পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

388 t পৈতা দিয়া একদল ব্রাহ্মণ তৈরি করিয়া ও লইয়াছেন। বাংলাদেশে যখন ব্রাহ্মণের আচারে, ব্যবহারে, বিদ্যাবুদ্ধিতে ব্ৰাহ্মণত্ব হারাইয়াছিলেন, তখন রাজা বিদেশ হইতে ব্ৰাহ্মণ আনাইয়া সমাজের কাজ চালাইতে বাধ্য হইয়াছিলেন । এই ব্রাহ্মণ যখন চারিদিকের প্রভাবে নত হইয়া পড়িতেছিল, তখন রাজা কৃত্রিম উপায়ে কৌলীন্ত স্থাপন করিয়া ব্রাহ্মণের নির্বাণোন্মুখ মৰ্য্যাদাকে খোচা দিয়া জাগাইতেছিলেন । অপর পক্ষে, কৌলীষ্ঠে বিবাহসম্বন্ধে যেরূপ বৰ্ব্বরতার স্বষ্টি করিল, তাহাতে এই কৌলীন্তই বর্ণাম শ্রণের এক গোপন উপায় হইয়া উঠিয়াছিল। যাহাই হউকৃ, শাস্ত্রবিহিত ক্রিয়াকৰ্ম্মরক্ষার জন্ত, বিশেয, অবিশুকতাবশতই সমাজ বিশেয চেষ্টায় ব্রাহ্মণকে স্বতন্ত্রভাবে নিদিষ্ট করিয়া রাখিতে বাধ্য হইয়াছিল । ক্ষত্রিয়বৈশুদিগকে সেরূপ বিশেষভাবে তাহাদের পুৰ্ব্বতন আচারকাঠিন্তের মধ্যে বদ্ধ করিবার কোন অত্যাবশুকতা বাংল - সমাজে ছিল না। যে খুসি যুদ্ধ করুকু, বাণিজ্য করুকৃ, তাহাতে সমাজের বিশেয কিছু আসিত-যাইত না—এবং যাহার। যুদ্ধবাণিজ্য-কৃষি-শিল্পে নিযুক্ত থাকিবে, তাহাদিগকে বিশেষ চিহ্লের দ্বারা পৃথক করিবার কিছুমাত্র প্রয়োজন ছিল না। ব্যবসায় লোকে নিজের গরজেই করে, কোন বিশেষ ব্যবস্থার অপেক্ষ রাথে ন—ধৰ্ম্মসম্বন্ধে সে বিধি নহে ; তাহ প্রাচীন নিয়মে আবদ্ধ, তাহার আয়োজন, রীতিপদ্ধতি আমাদের স্বেচ্ছাবিহিত নহে। অতএব জড়ত্বপ্রাপ্ত সমাজের শৈথিল্য বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, জাষাঢ়। -o-o-o- مم-- বশতই একসময়ে ক্ষত্রিয়-বৈঙ্গ অপিন অধিকার হইতে ভ্ৰষ্ট হইয়া একাকার হইয়া গেছে। র্তাহার। যদি সচেতন হন, যদি তাহার। নিজের অধিকার যথার্থভাবে গ্রহণ করিবার জন্ত অগ্রসর হন, নিজের গৌরব যথার্থভাবে প্রমাণ করিবার জন্ত উদ্যত হন, তবে তাহাতে সমস্ত সমাজের পক্ষে মঙ্গল, ব্রাহ্মণদের পক্ষে . মঙ্গল । ব্রাহ্মণদিগকে নিজের যথার্থ গৌরব লাভ করিবার জন্ত যেমন প্রাচীন আদর্শের দিকে যাইতে হইবে, সমস্ত সমাজকেও তেমনি যাইতে হইবে ; ব্রাহ্মণ কেবল একলা যাইবে এবং আর সকলে যে যেখানে আছে,সে সেইখানেই পড়িয়া থাকিবে, ইহা হইতেই পারে সমস্ত সমাজের এক দিকে গতি না হইলে তাহার কোন এক অংশ সিদ্ধিলাভ করিতেই পারে না । যখন দেখিব, আমাদের দেশের কায়স্থ ও বণিকৃগণ আপনাদিগকে প্রাচীন ক্ষত্রিয় ও বৈগু সমাজের সহিত যুক্ত করিয়া বৃহৎ হইবার, বহু পুরাতনের সহিত এক হইবার চেষ্টা করিতেছেন এবং প্রাচীন ভারতের সহিত আধুনিক ভারতকে সম্মিলিত করিয়৷ আমাদের জাতীয় সত্তাকে অবিচ্ছিন্ন করিবার চেষ্টা করিতেছেন, তখনই জানিব, আধুনিক ব্রাহ্মণও প্রাচীন ব্রাহ্মণের সহিত মিলিত হইয়া ভারতবর্ষীয় সমাজকে সজীবভাবে, যথার্থভাবে, অখণ্ডভাবে এক করিবার কার্য্যে সফল হইবেন। নহিলে কেবল স্থানীয় কলহ-বিবাদ-দলাদলি লইয়। বিদেশী প্রভাবের সাংঘাতিক অভিঘাত হইতে সমাজকে রক্ষা করা অসম্ভব হইবে, নহিলে ব্রাহ্মণের সন্মান অর্থাৎ আমাদের সমস্ত সমাজের না ।