২য় সংখ্যা] জানার্জনের শক্তি লাভ করে। ইঞ্জিয়সন্নিকর্ষজনিত জ্ঞান হইতে সে যেরূপ বহিজগতের সন্ধান পায়, স্মরণ, মনন ও মুখাদির উপলব্ধি হইতে সে তেমনই পাপনার মনকে জানিতে পায় ; এবং বাহ ও আন্তর বিষয়ের মধ্য দিয়া মানবাত্মার স্বরূপ ক্রমশঃ বুঝিতে পারে। এইরূপে আত্মজ্ঞান লাভ করাই মানবের জ্ঞানের চরম লক্ষ্য। সুতরাং মানবের শিক্ষা-দীক্ষা সমস্তই আত্মাকে কেন্দ্র করিয়া আবর্ধিত হইতেছে। সেই জন্যই মানব ইতিহাস ও পুরাণে, কাব্য ও দর্শনে, ধৰ্ম্ম ও বিজ্ঞানে —প্রকৃতপক্ষে আপনাকেই খুজিয়া বেড়ায় । সে যেমন তাহার নিজের সুখ ও স্বাচ্ছন্দোর জন্য বিশ্বের সমস্ত পদার্থকে নিয়োজিত করিতে প্রয়াসী হয়, তেমনি লৌকিক ও অলৌকিক চরিত্রের মধ্য দিয়া, জ্ঞানের নিগুঢ়তম সমস্তার দ্বার দিয়া, ছন্দের সঙ্গীতে, আত্মার সহিত পরমাত্মার নিবিড়তম সম্বন্ধে, পদার্থ ও পরমাণুর স্বহ্মাদপি সূক্ষ্ম পরিচয়ে মানবের আত্মা আপনার পরিস্ফুটতর প্রতিবিম্ব দেখিয়া সার্থক হয়। এ সার্থকতা প্রয়োজন-বিশেষের অপেক্ষ করে না, ইহাতে সকল সময়ে প্রতিদ্বন্দিতার জীল৷ থাকে ন—এ সার্থকতা মানুষের মৌলিকপ্রকৃতিগত আকাঙ্ক্ষা ও কামনার সার্থকতা। তুমি যখন অর্থের জন্য ਬੋੜ কুবের ভাণ্ডার বলিয়া গণনা করিয়া তাহা জয় করিতে চলিয়াছ, অথবা যশের জন্য নানাবিধ পণ্যে তোমার তরণীখানি সাঞ্জাইয়া লইয়। পৃথিবীর হাটে বাণিক্য করিতে চলিয়াছ, অথবা , বিলাসের লালসায় প্রকৃতির শিক্ষা ও আত্মপ্রতিষ্ঠা ৭৯ প্রমোদোদ্ধানের প্রতি পুষ্পের সৌরভ লুটিয়া বেড়াইবার কল্পনা করিতেছ—তখন তুমি তোমার বৃহত্তর, পূর্ণতর, মুন্দরতর আত্মার সন্ধানে ফিরিতেছ ! তোমার সমস্ত চেষ্টা, সমস্ত সাধন, সমস্ত ক্রিয়া কলাপের পশ্চাতে তোমার আত্মা আপনাকে প্রকাশ করিতেছে। তুমি শতাশ্বমেধ যজ্ঞ করিয়া ইন্দ্রতই কামনা কর, আর তত্ত্বজ্ঞান লাভ করিয়া নিঃশ্রেয়স বা মোক্ষের অধিকারীই হইতে চাহ, এ সমস্তই তুমি তোমার নিজের তুষ্টি, তৃপ্তি বা পরিণামের জন্য করিতেছ, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। আত্মাই সমস্ত মননশক্তি ও ক্রিয়াশক্তির উৎস। নিজের ছায়াকে উল্লঙ্ঘন করিয়। যেমন যাওয়া যায় না, আত্মার বৃত্ত ছাড়িয়। তেমনই অন্যদিকে যাওয়াও অসম্ভব। আমরা যে শুধু चमांश्ान्न शक्षा দিয়া আত্মার সন্ধান পাই তাহা নহে, আমাদের সমস্ত প্রবৃত্তিগুলিও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আত্মাভিমুখী। জ্ঞানের দিক দিয়—ধৰ্ম্মের দিক দিয়া—অধৰ্ম্মের দিক দিয়৫—যে দিক দিয়াই-দেখি, আত্মা সকলের মধ্যস্থলে বর্তমান রহিয়াছে। আত্মাপেক্ষা জগতে প্রিয়বস্তু আর কিছুই নাই, উপনিষৎকার সত্যই বলিয়াছেন– ' ন বা অরে সর্বসা কমিীয় সৰ্ব্বং প্রিয়ং ভবতি কিম্বায়ন কামায় সৰ্ব্বং প্ৰিয়ং ভবতি। —বৃহদারণ্যক । অতি হেয় স্বার্থ হইতে পরমোপাদেয় পরার্থ পৰ্য্যন্ত সকল বিষয়েই আত্মার প্রতিষ্ঠা দেখিতে পাওয়া যায়। আমি অবশু এরূপ বলিতেছি না যে, লোকে আত্মাস্ত্র
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৮৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।