bre বঙ্গদর্শন সুখ বা সুবিধার জন্য পরার্থের অনুসন্ধান করে, নিজের প্রয়োজন উদ্ধার করিবার জন্য প্রতিবেশীদিগের উপকার করে, এমন কি, মাতৃস্তন্যের উপকারিতা ও মূল্য স্মরণ করিয়া মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ বা স্নেহপরবশ হয়! কোনও কোনও নীতিতত্ত্ববিৎ এরূপ সিদ্ধান্তেও উপনীত হইয়াছেন! কিন্তু আমি বলিতেছিলাম যে, মাধবের যাবতীয় ক্রিয়াকলাপ তাহার আত্মার মুদ্রান্ধিত! যে স্বার্থসম্পর্কশূন্য পরহিতরতে আপনাকে সম্পূর্ণরূপে বলি প্রদান করিয়া সময়ে সময়ে মানবজগতের ইতিহাসের শুষ্ক কঠিন উষরে স্নিগ্ধপূত মন্দাকিনীধারী বহাইয়া দেয়, সে পরহিতের মধ্যেও আত্মা আপনার শান্ত পবিত্র নিষ্কল সম্পূর্ণ মূৰ্ত্তি দেখিয়া ধন্য হয়। ইহাই আত্মপ্রতিষ্ঠ। এই যে সৰ্ব্বব্যাপী আত্মধৰ্ম্ম জীবজগতের প্রাথমিক স্তর হইতে ধীরে ধীরে উচ্চাদপি উচ্চ স্তরে আত্ম বিকাশ করিতেছে, ইহাকে সাহায্য করাই মানবীয় শিক্ষার উদেশ্ব ও লক্ষ্য । মানব ইহার যে স্তর যে সময়ে অধিকার করিয়া থাকে, সে সময়ে তাহার শিক্ষাপ্রণালী ও সাধনা তাহার অনুগামী হয় . আত্মপ্রতিষ্ঠা শিক্ষার সাধারণ লক্ষ্য হইলেও স্তরের পার্থক্য অনুসারে শিক্ষার আদর্শসম্বন্ধে অনেক বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। টাইবরের তীরে অবিনশ্বর নগরী যখন জগজ্জরের স্বপ্ন দেখিতেছিল, জগতের শিক্ষয়িত্রীস্বরূপিণী গ্রীস যখন পরকীয় শাসনচ্ছায়ে নিভৃতে জ্ঞান ও শিল্পের আদর্শ গড়িতেছিল, লাও বাণিজ্যের জাল বিস্তার করিয়৷ ” যখন [ ১২শ বর্ষ, জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৯ জগৎকে স্বায়ুর ন্যায় বেষ্টন করিবার কল্পনা করিতেছিল, ভারত যখন স্তিমিত-নয়নে অরণ্যে বসিয়া পুনজর্জ ও কুৰ্ম্মফলের অনন্ত শৃঙ্খল রচনা করিতেছিল, তখন এই সকল দেশের লোকের বিভিন্ন উপায়ে আত্মপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করিয়াছিল। এবং সেই জন্য ইহাদের শিক্ষাপ্রণালীও স্বতন্ত্র হইয়া দাড়াইয়াছিল। বর্তমান যুগে প্রশান্ত মহাসাগরের প্রশান্ত নির্জনতার মধ্যে ক্ষুদ্র একটি দ্বীপ বর্তমান রাষ্ট্রনৈতিক আদর্শকে ধীরে ধীরে গড়িয়া তুলিতেছিল। সুযোগ পাইয়া সে লেই আদর্শের মধ্য দিয়াই আত্ম প্রকাশ করিয়াছে। তাহার শিক্ষা, সঙ্কল্প, আকাজ। সমস্তই সেই তীব্র আত্মপ্রকাশের সাধনস্বরূপ হইয়াছে। যে সুবুপ্ত অহিফেনমুগ্ধ বেণীবদ্ধ চীন এতদিন আপনাকে ভুলিয়াছিল, সে-ও হঠাৎ তাহার অহিলাঞ্ছি , বেণীর সহিত অহিফেন চীন4 সমুদ্রে বিসর্জন দিয়া জাগ্রত হইয়াছে ; তাহারও আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য চঞ্চলত দেখা দিয়াছে। বর্তমান চীনের শিক্ষপ্ৰণালী এই নুতন আদর্শের ছায়ায় গঠিত হইবে । চীনের আদর্শ ভারতের আদর্শ হইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন হইতে পারে। যতদিন আদর্শের পার্থক্য থাকিবে, ততদিন শিক্ষও বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করিতে বাধ্য। এইরূপে অমিয়া দেশভেদে ও জাতিভেদে শিক্ষার তারতম্য বুঝিতে পারি। একই কেন্দ্রস্থল হইতে উৎপন্ন হইয়াও প্রকৃতি ও আদর্শানুসারে রেখাগুলি পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়ে। - হার্কটি স্পেন্সার তাহার “শিক্ষা” নামক
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৮৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।