পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা। ] ঐক্য স্থাপিত হয়ণ দুৰ্ব্বলতা। ঐক্য বলের সহিত বলের যোগ ; অনৈক্য বল হইতে বলের বিয়োগ,—পরস্পরের আঘাতে বলের নাশ। ঐক্য সমন্বয়, অনৈক্য বিভ্ৰাট। প্রতি হইতে ঐক্য জন্মে। বিদ্বেষ হইতে শুনৈক্য প্রস্থত হয়। ঐক্য সাধারণ মঙ্গলের জন্য নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে। অনৈক্য মানুষকে নিজ-নিজ স্বার্থে বিব্রত করিয়া সাধারণ মঙ্গল নষ্ট করে। ঐক্য ক্ষুদ্র আমিকে বৃহৎ আমির সহিত একীভূত করে। ৩ । আনন্দমঠের তৃতীয় স্বত্র আত্মোৎসর্গ। যেখানে ঐক্য দেখিবেন, সেখানে আত্মোৎসর্গ থাকিবে। কেন না, আত্মোৎসর্গ ব্যতীত সাধারণ মঙ্গলের জন্য ঐক্য সহ কাৰ্য্য করা অসম্ভব। যাহাকে আমরা আন্থোৎসর্গ বা আত্মবিসর্জন বলি, তাহা আত্মপ্রতিষ্ঠা। ভগবান মানুষকে এমন করিয়া স্বষ্টি করিয়াছেন যে, আপনাকে বিসর্জন করিলেই আপনাকে লাভ করা যায়। যে মরিতে জানে, সে-ই বাচিতে জানে। ধারাবাহিক সাহস, , আত্মার স্থায়ী উচ্চভাব-রিপূগণের উপর বিবেকের রাজত্ব—পার্থিব জড়দেহের উপর স্বৰ্গীয় আত্মার প্রভুত্ব আত্মবিসর্জনরূপে পরিণত হয়। আনন্দমঠের সন্তানগণ স্বদেশের জন্য জগতের সকল সুখভোগলালসা বিসর্জন করিয়াছিলেন, এমন কি, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-গৃহ, যাহার মায়াতে সাংসারিক লোকে মুগ্ধ, তাহা সমস্ত ত্যাগ করিয়াছিলেন। যতদিন স্বদেশের না হইবে, ততদিন তাহারা স্ত্রীর মুখ খবেন না, এই প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন, এবং যদি কখন এই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন,তাহ হইলে ৯মরণাস্তিক প্রায়শ্চিত্ত করিবেন,ইচাও প্রতিজ্ঞ আনন্দমঠ ও স্বদেশপ্রেম। ঐক্য বল ; অনৈক্য করিয়াছিলেন। সস্তানগণ, সকলেই সন্ন্যাসী (فيان : হইয়াছিলেন। একজন মহাপুরুষ বলিয়াছেনপ্রতিভা ও প্রতি ও পুজা সন্ন্যাসাত্মক। সুতরাং স্বদেশপ্রীতি সন্ন্যাসাত্মক । যে সকল স্বদেশপ্রেমিক বিলাসে মগ্ন,--সোখীন দ্রব্যে আসক্ত থাকিয় তাহাদিগের অনুচরগণকে আত্মবিসর্জনের জন্ত শিক্ষা-দেন, তাহদের স্বদেশপ্রেম সহসা বিশ্বাস করিবেন না। স্বদেশপ্রেমের ‘ নেতা সৰ্ব্বাপেক্ষ ত্যাগশীল হইবেন। কঠোর সন্ন্যাস র্তাহার জীবনের গৌরব,-চরিত্রের মুকুট। দেখুন সত্যানন্দকে অরণ্যে, মঠে, বিজয়লাভের পরে। সত্যানন্দ যখন ইংরেজকে ঘোরতর যুদ্ধে পরাজিত করিলেন, সস্তানগণ র্তাহার মস্তকে রাজমুকুট বসাইতে চাহিলেন, বঙ্গদেশের সিংহাসনে আরোহণ করিবার জন্ত র্তাহাকে অনুরোধ করিলেন। কিন্তু সত্যানন্দ রাজগিরি চাহেন না,—স্বদেশের উদ্ধার চাহেন। আবার ওদিকে দেখুন, ঐ বীর ও ঋষি ম্যাটুমনি,—স্বদেশেরজন্ত সৰ্ব্বস্বাস্ত,নিৰ্ব্বাসিত, শীর্ণ ম্যাট্রসিনি অন্নাভাবে নিজের সামান্ত পরিচ্ছদ বন্ধক দিবার জন্য দোকানে ধীরে ধীরে গমন করিতেছেন ; আবার দেখুন, ঐ ঋষি স্বদেশপ্রেমিক সামান্ত সৈনিকপুরুষের ষ্ঠায় স্বন্ধে বন্দুক ধারণ করিয়া ক্লান্ত শীর্ণ দুৰ্ব্বল দেহে টলিতে টলিতে, সেনাদলের সহিত পদব্রজে স্বদেশ-উদ্ধারকল্পে যুদ্ধযাত্রা করিতেছেন, কিন্তু বহুবৎসর যুদশের চিন্তায়, রাত্রিজাগরণে, নিৰ্ব্বাসনে, কারাবাসে দেহ বড়ই অবসন্ন ; তাই ঐ দেখুন, ম্যাট্রসিনি মুড়ি হইয়। ধরাতলে পতিত হইলেন। সত্যই “মন্ত্রের সাধন না শরীরের পতন" আবার