পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থসংখ্যা । ] জড় কি সজীব ? >6:X মাংসপেশীর চিত্রের সহিত তাহার সাদৃশু দেখা যায়। অধ্যাপক এইরূপ বিবিধ চিত্র সংগ্ৰহ করিয়াছেন। দেহবিদগণ বলেন, দেহপদার্থের মধ্যে এই সাড়ই জীবনের মুস্পষ্ট লক্ষণ, মৃতপদার্থে ইহার সম্পূর্ণ অভাব দৃষ্ট হয় । এখন জড়পদার্থের প্রতি দৃষ্টিপাত করা যাক। অধ্যাপক বস্ব দেখাইয়াছেন, একটি তারের এক প্রান্তে যদি মোচড় বা ঘা দেওয়া যায়, তবে সেই আহত বা উত্তেজিত প্রান্ত হইতে প্রকৃতিস্থ প্রান্ত পর্য্যন্ত একটি বিদ্যুৎপ্রবাহ উৎপন্ন হয়। তড়িৎমাপকসুচির বিচলন দ্বারা এই সাড়ের পরিমাণ ধরা পড়ে। যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করির অধ্যাপক বস্ন দেখাইয়াছেন, জড়পদার্থের এই আঘাতজনিত সাড় ও প্রকৃতিলাভের তরঙ্গরেখার সহিত স্বায়ু-মাংসপেশীর তরঙ্গরেখার অত্যন্ত সাদৃপ্ত আছে। ধাতুপদার্থে ঘন ঘন তাড়না করিলে যে তরঙ্গরেখা পাওরা যায়, তাহা দস্তুর—সেই তাড়না আরো দ্রুত করিলে তরঙ্গরেখা নিরস্তর স্ফীত হইয়া ধনুষ্টঙ্কারের অবস্থা প্রকাশ করে । শীতাতপের মাত্র অধিক হইলে ধাতুপদার্থে আড়ষ্টতা জন্মে এবং বিশেষ উত্তাপে তাহার সাড়শক্তি সৰ্ব্বাপেক্ষা বিকাশ পায় —ধাতুতারের মধ্যে বিশেষ দ্রব্য প্রয়োগ করিলে তাহার সাড়ের প্রবলতা মদমত্ততার মত আশ্চৰ্য্য বাড়িয়া উঠে, আবার দ্রব্যবিশেষে অবসাদের লক্ষণ আনয়ন করে, আবার কোন কোন দ্রব্যে বিষের মত কাজ করে। কোন কোন দ্রব্য ধাতুপদার্থের পক্ষে বিশেষ মাত্রায় উত্তেজক এবং মাত্রাস্তরে অবসাদক ; আবার ইহাও দেখা গিয়াছে, সময়মত ঔষধ দিতে পারিলে বিষপ্রয়োগের প্রতিকার করা যায়। এইরূপ নানা আঘাত-অপঘাতে ধাতুদ্রব্যে যে ক্রিয়া উৎপন্ন হয়, তাহার তরঙ্গচিত্র জৈবতরঙ্গের এতই সদৃশ যে, দেহবিদগণ উভয় চিত্রকে পৃথক্ করিয়া নির্দেশ করিতে পারেন না । এই গেল আঘাতজনিত সাড়। আলোকজনিত সাড় সম্বন্ধেও অধ্যাপক মহাশয় পরীক্ষা করির সমফল পাইয়াছেন। তিনি একটি কৃত্রিম চক্ষু নিৰ্ম্মাণ করিয়াছেন ; যে সকল রশ্মি সম্বন্ধে আমাদের চক্ষু অসাড়, র্তাহার কৃত্রিম চক্ষুতে সে সকল রশ্মিও সাড়া জাগাইরা থাকে। আলো লাগিলে সজীব চক্ষু যেমন করিয়া মস্তিষ্কে বেগ প্রেরণ করে, এই কৃত্রিম চক্ষুর ক্রিয়া ঠিক সেইরূপ। সুতরাং এই আবিষ্কারের ফলে দর্শনক্রিয়া ব্যাপারটি দেহবিদ্যায় কোঠা হইতে পদার্থবিদ্যায় কোঠায় আসিয়া পড়িতে পারে। এই কৃত্রিম চক্ষুর আবিষ্কারে বর্তমান তারহীন টেলিগ্ৰাফী ও ঐথরিক বার্তাবহনপ্রণালী উলটুপালটু করিয়া দিবে।