b^ケ কমল তাহ জানিতেন, তাই তিনি সুর্য্যমুখীর মৰ্ম্মপীড়ায় ব্যথিত হইয়াও, কুন্দনন্দিনীর দুঃখে দুঃখী, সুখে সুখী না হইয়া থাকিতে পারেন নাই । কমল কাহাকেও তিরস্কার করিলেও, তাহার ভিতর দিয়া তাহার মধুর প্রকৃতি প্রকাশ পাইত। “বৈষ্ণবী দিদি—তোমার মুখে ছাই পড়ুক—আর তুমি মর। আর কি গান জান না ?” এ তিরস্কারে রূক্ষতা কোথায় ? আবার “রসে। আমি একটা বাবলার ডাল আনি । মিন্সেকে কাটা ফোটার সুখটো দেখাই।” এবং এই প্রসঙ্গে হারাকে সম্বোধন করিয়া, “আর পারিস ত মাগীকে দুট বাবলার কাট ফুটিয়ে দিয়া আসি।", অমৃতময়ীর রাগেও যেন অমৃতক্ষরণ হয়। এই স্থলে, অন্ত দিকে, কবির কৌশল দেখুন। রূক্ষতার ভাবেও "মধুর প্রকৃতির বিকাশের জন্য হরিদাসী বৈষ্ণবীকে র্কাট। ফোটাইবার চেষ্টায় যেমন কমলকে প্রবৃত্ত করিয়াছেন, তেমনই আবার ভদ্রমহিলার শীলতা রক্ষার জন্য কবি পথের মাঝে অনিয়া সতীশচন্দ্রকে বসাইয়াছেন। তাহাতে শীগত ও রক্ষা হইরাছে, স্নেহময়ীর স্নেহপ্রকৃতিও বিকাশ লাভ করিয়াছে। স্বৰ্য্যমুখীর প্রতি কমলের ভালবাসার গাঢ়তা কবি কয়েকটি ঘটনা দ্বার। অতি সুন্দর রূপে প্রকটিত করিয়াছেন। কুন্দের প্রতি স্বামীর আসক্তি জানিয়। সূৰ্য্যমুখী যখন অতি দুঃখে লিখিলেন “একবার এসে ! কমলমণি ! ভগিনি ! তুমি বই আর আমার সুহৃদ কেহ নাই। একবার এসো !" পড়িয় কমলমণির আসন টলিল, আয় তিনি স্থির বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ষ, জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৯ থাকিতে পারলেন না। কুমলমণি রমণীরত্ব, অমনি স্বামীর সঙ্গে গোবিন্দপুর যাওয়ার পরামর্শ করিতে গেলেন। আবার কমলের স্বামীপুত্ৰ লইয়া আমোদের মধ্যে কুন্দের সহিত নগেন্দ্রনাথের বিবাহের সংবাদ পেছিল, কমল গোবিন্দপুর যাইবার জন্য অতিব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। গোবিন্দপুর উপস্থিত হইয়া, সূৰ্য্যমুখীর সম্বন্ধে অতি আশঙ্কান্বিত অন্তরে পুর প্রবেশ করিলেন, প্রাণাধিক সতীশচন্দ্র ও সে ব্যস্ততার মধ্যে পশ্চাৎ পড়িয়া রহিল। এইরূপ, যে দিন নগেন্দ্রনাথ স্থৰ্যমুখীর মৃত্যুসংবাদ লইয়৷ কলিকাতায় কমলের বাড়ী উপস্থিত হইয়াছিলেন, কমল সতীশচন্দ্রকে এক ফেলিয়া সে রাত্রির মত অদৃগু হইয়াছিলেন। অন্য ভাবে, সূৰ্য্যমুখীর গৃহত্যাগে, কুন্দের প্রতি কমলের রাগ, সহানুভূতির আশয়ে নিকটাগত কুন্দকে দেখিয়া তাহার অপ্রসন্নতা, স্বৰ্য্যমুখীর প্রতি র্তাহার সেই প্রণয়গম্ভীৰ্য্যমূলক। তাহার পর, স্বৰ্য্যমুখী গৃহে প্রত্যাগত হইয়া, তাহার মৃত্যুসংবাদ অপ্রমাণিত করিলে কমল যখন কান্না ও হাসির মধ্যে শাখ বাজাইয়া নৃত্য করিতে লাগিলেন, তখন কেবল যে র্তাহার ভ্রাতুপত্নীর প্রতি প্রণয়াতিশয্য চরম বিকাশ লাভ করিল, তাহ নহে, তাহার সরল আনন্দময় প্রকৃতিরও অতি প্রদীপ্ত প্রমাণ প্রদর্শিত হইল। এই প্রসঙ্গেই বলিতে ইচ্ছা হইতেছে, কুন্দের মৃত্যুশয্যাপার্শ্বে কমলমণি ও স্বৰ্য্যমুখীর উচ্চৈঃস্বরে বুেদিন এই রমণীদ্বয়ের হৃদয়রত্বের কম উজ্জ্বলতা সম্পাদন করে নাই। কমলমণি কাহাকে না ভালবাসিতেন !
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৯৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।