পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয়-সংখ্যা । ] উদযোগ করিতেছিলেন। আশা এই সকল আকারণ উৎপীড়ন লইয়া তাহাকে ভৎসনা করিবার উপক্রম করিবামাত্ৰ মহেন্দ্র কোন একটি কৃত্রিম উপায়ে আশার মুখ বন্ধ করিয়া শাসনবাক্য অস্কুরেই বিনাশ করিতেছি লন ! এমন সময় প্রতিবেশীর বাড়ীর পিঞ্জরের মধ্য হইতে পোষা কোকিল কুহুকুহু করিয়া ডাকিয়া উঠিল । তখনি মহেন্দ্র এবং আশা তাহীদের মাথার উপরে দোদুল্যমান পাচার দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন। তাহাদেব কোকিল, প্রতিবেশী কোকিলের কুহুধবনি কখনো নীরবে সহ্য করে নাই, আজ সে জবাব দেয় না কেন ? আশা উৎকণ্ঠিত হইয়া কহিল, “পার্থীর আজ কি হইল ?” মহেন্দ্ৰ কহিল, “তোমার কণ্ঠ শুনিয়া লজ্জ। বোধ করিতেছে।” আশা সামুনয় স্বরে কহিল, “না, ঠাট্ট। নয়, দেখনা উহার কি হইয়াছে ?” মহেন্দ্র তখন খাচা পাড়িয়া নামাইলেন । গাচার উপরের আবরণ খুলিয়া দেখিলেন, পাখী মরিয়া গেছে। অন্নপূর্ণ যাওয়ার পর বেহার ছুটি লইয়া গিয়াছিল, পাখীকে কেছ দেখে নাই । দেখিতে দেখিতে আশার মুখ মান হইয়া গেল। তাহার স্বাঙল চলিল না—ফুল পড়িয়া রহিল ! মহেন্দ্রের মনে আঘাত লাগিলেও, অকালে রসভঙ্গের আশঙ্কায় ব্যাপারটা সে হাসিয়া উড়াইবার চেষ্ট৷ করিল। কহিল—“ভালই হইয়াছে ; আমি ডাক্তারী করিতে যাইতাম, আর ওট। স্কুইম্বরে তোমাকে জালাইয়া মারিত —” 8 চোখের বালি। ᏜᎼ এই বলিয়া মহেন্দ্র আশাকে বাহুপাশে বেষ্টন করিয়া কাছে টানিয়া লইবার চেষ্টা করিল। আশা আস্তে আস্তে আপনাকে ছাড়াইয়া লইয়া অাচল শূন্য করিয়া বকুলগুলা ফেলিয়া দিল। কাহল-“আর কেন । ছিছি ! তুমি শাস্ত্র যাও, মাকে ফিরাইয়া আন গে !” ( s ル এমন সময় দোতলা হইতে "মহিন্দ মহিন্দা” রব উঠিল । “আরে কে হে, এস এস !” বলিয়া মহেন্দ্র জবাব দিল । বিহারীর সাড়া পাইয়া মহেন্দ্রের চিত্ত উৎফুল্ল হইয়৷ উঠিল । বিবাহের পর বিহারা মাঝে মাঝে তাহাদের মুখের বাধাস্বরূপ আসিয়াছে— আজ সেই বাধাই সুখের পক্ষে একান্ত প্রয়োজনীয় বলিয়া বোধ হইল । আশাও বিহারীর আগমনে আরাম বোধ করিল। মাথায় কাপড় দিয়া সে তাড়াতাড়ি উঠিয়া পড়িল দেখিয়া মহেন্দ্র কহিল, “যাও কোথাম ? আর ত কেহ নয়, বিহারী আসিতেছে ?” আশা কহিল, “ঠাকুরপোর জলখাবারের বন্দোবস্ত করিয়া দিই গে।” একটা কিছু কৰ্ম্ম করিবার উপলক্ষ্য আসিয়া উপস্থিত হওয়াতে আশর অবসাদ কতকটা লঘু হইয়া গেল। আশা শাশুড়ির সংবাদ জানিবার জন্য মাথায় কাপড় দিয়া দাড়াইয়া রহিল। বিহারীর সহিত এখনো সে কথা কয় না। বিহারী প্রবেশ করিয়াই কহিল—“আ সৰ্ব্বনাশ! কি কবিত্বের মাঝখানেই পা ফেলিলাম ! ভয় নাই ৰোঠা’ণ, তুমি বোস, আমি পালাই !”