পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৩১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম-সংখ্যা । ] তাহাই হইল । রাত্রিকালে রাণী মীরাকে সঙ্গে করিয়া, অলঙ্কারের বাক্স সঙ্গে লইয়া, উদ্যানে গমন করিলেন। একটা বৃক্ষতলে মীরা একটা গৰ্ত্ত খনন করিল, তাহাতে অলঙ্কারের বাক্স রাখিয়া, মাট চাপা দিয়া, রাণী মীরার সঙ্গে চলিয়া আসিলেন । উদ্যানের বাহিরে উচ্চ বারান্দার উপর রাণী দাড়াইলেন । মীরা গিয়া, অন্দরমহলের ও উদ্যানের দ্বার দিয়া ফকারকে উদ্যানে লইয়। আসিল । রাণী অন্তরাল হইতে দেখিতেছিলেন । সন্ন্যাসীর মাথায় বড় বড় জটী, মুখে গুম্ফশ্মশ্রর এত বাহুল্য যে, ভাল করিয়া মুখ দেখিতে পাওয়া যায় না । দিনমানে হইলে সেগুলা পরচুল কি না, তাহাতে অনেকের সংশয় হষ্টত । যে স্তানে অলঙ্কার প্রোথিত ছিল, মীরা গিয় তাহাকে সে স্থান দেখাইয়া দিল। সন্ন্যাসী সেই স্থানে বসিয়া মন্ত্ৰ উচ্চারণ করিতে লাগিল ও ধূপ-ধুন। প্রভৃতি জালিয়া ভয়ঙ্কর ধূম উৎপাদন করিল। সে ধুমে সন্ন্যাসী ও বৃক্ষতল, কিছুই লক্ষিত হয় না। অবশেষে ধুম অপসারিত হইলে, সন্ন্যাসী উঠিয়া দাড়াইয়া কহিল, “বেশগৃহে পশ্চিমদিকে অন্বেযণ কর । কলা স্নানাদির পর এখান হইতে অলঙ্কার ইলিয়া লইবে, তাহার পূৰ্ব্বে ভুলিলে বিপদ হইবে।” এই বলিয়া সন্ন্যাসী চলিয়া গেল । মীরা তাহাকে পথ দেখাইয়। ফিরিয়া আসিয়া রাণীর সঙ্গে বেশগৃহে গমন করিল। গৃহের পশ্চিম কোণে রাণী দেখিলেন, সলাবুর একটি কমণ্ডলু রহিয়াছে। সেইটি তুলিয়া লইয়া দেখিলেন, তাহার ভিতর এক মুক্তামালা। ○oぐ) ছড়া মালা—বাহির করিয়া আনন্দে চীৎকার করিয়া উঠিলেন। মীর ছুটিয়া তাহার নিকটে গেল। দেখিল, রাণীর হস্তে অপুৰ্ব্ব মুক্তfমালা, এক একটি মুক্ত এক একটি কপোতডিম্বের তুল্য, কোমলে উজ্জল, মস্বণ, প্রদীপালোকে ঝলমল করিতেছে । রাণী সেই একবার চীৎকার করিয়া আনন্দে আর কথা কহিতে পারিলেন না, কেবল সেই সন্ন্যাসিলব্ধ বিচিত্র মালা দেখিতে লাগিলেন । মারা অনেকক্ষণ পরে বলিল, “ইহার তুলনায় যোধাবাইর মালা ও কিছু নয় । এমন মুক্ত কোন বাদশাহের বেগম ও কখন দেখেন নাই ।” হৰ্ষে, গৰ্ব্বে, রাণীর মুখ উৎফুল্ল হইয়া উঠিল। পরদিবস রাজা প্ৰাত:কৃত্য সমাপন ও বেশভূষা ধারণ করিয়া বাহিরে গমন করিবার উদ্যোগ করিতেছেন, এমন সময় রাণী হাস্তমুখে তাহার সম্মুখে আগমন করিলেন । এমন হাসি রাজ। অনেকদিন দেখেন নাই। রাণী বলিলেন, “একছড়া মুক্তার মাল। তোমাকে দিয়া হইল না, এ ছড়া কেমন হইল দেখ দেখি !” রাজা রাণীর কণ্ঠ দেখিলেন-গৌর কম্বুগ্ৰীবা আলিঙ্গন করিয়৷ সেই বিশাল মুক্তামাল প্রভাতালোকে জলিতেছে ! রাজা বিস্মিত হইয়া কহিলেন, “কোথায় পাইলে ?” তাহার পর রাণীর নিকটে আসিয়া উত্তমরূপে দেখিলেন, সহসা কহিলেন, “দেখি ! দেখি !” রাণী গৰ্ব্বোল্পত ভঙ্গীতে, কৌতুকপ্রদীপ্ত নয়নে, স্মিতাধরে দাড়াইয়াছিলেন । কহিলেন, “দেখ, ভাল করিয়া দেখ !”