পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৫০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Ꮬ8 কালিকানন্দ কিছু মিতভাষী, বিস্ময় বা অদ্ভুত রসের ধার বড় ধারেন না। শ্বিতমুখে ধীরে উত্তর দিলেন—“কি ভগিনি ?” ইহাতে হাবুর মা ওরফে দিগম্বরী ঠাকুরাণীর করুণরস উছলিয়া উঠিল। বস্ত্রাঞ্চলে চক্ষু মুছিয়া কিছু বেগের সহিত তিনি বলিলেন, “আহা দাদা, তোমার দুঃখু দেখে আমার বড় দুঃখু হয় : ছেলে-বউ তারা ত গেরাহিই করে না, বউও কিন পর হয়ে গেল !” এটা ঠিক করুণরস কি হাস্তরস, বুঝিয়া উঠিতে ভট্টাচাৰ্য্য-মহাশয়েয় একটু দেরি হইল । সহজেই তাহার মনে পড়িল, বিধবা ভাগিনেয়ীট পীড়িত হইলে স্বহস্তে তাহাকে পাক করিয়া খাইতে হইয়াছিল, জ্ঞাতি-ভাই-ভগিনীরা তখন ডাকিয়া সুধান নাই। অতএব কিছু কৌতুহলী হইয়া তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন যে, ব্যাপারখানা কি ? উত্তরে গুনিলেন যে, পূজা সন্মুখে, বলিদান দেখার ভয়ে সবুর বউ নাকি ছল করিয়া বাড়ী আসিল না । ইহার পর কথাটা নানাস্বত্রে অনেকবার তাহার কর্ণগোচর হইল। নেড়ানেড়ীর বংশে সকলই সম্ভব, ধ্রুব জানিয়া কালিকানন্দ পুত্রকে চিঠি লিখিলেন যে, “শু্যামাপুজার পর আমি সস্ত্রীক তীর্থদর্শনে বাহির হইব স্থির করিয়াছি, যত সত্বর হইতে পারে, তোমার গর্ভধারিণীকে বাড়ী পাঠাইবে । বধুমাতাদের এখন পাঠাইবার ७वं८ग्नांछन नांदें ।* নিতান্ত অনিচ্ছায় পৌত্রকে সহস্রবার চুম্বন করিয়া সাশ্রনম্বনে কী ঠাকুরাণী গৃহে ফিরিয়া গেলেন। দেশের কলাই-দাল এবং ৰড়ির টক মনে পড়ায় বার্ম-দাসীরও আর বঙ্গদর্শন । [ মাঘ । মন টিকিল না। তবে যোগমায়ার মত লক্ষ্মী বউটিকে, বিশেষত থোকাবাবুকে ছাড়িয়া যাইতে তাহার ও প্রথম-প্রথম মনকেমন করিয়াছিল। গৃহিণীর মুখে পুত্রবধুর অতিরিক্ত প্রশংসা শুনিয়া ভট্টাচাৰ্য্য বুঝিতে পারিলেন যে, নেড়ানেড়ীর পুত্রকন্যারা তবে যাদুকরী বিদ্যা ও জানে ! কিন্তু নথনাড়ার ভয়ে মনের সন্দেহ স্পষ্টীকৃত করিতে পারিতেন না । নাতি দেখিতে ঠিক তাহারই মত হইয়াছে শুনিয়া ভারি,খুলী হইলেন ; স্থির করিলেন. মাতামহ গৃহে কখন তাহাকে যাইতে দিবেন না । বামাসুন্দরী প্রায় দশমাস বেহারঅঞ্চলে বাস করিয়া অভ্যস্ত গালিগুলির পুজি বাড়াইয়া আনিয়াছিল, সে যেন কতকটা অস্ত্রে শাণ দেওয়ার মত । পাড়ার শতেক-খুয়ারীরা নিরীহ বউমার নিন্দ। রটাইয়াছে শুনিয়া, “দুরস্ত জবানে” উদ্দেশে সে হিন্দী “গারি"গুলির যেরূপ সংস্কার ও সদ্ব্যবহার করিয়াছিল, তাহার পরিচয়ে আর কাজ নাই । 3. এই সকল ঘটনার প্রায় দেড়বৎসর পরে সর্বানন্দ ছুটী লইয়া বাট আসিল। তখন পূজা আগত প্রায়, শরতের স্নিগ্ধ রৌদ্র বঙ্গের হ্যামল প্রাস্তরে এবং হিল্লোলিত ধান্তক্ষেত্রে প্রতিভাত হইতেছিল । পরিপূর্ণ ভাগীরথীর অপেক্ষাকৃত নির্জন ঘাটে সৰ্ব্বানন্দের নৌকা আসিয়া লাগিয়াছে । তখন বেল প্রায় দেড়প্রহর। জানাব্লিক শেষ করিয়া, খড়ম পায়ে, নামাবলী গায়, স্বয়ং কালিকানন্দ সেখানে বিচরণ করিতেছিলেন।