পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*)br বঙ্গদর্শন । [ বৈশাখ । করিয়া ভোগ করে, কৰ্ম্ম করে একাকী । যুরোপের ধন-সম্পদ, আরাম-মুখ নিজের— কিন্তু তাহার দান-ধ্যান, স্কুল-কলেজ,ধৰ্ম্মচর্চা, বাণিজ্যব্যবসায়, সমস্ত দল বাধিয়া । আমাদের মুখ সম্পত্তি একলার নহে—আমাদের দান ধ্যান অধ্যাপন, আমাদের কৰ্ত্তব্য এক লার । এই ভাবটাকে চেষ্টা করিয়া নষ্ট করিতে হইবে, এমন প্রতিজ্ঞা-করা কিছু নহে— করিয়াও বিশেষ ফল হয় নাই, হইবেও না । এমন কি, বাণিজ্যব্যবসায়ে প্রকাণ্ড মুলধন একজায়গায় মস্ত করিয়া উঠাইয়া তাহার আওতায় ছোটছোট সামর্থ্যগুলিকে বলপূৰ্ব্বক নিষ্ফল করিয়া তোলা শ্রেয়স্কর বোধ করি না । ভারতবর্ষের তত্ত্ববায় যে মরিয়াছে, সে একত্র হইবার ক্রটিতে নহে—তাহার যন্ত্রের উন্নতির অভাবে । তাত যদি ভাল হয় এবং প্রত্যেক তন্তুবায় যদি কাজ করে, অন্ন করিয়া খায়, সন্তুষ্টচিত্তে জীবনযাত্রা নিৰ্ব্বাহ করে, তবে সমাজের মধ্যে প্রকৃত দারিদ্র্যের ও ঈর্ষার বিষ জানিতে পায় না এবং ম্যাঞ্চেষ্টার তাহার জটিল কলকারখানা লইয়াও ইহাদিগকে বধ করিতে পারে না । একটি শিক্ষিত জাপানী বলেন, “তোমরা বহুব্যয়সাধ্য বিদেশী কল লইয়। বড় কারবার"ফ দিতে চেষ্টা করিয়ে না। আমরা জাৰ্ম্মাণী হইতে একটা বিশেষ কল আনাইয়া অবশেষে কিছুদিনেই সস্তা কাঠে তাহার সুলভ ও সরল প্রতিকৃতি করিয়া শিল্পিসম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে তাহা প্রচারিত করিয়া দিয়াছি—ইহাতে কাজের উন্নতি হইয়াছে, সকলে আহারও পাইতেছে।” এইরূপে যন্ত্রতন্ত্রকে অত্যন্ত সরল ও সহজ করিয়া কাজকে সকলের আয়ত্ত করা, অল্পকে সকলের পক্ষে সুলভ করা প্রাচ্য আদর্শ। এ কথা আমাদিগকে মনে রাখিতে হইবে । আমোদ বল, শিক্ষণ বল, হিতকৰ্ম্ম বল, সকলকেই একান্ত জটিল ও দুঃসাধ্য করিয়া তুলিলে, কাজেই সম্প্রদায়ের হাতে ধরা দিতে হয়। তাহাতে কৰ্ম্মের আয়োজন ও উত্তেজন উত্তরোন্তর এতই বৃহৎ হইয়া উঠে যে, মানুষ আচ্ছন্ন হইয়া যায়। প্রতিযোগিতার নিষ্ঠুর তাড়নায় কৰ্ম্মজীবীরা যন্ত্রের অধম হয় । বাহির হইতে সভ্যতার বৃহৎ আয়োজন দেখিয়া স্তম্ভত হই—তাহার তলদেশে যে নিদারুণ নরমেধযজ্ঞ অহোরাত্র অনুষ্ঠিত হইতেছে, তাহ গোপনে থাকে। কিন্তু বিধা তার কাছে তাহ গোপন নহে—মাঝেমাঝে সামাজিক ভূমিকম্পে তাহার পরিণামের ংবাদ পাওয়া যায়। যুরোপে বড় দল ছোট দলকে পিষিয়া ফেলে, বড় টাকা ছোট টাকাকে উপবাসে ক্ষীণ করিয়া আনিয়া শেষকালে বটিকার মত চোখ বুজিয়া গ্রাস করিয়া ফেলে । - কাজের উদ্যমকে অপরিমিত বাড়াইয়া তুলিয়া, কাজগুলাকে প্রকাও করিয়া, কাজে কাজে লড়াই বাধাইয়া দিয়া যে অশান্তি ও অসস্তোষের বিষ উন্মথিত হইরা উঠে, আপাতত সে আলোচনা থাকৃ। আমি কেবল ভাবিয়া দেখিতেছি, এই সকল কৃষ্ণুধুমশ্বসিত দানবীয় কারখানাগুলার ভিতরে, বাহিরে, চারিদিকে মানুষগুলাকে যেভাবে তাল পাকাইয়া থাকিতে হয়, তাহাতে তাহাদের নির্জনত্বের সহজ অধি