পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয়-সংখ্যা । ] খুশরোজ । - তাহার ইতিহাসগ্রন্থে লিখিয়াছেন যে, এই পুষ্পবহুল দেশেও পুষ্পের উৎপাদনে কোন যত্ন করা হইত না, কিন্তু সম্রাটু বাবরের সময় এখানকায় পুষ্পোদ্যান বহযত্নে তৈয়ারি করা হইত। এরূপ প্রাসাদসংলগ্ন নয়নাভিয়াম উদ্যানমালা বৈদেশিক পৰ্য্যটকের ভূয়সী প্রশংসার বিষয়ীভূত হইয়াছে। এই উৎসবে যে সব পুষ্পের বিপণি বসিত, সে বিচিত্র বর্ণের বিবিধ পুষ্পরাজির নাম পৰ্য্যন্তও আজকাল শুনিতে পাই না । তাহারা মোগলরাজত্বের অন্তান্ত ঐশ্বৰ্য্যগৌরবের সহিতই যেন ভারত হইতে বিলুপ্ত হইয়াছে। সেঁউতি, চম্পা, কেতকী, কেওড়া, * চালতা, তস্বীগুলাল, চামেলি, রায়বেল, কপুরবেল, সিঙারহর (হরশিঙ্গার বা শেফালিকা ), পাদল, মুণ্ড রা, যুহী (যুথিকা), নিওয়ারী, জাফুণি, আফতাবী ও কম্বাল ( বিভিন্ন প্রকারের স্বৰ্য্যমুখী ), জফরী, রত্নমঞ্জনী, রত্নমালা, কেণ্ড, কনের, কদম্ব, না কেশর, স্বরূপন, শ্ৰীখণ্ডী, হেনা, দুপহরিয়া, ভূচম্পা (ভূমিচম্পক), মুদর্শন, সেনবেল, স্বনজার্দ, মালতী, ধনস্তর, শিরীষ ইত্যাদি পুষ্পের হাট বসিয়৷ যাইত। আবুল ফজল আরও কত পুষ্পের উৎকট পারসী নাম দিয়াছেন, তাহার তালিকা দিয়া পাঠককে বিরক্ত করিতে চাহি না । ফলের রাজারে—ইরাণ, তুরাণ, সমর্থনা, কাবুল ও কান্দাহার হইতে ফলবিক্রেতা আসিত—অনেক সুস্বাকু মহাৰ্য ফল আনিত । অরহঙ ও কাবুলের তরমুজ, আবুজোস, সমরখন্দের আপেল, কান্দাহার ও কাশ্মীরের স্বমিষ্ট রসপুর্ণদ্রাক্ষাফল,সিজিদ,খোবানি,নাস্ পাতি, মনকা,চিলগুজ, ভোলসিরি, পনিয়ালা, গুন্তী, তারী,পিয়ার, আম্র, শালক, পিণ্ডালু, শিয়ালি, অমলবেৎ, কর্ণ প্রভৃতি বিচিত্র স্বস্বাছ ফলসমূহের অনেকগুলির নাম কেবল ইতিহাসগত হইয়৷ আছে—এতকাল পশ্চিমাঞ্চলে থাকিয়াও ইহাদের মধ্যে অনেকগুলি ফল কখনও আমাদের দৃষ্টিগোচর হর নাই, অথচ আবুল ফজল সেগুলিকে অতি সুস্বাঞ্ছ বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। বাজার বোধ হয় প্রাসাদের নিকটেই বসিত। আবুল ফজল ও বদৌনি প্রমুখ ঐতিহাসিকেরা কোন স্থানে যে এ মেলা বসিত, তাহ স্পষ্ট করিয়া লেখেন নাই। তবে যখন বেগম ও অন্ধান্ত হারেমের লোকের। এই উৎসবে যোগ দিতেন, তখন বোধ হয় যে, প্লাসাদের সমীপন্থ কোন স্থানে অথবা প্রাসাদের ভিতরের বৃহৎ প্রাঙ্গণে এই বৃহৎ বাজার বসিত। রমণীদের মেলার দিন বেগমের ও অন্তান্ত সন্ত্রান্ত আমীর-ওমরাহদের পরিবারেরা এই উৎসবে নিমন্ত্রিত হইতেন। সে দিন বাদশাহ ব্যতীত অন্ত পুরুষের সম্পর্কমাত্র থাকিত না—শাহজাদারাও এই দিনে মেলায় আসিতে অমুমতি পাইতেন না। রমণীতে কিনিত, রমণীতেই বেচিত। বঙ্কিমচন্দ্র এই-পৰ্ব্ব বর্ণনা করিতে করিতে বলিয়াছেন—

  • কেতকী ও তাহার অপভ্রংশ কেওড়া আমরা একবিধ পুষ্প বলিয়া জানি; কিন্তু আবুল্‌ফজল ইহাদের মধ্যে

9झे সুভদ দেখাইয়াছেন যে, কেতকী ক্ষুদ্র ও কেওড়া আকারে উহার দ্বিগুণ অপেক্ষাও বৃহৎ ও কেওড়ার পাতায় কাটা আছে। তলে জার আর বিষয়ে উভয়ের সাদৃশ্য দেখা যায়।