পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3е е ब्रह्मक्षत्रं । ৬ষ্ঠ বর্ষ, আষাঢ়। চরিত্রগুলি যেমন জীবন্ত, পরিস্ফুট হইয়াছে,— আমাদিগের জীবনের, চিরসহচর-সহচরীর স্থায় হইয়া গিয়াছে, আনন্দমঠে বর্ণিত চরিত্রগুলি তেমন হয় নাই—আমার এইরূপ বোধ হইয়াছিল। যেন একদিক্ রক্ষা করিতে গিয়া, বঙ্কিমবাবু অপরদিক্ রক্ষা করিতে পারেন নাই ; যেন উপন্যাসে রাজনৈতিক তথ্য ব্যাখ্যা করিতে গিয়া তাহার উপন্যাসের অতুলনীয় মনোহারিত হারাইয়াছেন ; যেন র্তাহার কল্যাণী ও শান্তি বাস্তবিক জগতের লোক নহে ; যেন সত্যানন্দ, ভবাননা ইত্যাদি অপূর্ণ ছবি। প্রথমে এইরূপ বোধ হইয়াছিল। কিন্তু অনেক বৎসর পরে আমি আবার আনন্দমঠ পাঠ করিলাম। তখন এই গ্রন্থের প্রকৃত অর্থ আমার মানসনেত্রে বিদ্যুতের ন্যায় চমকিল। যাহা পূৰ্ব্বে দেখিতে পাই নাই, তাহা দেখিলাম। দেখিলাম, গ্রন্থকারের বিশাল হৃদয়ের গভীর স্বদেশপ্রেম এই গ্রন্থে স্পন্দিত হইতেছে। দেখিলাম—গ্রন্থকারের চিন্তু, স্বদেশহিতৈষিতা ও দুরদর্শিত বর্তমান লোকের শিক্ষার জন্ত, অতীতকালের মধ্যে, ভবিষ্যতের দর্পণ রচনা করিয়া রাখিয়াছে। বুঝিলাম, আনন্দমঠ মাতৃপূজার মন্ত্ৰ-সমুদয় গ্রন্থখানি “বন্দে মাতরম্”। বঙ্কিমবাবু একদিন আমাকে বলিয়াছিলেন যে, চাকুরী তাহার জীবনের একটি প্রধান দুর্ভাগ্য। কিন্তু চাকুরীর শৃঙ্খল তাহার স্বদেশপ্রেমকে, তাহার প্রতিভাকে আবদ্ধ করিতে পাৰুেনাই। স্বদেশহিতৈষী প্রতিভাশালী বঙ্কিম, সমুদয় দিবস আপিসে খাটিয়া, জধঃপতন ভাবিয়া অশ্রমোচন করিতেন । একদিকে রাজভক্তি, আর একদিকে স্বদেশপ্রেম । রাজা যে বিদেশী । স্বদেশপ্রেম যদি অতিমাত্রায় প্রকাশ পায়, তাহ হইলে গবর্মেন্ট রাগ করিতে পারেন। উভয়সঙ্কট । কিন্তু উভয়সঙ্কট ও কঠিন সমস্তাতেই প্রতিভার পুর্ণপরীক্ষা হয়। বঙ্কিমের প্রতিভা “লয়াল্ট” ও স্বদেশপ্রেমের সামঞ্জস্ত করিল ; ইংরেজের ও ভারতবাসীর মঙ্গল, অন্তত বর্তমানকালে, পরম্পর বিরোধী নহে, তাহ দেখাইয়া দিল । * বঙ্কিম, একদিকে যেমন অশান্তি বা ইংরেজবিদ্বেষ ভারতবাসীর পক্ষে নিতান্ত অমঙ্গলজনক বলিয়া দিলেন, অন্যদিকে স্বদেশীর হৃদয়ে একটা মহতী আশী জালিয়া দিলেন। বলিলেন—“যোগ্য হও, পরে আকাজ করিও ; মনুষ্য হও, অধিকার পাইবে ; ইংরেজ গুরু, তুমি ছাত্র, ছাত্র হইয়া ওকর সহিত বিবাদ করিও না।” . এই কথা সুন্দররাপে বলিবার জন্ত তিনি কল্পনারাজ্যে প্রবেশ করিলেন । নিজের যাহা বলিবার ছিল,— তাহ রমণীর কমনীয় মধুরতার মধ্যে, সতীর পবিত্র প্রেমের মধ্যে, কখন বা শান্তির সারঙ্গনিরূণের সঙ্গে, কখন বা তোপের গুড়মগুড় ম্ গর্জনের সঙ্গে, কখন বা মহেন্দ্রের ব্রতধারণের মধ্যে, কখন বা সত্যানন্দের ব্ৰত-উদযাপনের ভিতর, কখন বা জ্যোৎস্নান্নাত কানুনে,কখন তাপদগ্ধপ্রান্তরে, কখন বা জয়দেবের কোমলকান্ত পদাবলীতে, কখন বা ভগবদগীতার মহীয়ান শ্লোকের প্রতিধ্বনিতে—বঙ্কিমবাবুর যাহা স্বদেশকে বলিবার ছিল, তাহ আনন্দমঠে বধিয়ু লইয়াছেন। এই গ্রন্থে সকল স্থানেই তিনি স্বদেশীকে “বন্দে মাতরং” গাহিতে শিখাইয়াছেন। .