পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা । ] দুর্ভিক্ষপীড়িত ভারতে। »ኟፃ মহারাজারও অনেকগুলি প্রাসাদ । প্রথমে যে প্রাসাদটি আমি দেখিলাম, উহ আধুনিক ধরণের ; য়ুরোপীয়-ধরণের বৈঠকখান-ঘর ; বড়-বড় আয়না ; রৌপ্যসামগ্রীতে ভারাক্রান্ত সজ্জা-টেবিল ; বিলিয়ার্ড, টেবিল --ভারতের একটি নগরে, এই সমস্ত অপ্রত্যাশিত দ্রব্যসামগ্ৰী দেখিয়া বিস্ময়বিহ্বল হইতে হয় । কিন্তু মহারাজা নিজে, তাহার পূর্বপুরুষদিগের পুরাতন আবাসগৃহটিই বেশী পছন্দ করেন । সেইখানেই তিনি আমাকে দর্শন দিবেন ; সেইখানেই এখন আমায় যাইতে হইবে । প্রথমেই, কতকগুলি ছোট-ছোট বাগানবাগিচা ও কতকগুলি নিস্তব্ধ স্বাড়িপথ, পার হইলাম। পরে, কোণালু খিলান ও তাম্রকপাটবিশিষ্ট একটা দ্বার পর হইয়াই হঠাৎ দেখি—সম্মুখে জনতা। জনকোলাহল ও কর্ণরোধী উৎকট বাদ্য । আমরা একটা বিশাল প্রাঙ্গণে আসিয়া পড়িয়াছি। এইখানে হস্তিগণের যুদ্ধত্রীড়া প্রদর্শিত হয়। ইহারই এক পার্শ্বে, শুভ্ৰমুখচ্ছবি পুরাতন প্রাসাদ পুর্ণমহিমায় বিরাজমান ; প্রাচীনধরণের খোদাইকাজে, নীলবর্ণ মৃন্ময় ঘটে, সোনালি স্বৰ্য্যের নক্সায় প্রাসাদের সন্মুখভাগ বিভূষিত। প্রাঙ্গণের অপর পার্শ্বে,—প্রাচীরের গায়ে সারি-সারি ঘর। সেইখানে শৃঙ্খলবদ্ধ হস্তিগণ, গা দোলাইতে দোলাইতে তৃণচৰ্ব্বণ করিতেছে। মধ্যস্থলে, “ তুীষণ সাজে সজ্জিত তিনচারিশত লোক --দেবোৎসব উপলক্ষে সমাগত পৰ্ব্বতবালী ভীল ; ইহারা যষ্টির দ্বারা পরস্পরকে আঘাত করিতে করিতে একপ্রকার যুদ্ধনৃত্য সৰ্ব্ব করিতেছে এবং সেই সঙ্গে সনাই, শিঙl, প্রকাণ্ড ঢাকঢোল ও কাস্তেকালের বাদ্য চলিতেছে। একটা ছাদের উপর, শতশত । রমণী উহাদের নৃত্য দেখিবার জন্য ঝুঁকিয়া রহিয়াছে। আহা ! যেন রূপের হাট বসিয়া গিয়াছে —মলমলবয়ে ঢাকা ক্সিনিল্যসুন্দর বক্ষোদেশ ! মহারাজ পৰ্য্যন্ত পৌছিতে, আরো কত সুড়িপথ, আরো কত প্রাঙ্গণ পার হইতে হইল —যেখানে, শাদা মাৰ্ব্বেলের খিলানবীথির মধ্যে, বড়-বড় নারাঙ্গিগাছে ফুল ফুটিয়া আছে এবং তাহার গন্ধে চতুৰ্দ্দিকু আমোদিত। কত প্রবেশ-দালান নাগ্রাজুতার ভারে ভারাক্রান্ত । প্রত্যেক কোণে, দীর্ঘ-অসিধারী কত লোক ! ইছ্রকলের মত কত সুড়িপথ ; কত পুরাতন অন্ধকেরে সিড়ি—যাহার ধাপগুল দুরারোহ ও পিছল ;–এরূপ খাড়া যে, উঠিতে ভয় হয় ; —উহা পুরু দেয়ালগাঁথুনির মধ্য হইতে কাটিয়া বাহির করা অথবা আদৎ প্রস্তরে গঠিত। ছায়ান্ধকারের মধ্যে যেখানে-সেখানে রক্ষিপুরুষ ; -যেখানে-সেখানে নাগ্রাজুতার ছড়াছড়ি। কুলুঙ্গির গভীর দেশ হইতে कउ দেবত আমাদিগকে নিরীক্ষণ করিতেছেন। কত শৈলমঞ্চের উপর দিয়া, উপযুপিরি বিন্যস্ত কত ঘরের উপর দিয়া, খুব উচ্চে উঠিয়া, অবশেষে একটা দ্বারদেশে আসিয়া উপনীত হইলাম। যে কৰ্ম্মচারী আমাকে পথ দেখাইয় লইয়া যাইতেছিল, সে এইখানে আসিয়া সসন্ত্রমে থামিল এবং মৃদ্ধস্বরে আমাকে বলিল—“এইখানে মহারাজ আছেন।” আমি একাকীই প্রবেশ করিলাম । মাৰ্ব্বেল-খিলানসমূহের উপর একটা শুভ্র