২য় সংখ্যা] সে দেশের জনগণমধ্যে অমিতাচার যে আকারে কিছুদিন পূৰ্ব্বে বাড়িয়া উঠিয়াছিল, তাহাতে সকল সময়ে কেবল পিতামাতার সহজ স্নেহমমতার উপরেই সন্তানসন্ততিদের শিক্ষাদীক্ষার ভার ফেলিয়া রাখা হয় ত সঙ্গত হইত না। সে অবস্থায় গরিব গৃহস্থের ছেলেমেয়েরা অনেক সময় হয় ত অল্পবয়সে রাজপথকে আশ্রয় করিয়াই দিন কটাইত, এবং তাহার ফলে,বয়োবৃপ্তিসহকারে শুণ্ডিকালয়কেই আশ্রয় করিয়া জীবনক্ষয় করিত । বিশেবতঃ সে দেশে জীবন-সংগ্রামের তীব্রত। ক্রমে এতটাই বাড়িয়া পড়িতেছিল যে,অনেক সময় মিতাচারী পিতামাতার পক্ষে ও অাপন আপন জীবিকা-উপার্জনের চেষ্টায় বিব্রত থাকিয়া, তার উপরে আবার ছোট ছোট শিশুদিগের যথাযোগ্য তত্ত্বাবধান ও রক্ষণবেক্ষণ করা অসাধ্য হইয়া উঠিতেছিল। বিলাতের গরিব লোকেরাই খাটয়৷ খায়, আর আমাদের গরিব লোকেরা বিনা খাটুনিতেই অন্নবস্ত্রের সংস্থান করিতে পারে, তাহা নয়। আমাদের গরিবদিগকেও খুবই খাটিতে হয়। তবে আমাদের খাটুনির ক্ষেত্র ও ধরণ, বিলাতের গরিব লোকদিগের খাটুনীর ক্ষেত্র ও ধরণধারণ হইতে স্বতন্ত্র। বিলাতে গরিব লোকদিগকে কলের বা খনির মঞ্জুরী করিতে হয়। প্রত্যুষে ৬-টা কি ৭টা হইতে ১২টা কি ১২॥•টা পৰ্য্যন্ত, ও আবার ১টা কি ১॥ণটা হইতে সুন্ধ্যা ৫টা কি ৫০টা পৰ্য্যন্ত তাহাদিগকে এই সকল কারখানা যাইয়া খাটিতে হয়। সুতরাং কাৰ্য্যতঃ সমস্ত দিনের মধ্যে তারা আপনাদের সন্তানসন্ততির, মুখ একবারও শিলাতে সৰ্ব্বজনীন সাধারণশিক্ষ సెరి দেখিবার সুযোগ পর্য্যন্ত অনেক সময় পায় না, তাদের তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণ করা তো দূরের কথা । দুগ্ধপোষ্য শিশুদিগকে সারাদিনের জন্য একটা নির্দিষ্ট পয়সা দিয়া কোনো ধাত্রীর হাসপাতালে,—ইংরেজিত্তে eg efstCRF LAfK-TFfFA ( Baby-Farm ) বলুে-রাধিয়া যায়,সন্ধ্যাবেল কলকারখানা হইতে ফিরিবার সময় আবার বাড়া লইয়। আসে। আর যারা একটু বয়স্ক, পূৰ্ব্বে অনেক সময়ই তাহাদিগের হাতে দুপ্রহরের অtহারের জন্য একটা দুটা পয়সা দিয়া, একরূপ রাস্তায়ই ছাড়িয়া যাইত। সুতরাং এই অবস্থায় তাদেরে জোর করিয়া স্কুলে লইয়া গিয়া, সেখানে আটকাইয়৷ রাখার ব্যবস্থাতে অনেক লোকেরই কতকটা সুবিধা হইয়াছিল। এই সুবিধাটুকু না হইলে বিলাতের লোকমত, কেবল কতিপয় ংস্কারকের সাধু ইচ্ছার ও উন্নত আদর্শের চরিতার্থতার জন্য, এই জবরদস্তির লেখাপড়ার ব্যবস্থার সমর্থন করিত না । কিন্তু আমাদের দেশের এরূপ অবস্থ এখনও উপস্থিত হয় নাই । আমাদের দেশের গরিব লোকদের জীবিকা-উপার্জনের চেষ্টায় পারিবারিক জীবনট এখনো এমন করিয়া ভাঙ্গিয়া চুরিয়া যায় নাই। আমাদের সমাজের গরিব স্ত্রীলোকেরাও খাটিয়াই থায় ; কিন্তু এখনো কি পুরুষ কি স্ত্রী, কাহাকেই কলকারখানার জেলখানার যাইয়া দিনের ১০১২ ঘণ্টা আবদ্ধ থাকিয়া, প্রতিদিনের অন্নমুষ্টি সংগ্ৰহ করিতে হয় না। পুরুবেরা বাহিরে যাইয়া খাটে, স্ত্রীলোকেরা হয় নিজের ঘরে বসিয়া না
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৯৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।