পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8 কখনও বা মন্দিরচুড়ার আকারে কেশপাশ বন্ধন করিয়া সোণালী জরির ওড়নায় তাহ জড়াইয়া রাখিতেন । এই ওড়না কাঁধের নীচে ছলিয়া-দুলিয়। মৃত্তিক স্পর্শ করিত। অন্ধকার রজনীতে আকাশপটে উজ্জল তারকার মালা যেরূপ শোভা পায়, তাহীদের কেশদাম ও অনু হুম মুক্তারাজিতে সুগ্রথিত থাকিয় কেশের শোভা তদ্রুপ বৰ্দ্ধিত করিত। কেশের মধ্যভাগে স্থৰ্য্য, অৰ্দ্ধচন্দ্র, তারকা বা পুষ্পের আকৃতিবিশিষ্ট চাকচিক্যময় একখণ্ড মণি বিলম্বিত থাকিত । এদিকে সুগোলসুঠাম সুদীপ্ত হীরকে ও নীলকাস্তাদি জ্যোতিৰ্ম্ময় মণিমাণিক্যে খচিত মুক্তার কণ্ঠহার তাহাদের কমনীয় কণ্ঠের সমধিক সুষমা-বিকাশ করিত। হিন্দুস্থান গ্রীষ্মপ্রধান দেশ বলিয়া রংমহলের স্ত্রীলোকের অতি লঘু ও স্বক্ষ বসন ব্যবহার করিতেন। তাঁহাদের পরিধেয় রেশমীবস্ত্র অনেক সময়ে ওজনে একআউন্স অর্থাৎ অৰ্দ্ধছটাকের বেশী হইত না।* শয়নকালে তাহার এক প্রকার বস্ত্র ব্যবহার করিতেন, প্রাতঃকালে উহা অব্যবহার্য্য বিবেচনায় পরিত্যক্ত হইত। প্রতিদিন তাহারা ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের মণিমাণিক্যখচিত মহাৰ্ঘ পরিচ্ছদ পরিধান করিতেন। তঁহাদের আঙরাখা বা আঙিয়ায় গলার পাড়ের কাছে দুইসারি মুক্তার মধ্যে মধ্যে হীরকখণ্ড খচিত বঙ্গদর্শন। বৈশাখ থাকিত, বোতামের পরিবর্তেও ভাস্বর হীরক খণ্ড ব্যবহৃত হইত, আর উহার কটিদেশের ‘ਚੋਮਾਂ পাড়েg হীরকাদি খচিত থাকিত। তাহাদের কর্ণাভরণ ও বলয়ের সৌন্দর্য্যও বিস্ময়জনক। তাহীদের হস্তের অঙ্গুলিগুলিতে ও পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠে (কারণ র্তাহাদের পা খালি থাকিত এবং তাহারা জুতা না পরিয় Sandal বা বাধা পায়ে দিতেন ) অতি সুন্দর বহুমূল্য মঙ্গুরীয় শোভা পাইত। শাজাদীরা ও বাদশাহের বেগমমাত্রেই বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের উপর অঙ্গুরীয়কের মত চতুর্দিকে মুক্তাখচিত একখানি ক্ষুদ্র মুকুর ধারণ করিতেন। স্বীয় ভুবনমোহন সৌন্দর্যের কমনীয় কাস্তি প্রত্যেক অঙ্গভঙ্গীতে কিরূপ লাবণ্যের তরঙ্গ বিচ্ছুরিত করে, তাহাই দেখিবার জন্ত বোধ হয় তাহার প্রতিমুহূৰ্ত্তে এই মুকুরে আপনাদের প্রতিবিম্ব দেখিতেন। এতদ্ব্যতীত দ্বি-অঙ্গুলি-প্রস্থ মণিখচিত স্বর্ণমেখলা তাহীদের প্রধান অলঙ্কার। মেখলার চতুষ্পার্শ্বে স্বর্ণখৃঙ্খল বিলম্বিত ও মুক্তার গ্রন্থিবিশিষ্ট স্বর্ণঘুঙ্গুর সম্বদ্ধ থাকিত । t মেকুৰী বলেন, প্রত্যেক মহিলারই পূৰ্ব্বোক্তপ্রকারের ৭৮ ফুট অলঙ্কার ছিল। পাছে কেহ তাহার এই ঐশ্বৰ্য্যের বর্ণনা বিশ্বাস করিতে ইতস্তত করেন, এজন্ত তিনি মোগলসম্রাটদের এ বিপুল ঐশ্বৰ্য্য সঞ্চিত হইবায়

  • এত লঘু রেশমী পরিচ্ছদের কথা শুনিয়া অনেকে হয় ত হাস্ত করবেন, কিন্তু বর্ণিয়ে তাহার ভ্রমণবৃত্তান্তে বাংলার বর্ণনায় ইহার যাথার্থ সপ্রমাণ করিয়াছেন। - বাংলার বহরমপুর ও মুর্শিদাবাদ অঞ্চল রেশমী বস্ত্রের জষ্ঠই বিখ্যাত ছিল। ভারতবর্ষের সর্বত্র,এমন কি সুদূর কাশ্মীরে পর্য্যন্ত, ইহা ব্যবহৃত হইত। মোগলদরবারেও এ সব বস্ত্রের খুব আদর ছিল। বৈদেশিক ইংরাজ, ওলন্দাজ ও পর্তুগীজ বণিকের কুঠি করিয়া এই সকল

রেশমী শিল্প বিদেশে রপ্তানি করিতেন।