পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা] আনিয়া তাহার নিকট উপস্থিত করিয়াছেন। আর ভক্তি ও মহাপ্রীতির পাত্র জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার অতুলনীয় গৃহিণীর সহিত হৃদয়বন্ধনে আবদ্ধ করায় কমলের প্রীতি-প্রকৃতির গম্ভীর্য্যের ভাগ প্রদর্শিত হইয়াছে। স্বৰ্য্যমুখীর আত্মবিসর্জনের সংবাদে কমল সতীশকেও একদিন ভুলিয়াছিলেন, তাহার গৃহত্যাগে কুন্দের প্রতি তাহার স্বভাবপ্রক্রত হৃদয়ও একদিন প্রতিনিবৃত্ত হইয়াছিল। কমলমণি অষ্টাদশবর্ষীয়া কুলরমণী, এ বয়সে হিন্দুপরিবারে তাহার স্বামীকুলে গুরুজন কেহ না থাকা তত সম্ভবপর নহে। তাই, বোধ হয়, কবি কমলের শ্বশ্রীর উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু কমলের প্রকৃতিপ্রস্ফুরণ জন্য র্তাহার স্বাধীনতার প্রয়োজন, স্বামীসন্তাষণে র্তাহার কোনরূপ বাধা • থাকা সঙ্গত নহে, কবি তাই কৌশলে কমলের শ্বশ্রীকে কমলের স্বামী শ্ৰীশচন্দ্রের পৈতৃক বাসস্থানে রাখিয়া দিয়াছেন। কলিকাতার বাড়ীতে কমলই গৃহিণী, সুতরাং উপস্থিত যে কোন কাজ গৃহের স্ত্রীলোকের উপর ন্যস্তভার হইবার প্রয়োজন হইত, তাহ কমলের উপরেই পড়িত ; তাহা দ্বারা কবি কমলের প্রকৃতি লোকের দৃষ্টগোচর হইবার কারণ বা উপায়ের সংস্থান করিয়া রাখিয়াছেন। নগেন্দ্রনাথ বালিকা, দরিদ্র, মলিন, অযত্নলালিত কুন্দকে আনিয়া কমলের হাতে ফেলিয়া দিলেন, কমল তাহাকে স্বহস্তে ধৌত, স্বাত, সুবাসিত, বস্ত্ৰালঙ্কারভূষিত করিয়া, তাহার পরিশ্রম লাঘবের আশায় ঐ সকল কমলমণি br" কাৰ্য্য করিতে উদ্যত দাসীর গায়ে তপ্তজল ছিটাইয়। দিয়া, আপনার চিরপ্রেমময় স্বভাবের প্রথম পরিচয় প্রদান করিলেন। অন্যাকে স্বামীর হৃদয়ভাগিনী জানিয়া মৰ্ম্মপীড়ায় সূৰ্য্যমুখী কমলকে একবার আসিতে আহবান করিলেন, কমল সে আহবানে গোবিন্দপুরে আসিলে দত্তদিগের বাটতে যেন অন্ধকারে একটি ফুল ফুটিল, স্বৰ্য্যমুখীর চোখের জল শুকাইল। আবার স্বৰ্য্যমুখীর গৃহত্যাগ এবং তজ্জনিত নগেন্দ্রের দেশত্যাগের পর, বিজন দত্তগুহে, কুন্দনন্দিনী দুঃখকাতর হৃদয়ে সময়াতিপাত করিতেছেন। নগেন্দ্রনাথের প্রত্যাগমনের সঙ্গে কমল তথায় পুনরাগমন করিলে, কুন্দনন্দিনীর বোধ হইল আবার আকাশে একটি তারা উঠিয়াছে। প্রকৃতই কমল যেখানে যাইতেন সেইখানেই আলোক বিস্তার করিতেন,আলোকময়ীর উপস্থিতিতে লোকের দুঃখ প্রশমিত হইত, বিষাদের স্থানে প্রফুল্লতা আসিয়া দুঃখান্ধকার বিদূরিত করিত। চুলের গোছ লইয়া বস কমলের একটি রোগ ছিল। স্বৰ্য্যমুখীর দুঃখে সমবেদনাও এই রোগের পথে প্রকাশ লাভ করিত, কুন্দনন্দিনীর সহিত সহানুভূতির ইহা উপায়স্বরূপ হইত। হিন্দুরমণীগণমধ্যে প্রতিপ্রবণতার এ লক্ষণ সৰ্ব্বদাই লক্ষিত হইয়া থাকে। একই সময়ে সূৰ্য্যমুখী ও কুন্দনন্দিনীর সহিত সমভাবে সহানুভূতি দ্বারা কবি কৌশলে কমলের চিরপ্রেমিকতার, তাহার প্রতিবৃত্তির সাৰ্ব্বজনীনতার প্রকৃষ্ট প্রমাণ সংগ্ৰহ করিয়াছেন। ভালবাসা কাহাকে বলে, সোণার