পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ সংখ্যা । ] পারিত বস্তুতু শকুন্তলার সরলতা স্বাভাবিক এবং মিরাদার সরলতা অস্বাভাবিক। উভয়ের মধ্যে অবস্থার যে প্রভেদ আছে, তাহাতে এইরূপই সঙ্গত। মিরান্দার দ্যায় শকুন্তলার সরলতা অজ্ঞানের দ্বারা চতুদিকে পরিরক্ষিত নহে । শকুন্তলার যৌবন সদ্য বিকশিত হইয়াছে এবং কৌতুকশাল সর্থীরা সে সম্বন্ধে তাহাকে আত্মধিৰ্ম্মত থাকিতে দেয় নাই, তাহ। আমরা প্রথম অঙ্কেই দেখিতে পাই । সে লজ্জ করিতে ও শিথিয়াছে । কিন্তু এ সকলষ্ট বহিরের জিনিষ । তাষ্ঠীর সরলত। গভীরতর, তাহার পবিত্রত। বাহিরের কোন অভিজ্ঞত। তাহাকে স্পশ করিতে পারে নাই, কবি তাহা শেষ পৰ্য্যন্ত দেখাইয়াছেন । শকুন্তলার সরলত আভ্যন্তরিক। সে যে সংসারের কিছুই জানে না, তাহা নহে; কারণ, তপোবন সমাজের একে বারে বহিবন্তী নহে, তপোবলেও গুহধৰ্ম্ম পালিত হইত। বাহরের সম্বন্ধে শকুন্তল৷ অনভিজ্ঞ বটে, তবু অজ্ঞ নহে, কিন্তু তাহার অ গুরের মধ্যে বিশ্বাসের সিংহাসন । সেই বিশ্বাসনিষ্ঠ সরলতা তাহাকে ক্ষণকালের জন্ত পতিত করিয়াছে, কিন্তু চিরকালের জন্ত উদ্ধার করিয়াছে ; দারুণতম বিশ্বাসঘাতকতার আঘাতে ৪ তাহাকে ধৈর্য্যে, ক্ষমায়, কল্যাণে স্থির রাখিয়াছে । মিরান্দার সরলতার অগ্নিপরীক্ষা হয় নাই, সংসারজ্ঞানের সহিত তাহার আঘাত ঘটে নাই ;—আমরা তাহাকে কেবল প্রথম অবস্থার মধ্যে দেখিয়াছি, শকুন্তলাকে কবি প্রথম হইতে শেষ অবস্থা পৰ্যন্ত দেখাইয়াছেন। y এমন স্থলে তুলনায় সমালোচনা বৃথা । আ স্তর তর । শকুন্তল৷ २१8b আমরা ও তাহ স্বীকার করি। এ দুই কাব্যকে পাশাপাশি রাখিলে উভয়ের ঐক্য অপেক্ষ বৈসাদৃশুই বেশি ফুটয় উঠে। সেই বৈসাদৃষ্ঠের আলোচনাতেও দুই নাটককে পরিষ্কার করিয়া বুঝিবার সহায়তা করিতে পারে। আমরা সেই আশ{য় এই প্রবন্ধে হস্তক্ষেপ করিয়াছি । মিরান্দাকে আমরা তরঙ্গঘাতমুখর শৈললন্ধর জনহীন দ্বীপের মধ্যে দেখিয়াছি, কিন্তু সেই দ্বীপ প্রকৃতির সঙ্গে তাহার কোন ঘনিষ্ঠত নাই । তাহার সেই আশৈশবধারী ভূমি ইহঁতে তাহাকে তুলিয়া আনিতে গেলে তাহার কোন জায়গায় টান পড়িবে না । সেখানে মিরান্দা মানুষের সঙ্গ পায় নাই, এই অভাবটুকুই কেবল তাহার চরিত্রে প্রতিফলিত হইয়াছে ; কিন্তু সেখানকার সমুদ্রপৰ্ব্বতের সহিত তাহার অন্তঃকরণের কোন ভাবাত্মক যোগ আমরা দেখিতে পাই না। নিৰ্জ্জন দ্বীপকে আমরা ঘটনাচ্ছলে কবির বর্ণনায় দেখি মাত্র, কিন্তু মিরান্দার ভিতর দিয়া দেখি না। এই দ্বীপটি কেবল কাব্যের অtখ্যানের পক্ষেই আবশ্যক, চরিত্রের পক্ষে অত্যাবস্ত্যক নহে । শকুন্তলাসম্বন্ধে সে কথা বলা যায় না । শকুন্তলা তপোবনের অঙ্গীভূত । তপোবনকে দূরে রাখিলে কেবল নাটকের আখ্যানভাগ ব্যাঘাত পায়, তাহী নহে, স্বয়ং শকুন্তলাই অসম্পূর্ণ হয় । শকুন্তলা মিরান্দার মত স্বতন্ত্র নহে, শকুন্তলা তাহার চতুদিকের সহিত একাত্মভাবে বিজড়িত। তাহার মধুর চরিত্রখানি অরণ্যের ছায়া ও মাধবালতার পুষ্পমঞ্জরীর সহিত ব্যাপ্ত ও বিকশিত,