পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা । ] চীনেম্যানের চিঠি । >や* শৃঙ্খলা সন্তোষ এবং সংযমের উপরে সমস্ত সমাজকে গড়িয়া তোলা—তাহার চরম সার্থকতার কথা এই চিঠিগুলির মধ্যে পাওয়া যায় না। চীনদেশ মুখী, সন্তুষ্ট, কৰ্ম্মনিষ্ঠ হইয়াছে, কিন্তু সেই সার্থকতা পায় নাই । অসুখে-অসন্তোষে মানুষকে ব্যর্থ করিতে পারে, কিন্তু মুখে-সন্তোষে মানুষকে ক্ষুদ্র করে । চীন বলিতেছে, আমি বাহিরের কিছুতেই দৃকপাত করি নাই নিজের এলাকার মধ্যেই নিজের সমস্ত চেষ্টাকে বদ্ধ করিয়া মুখী হইয়াছি, কিন্তু এ কথা যথেষ্ট নহে । এই সঙ্কীর্ণতাটুকুর মধ্যে সরল উৎকর্ষ লাভ করাকেই চরম মনে করিলে হতাশ হইতে হয় । জলধারা যদি সমুদ্রকে চায়, তবে নিজেকে দুই তটের মধ্যে সংহত-সংযত করিয়া তাহাকে চলিতে হয়, কিন্তু তাই বলিয়া নিজেকে এক জায়গায় আনিয়া বদ্ধ করিলে চলে না । মুক্তির জন্তই তাহাকে ংযত হইতে হয়, কিন্তু নিজেকে বন্দী করিলে তাহায় চরম উদেশ্য ব্যর্থ হয়— তাহা হইলে নদীকে ঝিল হইতে হয় এবং স্রোতের অন্তহীন ধারাকে সমুদ্রের অন্তহীন তৃপ্তির মধ্যে লইয়। যাওয়া হয় না । ভায়তবর্ষ সমাজকে সংযত-সরল করিয়া তুলিয়াছিল, তাহ সমাজের মধ্যে আবদ্ধ হইবার জন্য নহে। নিজেকে শতধাবিভক্ত অন্ধচেষ্টার মধ্যে বিক্ষিপ্ত না করিয়া, সে আপন সংহত শক্তিকে মনস্তের অভিমুখে একাগ্র করিবার জন্যই ইচ্ছাপূৰ্ব্বক বাহবিষয়ে সঙ্কীর্ণত আশ্রয় করিয়াছিল"। নদীর তটবন্ধনের ন্যায় সমাজবন্ধন তাহাকে বেগদান করিবে, বন্দী করিবে না, এই তাহার উদ্দেশু ছিল । এইজন্য ভারতবর্ষের সমস্ত ক্রুিয়াকৰ্ম্মের মধ্যে, মুখশান্তিসন্তোষের মধ্যে মুক্তির আহবান আছে—আত্মাকে ভূমানন্দে ব্রহ্মের মধ্যে বিকশিত করিয়া তুলিবার জন্তই সে সমাজের মধ্যে আপন শিকড় বাধিয়াছিল। যদি সেই লক্ষ্য হইতে ভ্ৰষ্ট হই, জড়ত্ববশত সেই পরিণামকে উপেক্ষা করি, তবে বন্ধন কেবল বন্ধনই থাকিয়া যায়, তবে অতিক্ষুদ্র সন্তোষ-শাস্তির কোন অর্থই থাকে না । ভারতবর্ষের লক্ষ্য ক্ষুদ্র নহে, তাহা ভারতবর্ষ স্বীকার করিয়াছে—ভূমৈব সুখং নাল্পে সুখমস্তি—ভূমাই সুখ, অল্পে মুখ নাই । ভারতের ব্রহ্মবাদিনী বলিয়াছেন—যেনাহং নামৃত স্তাং কিমহং তেন কুৰ্য্যাম যাহার দ্বারা অমর ম৷ হইব, তাহ লইয়া আমি কি করিব ? কেবলমাত্র পারিবারিক শৃঙ্খলা এবং সামাজিক সুব্যবস্থার দ্বারা আমি অমর হইব না, তাহাতে আমায় আত্মার বিকাশ হইবে না। সমাজ যদি আমাকে সম্পূর্ণ সার্থকতা না দেয়, তবে সমাজ আমার কে ? সমাজকে রাখিবার জন্ত যে আমাকে বঞ্চিত হইতে হইবে, এ কথা স্বীকার করা যায় না— যুরোপও বলে, individualকে ষে সমাজ পক্ষু ও প্রতিহত করে, সে সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করিলে হীনতা স্বীকার করা হয় । ভারতবর্ষও অত্যন্ত আসঙ্কোচে নির্ভয়ে বলিয়াছে, আত্মার্থে পৃথিবীং ত্যজেৎ । সমাজকে মুখ্য করিলে উপায়কে উদ্দেশু করা হয় । ভারতবর্ষ তাহা করিতে চাহে নাই, সেইজন্ত তাহার বন্ধন যেমন দৃঢ়, তাহার ত্যাগও সেইরূপ সম্পূর্ণ। সাংসারিক পরিপূর্ণতার মধ্যে ভারতবর্ষ আপনাকে বেষ্টিত,