থাকিবে? তবে তাহাকে ঠাকুরঘরে প্রবেশ করিতে দিবে না—প্রাণ গেলেও দিবে না,— সে স্বতন্ত্র কথা । এরূপ বলতে কেহ মনে করিবেন না