Գ( Ն সে টুপি খুলিয়া অভিবাদন করিল এবং ভদ্র লোকটর মতন মন্থরগতিতে আমার পশ্চাতে পশ্চাতে চলিতে আরম্ভ করিল। টিউবের ষ্টেশনে যাইয়া যখন লিফটে ( Lift ) চড়িলাম, তখন সেও সেই লিফটেই উঠিল আমি ঈষৎ হাসিয়া বলিলাম—“আজ যে অনেক দূর যেতে হবে। “কত দূর, মিঃ—?” “উলুইচ ” “বাব, আমার যে এখনও খাওয়া দাওয়া হয় নাই।” “আমি খাইয়াই আসিয়াছি।” “উলইচে কি আজ কোনও সভা আছে না কি ?” “আছে বৈ কি।” “কোথায়, মিঃ –?” “কারমেল চ্যাপেলে ।” ইতিমধ্যে লিফট, নামিয়া আদিয়া যথাস্থানে থামিয়া গেল। দুজনেই তখন ট্রেণের দিকে যাইতে লাগিলাম। আমার রক্ষক তখন বলিল “মিঃ —, আপনার অনুমতি যদি পাই তবে আজকের দিনটা আমি আমার ছেলে পিলেদের সঙ্গে যাইয়া কাটাই—আমি আর আপনার সঙ্গে যাব না।” “আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নাই।” “আপনি কখন ফিরিয়া আসিবেন ?” “ জানি না তো! উলুইছ্ হতে আমি সন্ধার পূর্বেই ফিরিব—কিন্তু আজ রবিবার, তোমাদের সভ্যতায় রবিবারে সন্ধ্যার পর মদের দোকানে মদ মিলে কিন্তু ভদ্র লোকের বাড়ীতে তো খাওয়া মিলে না, কাজেই আমায় বাহিরে খাইয়া আসিঙে হইবে । নয়টা সাড়ে নয়টার আগে যে ফিরিতে পারিব, এমন মনে হয় না।” “আজ বঙ্গদর্শন, [ ১২শ বর্ষ, চৈত্র, ১৩১৯ কি বিষয় বক্তৃতা করবেন?” আমি বিষয়ট বলিয়া দিলাম। সেও সেট আপনার পকেট বইএ নোট করিয়া লইল এবং আর একবায় আমার অনুমতি লইয়া, সেলাম করিয়া ফিরিয়া চলিল। সেদিন আমার সঙ্গে আর কেউ ছিল না। রাত্রে বাড়ী ফিরিয়া আমি কাপড় চোপড় ছাড়িবার আয়োজন করিতেছি—তখন প্রায় সাড়ে দশটা—এমন সময় পরিচারিক আসিয়া বলিল—“একটী ভদ্রলোক আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছেন।” “এই রাত্রে ভদ্রলোক কে ? ইনি কি আমার স্বদেশী ?” “না একজন ইংরেজ ভদ্রলোক ” “আচ্ছ, নিয়ে এস।” তখন দেখি ঐ আর কেউ নয়— আমার শরীররক্ষক। এত রাত্রে আমায় বিমুক্ত করিতে আসিয়াছে বলিয়া অতিশয় দীনতা সহকারে ক্ষমা প্রার্থনা করিয়া, আমি বক্তৃততে কিকি বলিয়াছি সেখানে কত লোক ছিল, ভারতবাসী লোক কেহ ছিল কি না,—এসকল কথা নোট করিয়া লই৷ গেল। আমি বুঝিলাম—আজকের রিপোর্ট খান আমাকেই লিখিা দিতে হইল। এও মদ নাই। বিলাতের টিক্টিকীই এরূপ করে। এদেশের টিক্টিকী হইলে আপনার মনগড়া একটা ভয়ঙ্কর বক্তৃতা সাজাইয়া রিপোর্ট করিত না কি ? ** ঐবিপিনচন্দ্র পাল।
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৭৬১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।