ԵՀ যে সৰ্ব্বত্র শুভদায়ক হইয়াছে, তাহা বলা যায় না। কিন্তু ইহার গতি আলোচনা করিলে বস্তুতঃ আমরা শিক্ষণপ্রণালীর সম্বন্ধে একটি অব্যভিচরিত সত্যের সন্ধান পাই— তাহা এই যে শিক্ষায় উদ্দেশু ব্যক্তিগত এবং জাতিগত আত্মবিকাশ। এই আত্মবিকাশের ইতিহাসই মানবজীবনের গৃঢ়তম ইতিহাস । আত্মার ধারণ অবশ্য বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আকার ধারণ করিয়াছে। কারণ এই ধারণ আবার অতীত শিক্ষা, প্রকৃতি ও পারিপাশ্বিক অবস্থার উপর নির্ভর করিয়াছে। বর্তমান যুগে ইউরোপুে এই আত্মপ্রতিষ্ঠা তাহার স্বাভাবিক কৰ্ম্মপ্রিয় জীবনে এক তুমুল ঝঞ্জ তুলিয়াছে। তাহার জালাময় কৰ্ম্মলালসায় ঘৃতাহুতি প্রদান করিয়াছে। মধ্যযুগে লোকে যখন প্রাচীন আদর্শ লইয়া সন্তুষ্ট ছিল, গতাকুগতিকের ন্যায় ভজন-সাধনকে অবিচারিত তাবে গ্রহণ করিয়াছিল, তখন সে এক শান্তি ছিল ! কিন্তু ভায় পরেই যে জাগরণ সুপ্তির শাস্ত অলসতা ভাঙ্গিয় দিল, সে জাগরণ এখনও পাশ্চাত্য জগতে তুমুল কোলাহলের স্বষ্টি করিতেছে। লোকের জ্ঞানচক্ষু উল্মীলিত হইয়ু ধৰ্ম্মজীবনে যে চঞ্চল আত্মপ্রকাশ দেখা দিল, তাহা আবার রাষ্ট্ৰীয়নীতি, সমাজসংস্কার প্রভৃতি বিষয়ে অদ্ভুত শক্তির সহিত ক্রিয়া করিতে লাগিল। চিন্তা ও বাক্যে স্বাধীনতার জন্য পাশ্চাত্য জগতে দুৰ্দ্ধমনীয় আশঙ্কা লোকের মনে জাগিয়া উঠিল, এবং সেই স্বাধীনতা-প্রয়াসের ফলে কত রাজ্য ধ্বংসমুখে প্রস্থিত হইল, কত নূতন রাজ্য গড়িয়া উঠিল, কত পুরাতন शृछप्नअिन ১২শ বৰ্ষ, জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৯ ধৰ্ম্মমত যে বন্যায় ভাসিয়া গেল, নূতন ধৰ্ম্মমতের সৃষ্টি হইল, তর্কশাস্ত্রের জীর্ণ শুষ্ক কঙ্কাল পরিত্যক্ত হইল, তারার স্থলে সরস সজীব বিজ্ঞানের বীজ রোপিত হইল । লোকশিক্ষার ফলে আত্মপ্রতিষ্ঠা জন্ম গ্রহণ করিয়া রাজতন্ত্রের স্থলে প্রজাতন্ত্র অনিয়ন করিতেছে। নিরাকার ঈশ্বরের উপাসনার স্থলে সাকার প্রত্যক্ষীভূত জনব্যুহের উপাসনার অনুমোদন করিতেছে ; এবং দর্শনশাস্ত্রের জটিল কঠিন নিষ্ফল তর্ককে নিৰ্ব্বাসিত করিয়া তাহার স্থলে প্রত্যক্ষ ফলপ্রদ যন্ত্র ও নল প্রতিষ্ঠিত করিতেছে। এই আত্মপ্রতিষ্ঠার ফলে গৃহপিঞ্জরকোকিলগণ শত শত শতাব্দীর জড়তা পরিহার পূর্বক রাজনীতি-ক্ষেত্রে তাহদের অধমাঙ্গের সহিত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অগ্রসর হইয়াছেন এবং জিউজিউৎসুর সাহায্যে কোমলাঙ্গীগণ বৰ্ম্মচৰ্ম্মপরিহিত বেচারী পাহারাওয়ালাকে পর্য্যন্ত, ধরাশায়ী করিতেছেন, এরূপ শুনিয়াছি । বস্তুতঃ তাহদের ঘোড়ার সইস পর্য্যন্ত যে অধিকার লাভ করিয়াছে, তাহারাই বা সে অধিকার হইতে কেন বঞ্চিত থাকিবেন ? আত্মপ্রতিষ্ঠা ধীরে ধীরে জাগ্রত হইয়। তাহাদিগকে গৃহের অভ্যন্তর হইতে টানিয়া আনিয়া সমাজের উন্মুক্ত ক্ষেত্রে উপস্থিত করিয়াছে। ইহাতে ভাল হইয়াছে কি মন্দ হইয়াছে, এ বিষয়ে মতভেদ থাকিতে পারে। কিন্তু এই যে সচেতন, প্রবুদ্ধ আত্মপ্রতিষ্ঠা রমণীগণের মধ্যে একটা উন্নতির কাজ জাগাইয়া তুলিয়াছে তাহা হইতে অশেষ কল্যাণের জন্ম হইতেছে
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৮৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।