পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৭৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘이o কাৰ্য্যকারণ সম্বন্ধের প্রতিষ্ঠা করা যাইবে কি ? আর কার্য ও কারণের মধ্যে সেইরূপ কোন একটা কিছু সমভাবে এখানে বিদ্যমান নাই বলিয়াই, এক্ষেত্রে এ সম্বন্ধের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হইবে না। অতএব ব্রহ্মের সঙ্গে ব্রহ্মাণ্ডের কাৰ্য্যকারণ সত্বন্ধের প্রতিষ্ঠা করিতে গেলে উভয়ের মধ্যে-এমন একটা কিছু প্রতিষ্ঠা করা আবগুক, ঘাহা স্বষ্টির পূৰ্ব্বেও ব্রহ্মেতে ছিল, স্বষ্টির পরেও ব্রহ্মেতে একদিকে ও ব্রহ্মাণ্ডেতে অদ্যদিকে নিয়ত বিদ্যমান রহিয়াছে। এই বস্তুই দেশখ গলের চিত্রপটে ব্রহ্মাগুরুপে প্রকট হইতেছে । এই বস্তুর প্রতিষ্ঠা না করিলে ব্রহ্মের সঙ্গে ব্ৰহ্মাণ্ডের কোনও যোগ-স্থাপন সস্তবে না । অতি প্রাচীনকাল হইতেই বিশ্বসমস্তার ভেদ করিতে যাইয়া, বিভিন্ন দেশের ঋষি ও মনীষিগণ এই অপরিহার্য্য সিদ্ধান্তকে লক্ষ্য করিয়া আসিয়াছেন । এই বস্তুকেই আমাদের বৈদাস্তিকের মায়া, বৈষ্ণনের প্রকৃতি শাক্তেরা শক্তি ইহুদীরা সোফিয়া, গ্রীকেরা, হগস, খ্ৰীষ্টীয়ানেরা খ্ৰীষ্ট নাম দিয়াছেন। এই বস্তুই জগদ্বীজ। এই বস্তু পরিপূর্ণ আকারে ব্রহ্মচৈতন্তে—তাহা হইতে ভিন্ন হইয়াও নহে, অভিন্ন হইয়াও নহে—অনাদিকাল হইতে বাস করিতেছে। চিত্রকরের অস্তরে প্রথমে যেরূপ একটা ছবি জাগিয়া উঠে ও তার ধ্যানে পরিপুর্ণতা প্রাপ্ত হয়, আর তিনি এই মানসচিত্র বঙ্গদর্শন { ১২শ বৰ্ষ, চৈত্র, ১৩১৯ কেই পরে ধীরে ধীরে চিত্রফলকে ফুটাইয়া তুলিয়ালোকচক্ষুর গোচর করিয়া থাকেন, সেই রূপ এই বিশ্বের একটা পরিপূর্ণ প্রতিকৃতি বিশ্বপতিও বিশকৰ্ত্তার চিদাকাশে অনাদিকাল হইতে ফুটিয়া রহিয়াছে, এই প্রতিকৃতিরই অনুকৃতি এই বিশাল ব্রহ্মাণ্ডে । সেই তুরীয় চৈতন্তে মিতাধুত আদশই এই বিশ্বের বিবর্তনে তিলে তিলে প্রকট হইয়া উঠিতেছে ; সেইখানেই এই সকল অনিত্য বস্তুর নিত্য সার্থকতা । সেইখানেই এই সদসদাত্মক জগতের নিত্য সত্যের প্রতিষ্ঠা। সেই অভিধানেই বিশ্বের সকল শব্দের সত্য অর্থ লিখিত রহিয়াছে। সত্যের কষ্টিপাথর ঐখানে ; ধৰ্ম্মের উৎপত্তি ঐখানে ; সৌন্দর্যোর ওজন ঐখানে । অমৃতত্বের পরীক্ষা ঐ খানে। আর বগচৈতন্তধৃত এই যে বিশ্বছবি তাহাই সত্যবেদ । তাহাই স্ফোটাত্মক শব্দু— যাহাকে আশ্রয় করিয়া বিশ্বের স্বষ্টিস্থিতি ও প্ৰলয় হুইতেছে। এই স্ফোটাত্মক বেদ ধারণ করিয” আছেন বলিয়াই ব্ৰহ্ম শাস্ত্রযোনি হইয়াছেন। এখানেই, এই তত্ত্বের মধ্যেই তার শাস্ত্রনযোত্বের অর্থ ও প্রামাণ্য অন্বেষণ করিতে হইবে। নতুবা তিনি যে মানবের মত আপনার মুখ দিয়া ধ্বস্তার্থক শব্দযোজন করিয়া ধ্বস্তাত্মকশব্দ সম্বলিত ঋগ্বেদাদির সাক্ষাৎ প্রচার করিয়া শাস্ত্রযোনি নাম প্রাপ্ত হইয়াছেন, ইহা কৰিকল্পনা হইতে পারে, কিন্তু তত্ত্বকথা নহ । শ্ৰীবিপিনচন্দ্র পাল ।