qやや না, পরবর্তী বৈষ্ণব কবির তো সন্ত্রমের ভাবটা একেবারেই ফেলিয়া দিয়াছিলেন, তাহ বেশ বুঝা যায়। এই অপূৰ্ব্ব উপায়ে জয়দেব শ্ৰীকৃষ্ণরাধিকার মানভঞ্জন করিয়াছেন। মনের মান “মানে,” তাই বৈষ্ণব কবির কাছে মানের এত আদর বস্তুতঃ ইহা মানিতেই হইবে যে কোনওঁ"বহুবল্লভ” নায়কের পক্ষে একই নায়িকার কাছে এত হীনতা স্বীকার করিবার একমাত্র প্রয়োজন প্রাণের অনিবাৰ্য্য ও প্রবল আকর্ষণ ; এমন আকর্ষণ যে তাহার কাছে নিজের মান-মৰ্য্যাদ, গুণগরিম সকলই ভাসিয়া যায়। আপাততঃ আমাদের এই টুকুতেই প্রয়োজন। তাহার পর এত আকাঙ্ক্ষার এত সাধাসাধির, এত যত্নে “মানভঞ্জনের” যাহা অবখ্যম্ভাবী পরিণতি ; এবং যে তালবাসা কেবল ভাবমাত্রে পরিণত হয় নাই তাহার যাহা মুখময় ফল কবি জয়দেব তাঁহাই বর্ণনা করিয়াছেন। তখনকার কবিরা এ সব বর্ণনায় দোষ দেখিতেন না, এখনকার কবির দেখেন, তাই তাহাদের অনেক সময় আভাসে স্বত্রাকারে এই সত্য প্রকাশ করিতে হয়। যাহাঁদের ভাল লাগে না তাহারা স্বচ্ছন্দে এই গুলি বাদ দিয়া যাইতে পারেন, গ্রন্থ উপভোগের কোনও বাধা হইবে না। তবে না বুঝিয়া, মৰ্ম্মগ্রহণ না করিয়া অন্তঃপ্রবিষ্ট না হইয়া, কেবল অশ্লীলতার ধুয়ার খাতিরে, মহাকবি জয়দেব বা বিদ্যাপতিকে গলাগলি না করিলেই সাহিতোর পক্ষে ও নিজেদের পক্ষেও ভাল হয়। যে সকল কথা আমরা অশ্লীল বলিয়া পরিত্যাগ করি সেই গুলিই বৈষ্ণব अश्वानरू ভক্তির পরিপোষক বলিয়া অাদরের বঙ্গদর্শন ১২শ বর্য, চৈত্র, ১৩১৯ সহিত অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করিয়াছেন, ইহা হইতেই তাহদের গৃঢ়রহন্ত অনেক পরিমাণে জানা যায়। গীতগোবিনের শেষে সম্ভোগান্তে ধিবেশ, প্রস্তকুন্তলা স্ত্রীরাধা দেহসজ্জার জষ্ট গ্রকৃষ্ণকে অনুরোধ করিয়াছেন । সমগ্র গীতগোবিলে,যে একটা কৃষ্ণলালসার ভরা স্বর বাজিয়া উঠিয়াছে, ইহা সেই স্বরের স্বমধুর সমাপ্তি। “তোমার দেহ তুমি সাজাইয়া লও, আমি তোমার জন্য সব ছাড়িয়ছি” শেষ যে ছিল লজ্জাটুকু তাছাও তোমার মুখের জন্ত ধুইয়া ফেলিয়াছি, তোমার জন্তই এই দেহ, তোমার জন্তই এই ইঞ্জিয়গুলা, তুমি ইহাদের সাজাইবে তবে তাহারা সাজিবে, তুমি ইহাদের যেমন রাখিবে তেমনি থাকিবে, কিন্তু হে আমার হৃদয়সৰ্ব্বস্ব, আমি কেমন করিয়া অনলঙ্কত দেহে, ভূষণবিহীন ইঞ্জিয় লইয় তোমার সেবায় নিয়োজিত হইব ? তাই আমার দেহে বল দাও, অঙ্গে অঙ্গে ভূষণ দাও আমার আকুল কবরী সংযত করিয়া দাও, তোমার নৈবেদ্য তুমিই গুছাইয়া লও, যদি এ দেহে তোমার আবার প্রয়োজন থাকে, তবে ইহাকে নিজে সাজাইয়া লও, তোমার মনোমত করিয়া লও, তোমার প্রেমের ভূমিকে শক্তিশালিনী করিয়া লও ; শ্রীরাধার ইহাই মুখ, ইহাই আবদার, ইহাই সুম্পুর্ণ আত্মসমপণ । যাহারা ভক্তির রহস্ত অবগত হইয়াছেন তাহারা জানেন যে ভক্তের ইহাই কামনা, ইহাতেই তাহার মুথ। তাই কবি জয়দেব গীতগোবিন্দের প্রথমেই জোর বরিয়া বলিয়াছেন— “যদি হরি স্মরণে কুতুকং মনঃ– শৃণু তদা জয়দেব সরস্বতীম্।”
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৭৭১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।