পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ বৈশাখ । 8 e বঙ্গদর্শন । ভারতবর্ষ ছোট-বড়, স্ত্রী-পুরুষ, সকলকেই মর্য্যাদগদান করিয়াছে। এবং সে মর্য্যা দাকে হুরাকাঙ্ক্ষার দ্বারা লভ্য করে নাই। বিদেশীরা বাহির হইতে ইহা দেখিতে পায় না । যে ব্যক্তি যে পৈতৃককৰ্ম্মের মধ্যে জন্মগ্রহণ করিয়াছে, যে কৰ্ম্ম যাহার পক্ষে সুলভতম, তাহ পালনেই তাহার গৌরব— তাহা হইতে ভ্ৰষ্ট হইলেই তাহার অমর্গ্যাদা । এই মর্য্যাদা মনুষ্যত্বকে ধারণ করিয়া রাখিবার একমাত্র উপায়। পৃথিবীতে অবস্থার অসাম্য থাকিবেই, উচ্চ অবস্থা অতি অল্প লোকেরই ভাগে ঘটে—বাকি সকলেই যদি অবস্থাপন্ন লোকের সহিত ভাগ্য তুলনা করিয়া মনে মনে অমর্গ্যাদা অনুভব করে, তবে তাহারা আপন দীনতার যথার্থই ক্ষুদ্র হইরা পড়ে। বিলাতের শ্রমজীবী প্রাণপণে কাজ করে বটে, কিন্তু সেই কাজে তাহাকে মর্য্যাদার আবরণ দেয় না । সে নিজের কাছে হীন বলিয়া যথার্থই হীন হইয়া পড়ে । এইরূপে যুরোপের পনেরো-আনা লোক দীনতায়, ঈর্ষায়, ব্যর্থ প্রয়াসে অস্থির। যুরোপীয় ভ্রমণকারী, নিজেদের দরিদ্র ও নিম্নশ্ৰেণীয়দের হিসাবে আমাদের দরিদ্র ও নিম্নশ্ৰেণীয়দের বিচার করে—ভাবে, তাহাদের ফুঃখ ও অপমান ইহাদের মধ্যেও আছে। কিন্তু তাহা একেবারেই নাই। ভারতবর্ষে কৰ্ম্মবিভেদ—শ্রেণীবিভেদ সুনির্দিষ্ট বলিয়াই, উচ্চশ্রেণীয়েরা নিজের স্বাতন্ত্র্যরক্ষার জন্ত নিয়শ্রেণীরকে লাঞ্ছিত করিয়া বহিস্কৃত করে না। ব্রাহ্মণের ছেলের ৪ বাগদি দাদা আছে । গণ্ডিটুকু অবিতর্কে রক্ষিত হয় বলিয়াই পরস্পরের মধ্যে যাতায়াত, মানুষে মানুষে হৃদয়ের সম্বন্ধ বাধাহীন হইয়া উঠে— বড়দের অনাত্মীয়তার ভার ছোটদের হাড়গোড় একেবারে পিষিয়া ফেলে না। পৃথিবীতে যদি ছোট-বড়র অসাম্য অবশুম্ভাবীই হয়, যদি স্বভাবতই সৰ্ব্বত্রই সকলপ্রকার ছোটর সংখ্যাই অধিক ও বড়র সংখ্যাই স্বল্প হয়, তবে সমাজের " এই অধিকাংশকেই অমর্য্যাদার লজ্জ হইতে রক্ষা করিবার জন্ত ভারতবর্ষ যে উপায় বাহির করিয়াছে, তাহt. রই শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করিতে হইবে । যুরোপে এই অমৰ্য্যাদার প্রভাব এতদূর ব্যাপ্ত হইয়াছে যে, সেখানে একদল আধুনিক স্ত্রীলোক, স্ত্রীলোক হইয়াছে বলিয়াই, লজ্জাবোধ করে। গর্ভধারণ করা, স্বামিসন্তানের সেবা করা, তাহারা কুষ্ঠার বিষয় জ্ঞান করে। মাকুযই বড়, কৰ্ম্মবিশেষ বড় নহে ; মনুষ্যত্বরক্ষা করির যে-কৰ্ম্মই করা যায়, তাহাতে অপমান নাই ;– দারিদ্র্য লজ্জাকর নহে, সেবা লজ্জাকর নহে, হাতের কাজ লজ্জাকর নহে,– সকল কৰ্ম্মে, সকল অবস্থাতেই সহজে মাথা তুলিয়া রাখা যায়, এ ভাব য়ুরোপে স্থান পার না । সেইজন্ত সক্ষম, অক্ষম, সকলেই সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ হইবার জন্ত সমাজে প্রভূত নিষ্ফলতা, অন্তহীন বৃথাকন্ম ও আত্মঘাতী উদ্যমের স্বষ্টি করিতে থাকে। ঘর ঝাট দেওরা, জল আনা, বাটনা বাট, আত্মীয়-অতিথি সকলের সেবাশেষে নিজে আহার করা, ইহা যুরোপের চক্ষে অত্যাচার ও অপমানু, কিন্তু আমাদের পক্ষে ইহা গৃহলক্ষ্মীর উন্নত অধিকার,—ইহাতেই তাহার পুণ্য, তাহার সম্মান । বিলাতে এই সমস্ত কাজে যাহারা প্রত্যহ রত থাকে, শুনিতে