পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

رف پہ:9\ বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, কাৰ্ত্তিক । প্রতিকূলতার সংশয়মাত্র হইতে মুক্তিদান করিবে--তিনি আর কেহ নহেন—ফীল্ড, মার্শাল সার নেভিল চেম্বারলেন। “ তিনি বলেন,—“শত্রুপরিবারদিগের আদ্যোপাত্ত ধ্বংস বা অপহরণকার্য্য এবার যেরূপ ঘটিয়াছে, ব্রিটিশ সৈন্যদলের দ্বারা আর কখনো এমন ঘটে নাই ।” ১৯০১ শালের জুলাই মাসে তিনি এই প্রকারের অপবাদ দিয়া কোন লগুনের কাগজে একখানি পত্র পাঠাইয়াছিলেন । বহুদিন তাহা প্রকাশ না হওয়ায় টেলিগ্রামের উত্তরে তিনি সম্পাদকের নিকট হইতে র্তাহার লেখার প্রফসহ এই অনুরোধ পাইলেন যে, কতক গুলি প্রতিকূল কথা -যাহ তাহার লেখার প্রধান মৰ্ম্ম—যেন তুলিয়া দেওয়া হয়। যথাযথ সত্যের প্রতি বিলাত এইরূপ আস্থা দেখাইয়াছে। সেই বিলাতে জন মলি এবং হার্বার্ট স্পেন্সার প্রভৃতি দুই একজন মনস্বী ব্যতীত আর কোন উপদেষ্ট নাই ! অথচ প্রাচ্য অত্যুক্তি সংশোধনের জন্ত অনেক নীতিজ্ঞ উপদেষ্ট সেই দেশ হইতেই আমদানি হইয়া থাকে । ইহা আমাদের সৌভাগ্য সন্দেহ নাই, কিন্তু এরূপ সৌভাগ্য একলা ভোগ করিতে ইচ্ছা করে লা— ইংরেজের সঙ্গে ইহা আমরা ভাগাভাগি করিয়া লইতে রাজি আছি । প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সাহিত্য হইতে দুই বিভিন্ন শ্রেণীর অত্যুক্তির উদাহরণ দেওয়া যাইতে পারে। প্রাচ্য অত্যুক্তির উদাহরণ আরব্য উপন্যাস এবং পাশ্চাত্য অত্যুক্তির উদাহরণ রাডিয়ার্ড কিল্পিংয়ের “কিম্‌” এবং র্তাহার ভারতবর্ষীয় চিত্রাবলী। আরব্য উপন্যাসেও ভারতবর্ষের কথা, চীরদেশের কথা আছে, কিন্তু সকলেই জানে তাহ গল্পমাত্র—তাহীর মধ্য হইতে কাল্পনিক সত্য ছাড়া আর কোন সত্য কেহ প্রত্যাশাই করিতে পারে না, তাহ এতই সুস্পষ্ট । কিন্তু কিস্লিং তাহার কল্পনাকে আচ্ছন্ন রাখিয়া এমনি একটি সত্যের আড়ম্বর করিয়াছেন যে, যেমন হলপ-পড়া সাক্ষীর কাছ হইতে লোকে প্রকৃত বৃত্তাস্ত প্রত্যাশা করে, তেমনি কিল্লিঙের গল্প হইতে ব্রিটিশপাঠক ভারতবর্ষের প্রকৃত বৃত্তাস্ত প্রত্যাশা লা করিয়া থাকিতে পারে না । ব্রিটিশ পাঠককে এমনি ছল করিয়া ভুলাইতে হয়। কারণ ব্রিটিশ পাঠক বাস্তবের প্রিয় । শিক্ষালাভ করিবার বেলা ও তাহার বাস্তব চাই । খেলেনাকে ও বাস্তব করিয়া তুলিতে না পারিলে তাহার খেলার মুখ হয় না। আমরা দেখিয়াছি, ব্রিটিশ ভোজে খরগোষ রাধিয়া জন্তুটাকে যথাসম্ভব অবিকল রাখিয়াছে । সেটা যে মুখাদ্য ইহাই যথেষ্ট আমোদের নহে, কিন্তু সেটা যে একটা বাস্তবজন্তু বৃটিশ ভোগী তাহ প্রত্যক্ষ অনুভব করিতে চায়। বৃটিশ খান যে কেবল থানা তাহী নহে, তাহা প্রাণিবৃত্তাস্তের গ্রন্থবিশেষ বলিলেই হয়। যদি কোন ব্যঞ্জনে পাখীগুলা ভাজা ময়দার আবরণে ঢাকা পড়ে, তবে তাহীদের পাগুলা কাটিয়৷ আবরণের উপরে বসাইয়া রাখা হয় । বাস্তব এত অবিশুক ! কল্পনার নিজু এলাকার মধ্যেও বৃটিশ পাঠক বাস্তবের সন্ধান করে—তাই কল্পনাকেও দায়ে পড়িয়া প্রাণপণে বাস্তবের ভণি করিতে হয় ।