পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা । ] চীনেম্যানের চিঠি। b(tన) দেশের প্রাচীন বৈশ্যবৃত্তির সরলতর পদ্ধতির কথা স্মরণ করিয়া আমি সন্তোষলাভ করি-- এবং আমাদের যে সকল চির ব্যবহৃত পথগুলি আমাদের অভ্যস্ত চরণের কাছে এমন পরিচিত যে, তাহা দিয়া চলিবার সময়েও অনন্ত নক্ষত্রমণ্ডলীর দিকে দৃষ্টপাত করিবার জন্য আমাদের অবকাশের অভাব ঘটে না— তোমাদের সমুদয় নুতন ও ভয়সস্কুল বত্মের চেয়ে সেই পথগুলিকে আমি অধিক মূল্যবান বলিয়। গৌরব করি। ইহার পরে লেখক রাষ্ট্ৰতন্ত্রের কথা তুলিয়াছেন। তিনি বলেন, গবমেণ্ট, তোমাদের কাছে এতই প্রধান এবং সৰ্ব্বত্রই সে তোমাদের সঙ্গে এমনি লাগিয়াই আছে যে, যে জাতি গবমেণ্ট কে প্রায় সম্পূর্ণই বাদ দিয়া চলিতে পারে, তাহার অবস্থা তোমরা কল্পনাই করিতে পার না । অথচ আমাদেরই সেই অবস্থা। আমাদের সভ্যতার সরল এবং অকৃত্রিম ভাব, আমাদের লোকদের শান্তিপ্রিয় প্রকৃতি, এবং সৰ্ব্বোচ্চে আমাদের সেই পরিবারতন্ত্র,যাহা পোলিটিকাল, সামাজিক ও আর্থিক ব্যাপারে এক একটি ক্ষুদ্র রাজ্যবিশেষ,তাহারা আমাদিগকে গবমেণ্টশাসন হইতে এতটা-দুর মুক্তিদান করিয়াছে যে, য়ুরোপের পক্ষে তাহা বিশ্বাস করাই कझैिन । আমাদের সমাজের গোড়াকার জিনিষগুলি কোন রাজক্ষমতার • স্বেচ্ছাকৃত স্বজন নহে । আমাদের জনসাধারণ নিজের জীবনকে এইরূপ শরীরতন্ত্রের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে। কোন গবমেণ্ট, তাহাকে গড়ে নাই, কোন গবমেণ্ট, তাহার বদল করিতে পারে না। এক কথায়, আইন-জিনিষটা উপর হইতে আমাদের মাথায় চাপান হয় নাই,—তাহা আমাদের জাতিগত জীবনের মূলস্থত্র, এবং যাহা শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ আছে, তাহাই ব্যবহারে প্রবর্তিত হইয়াছে। এইজন্য চীনে গবমেণ্ট যথেচ্ছাচারী নহে, অত্যাবশ্যকও নয়। রাজপুরুষদের শাসন তুলিয়া লও, তবু আমাদের জীবনযাত্রা প্রায় পূৰ্ব্বের মতই চলিয়। যাইবে । যে আইন আমরা মান্য করি, সে আমাদের স্বভাবের আইন, বহুশতাব্দীর অভিজ্ঞতায় তাহা অভিব্যক্ত হইয়া উঠিয়াছে,—বাহিরের শাসন তুলিয়া লইলেও ইহার কাছে আমরা বশ্যতা স্বীকার করি । যাহাই ঘটুক না, আমাদের পরিবার থাকে, পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে মনের সেই গঠনটি থাকে, সেই শৃঙ্খলা, কৰ্ম্মনিষ্ঠত। ও মিতব্যয়িতার ভাবটি থাকিয়া যায়। ইহারাই চীনকে তৈরি করিয়াছে । তোমাদের পশ্চিমদেশে গবমেণ্ট, ব্যাপারটা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। এখানে কোন মূলবিধান নাই, কিন্তু ইচ্ছাকৃত অন্তহীন আইন পড়িয়া আছে। মাটি হইতে কিছুই গজাইয়া উঠে না, উপর হইতে সমস্ত পুতিয়া দিতে হয়। যাহাকে একবার পোত হয়, তাহাকে আবার পোতা দরকার হয় । গত শত বৎসরের মধ্যে তোমরা তোমাদের সমস্ত সমাজকে উলটাইয়া দিয়াছ। সম্পত্তি, বিবাহ, ধৰ্ম্ম, চরিত্র, শ্রেণীবিভাগ, পদবিভাগ, অর্থাৎ মানবসম্বন্ধগুলির মধ্যে যাহা কিছু সব চেয়ে উদার ও গভীর, তাহাদিগকে একেবারে শিকড়ে ধরিয়া উপূড়াইয়৷ কালের স্রৈাতে আবর্জনার মত ভাসাইয়া দেওয়া হইয়াছে।