প্রথম সংখ্যা। ] রাজতপস্বিনী । . * গিয়া প্রায় প্রত্যহ দেখিতে পাইতাম, কিছুমা পূৰ্ব্বে হবিব্যান্ধগ্রহণ করিয়া রাণীমাত শীতনিবা রণ জন্য পিত্তলের আঙুটায় রক্ষিত অগ্নিতে হাত সেকিয়া লইতেছেন-পরিধানে সেই একমাত্র .থান । অবশু দিনের মধ্যে অনেকবার তাহা পরিবর্তিত হইত। সকল ঋতুতে তাহাতেই আপাদমস্তক আবৃত থাকিত ; কেবল কখন কখন দেখিতাম, মাথার চুল বাড়িলে দাসীরা তাহা কাটিয়া দিতেছে। রাজশাহীতে, বিশেষত পুটিয়ায় দেখিতাম, নাপিতানীর ক্ষৌরকার্য্য করে না। অতএব প্রয়োজনমতে নরসুন্দরের রাজাস্তঃপুরে প্রবেশলাভ করিতে পারে । নখ কাটিবার সময় মহারাণীমাত দীর্ঘ ঘোমটা টানিয়া বসিতেন। একবার নরসুন্দর অনুরুধানতাবশত নখ বেশী করিয়া কাটিয়া ফেলায় তাহার অঙ্গুলিতে রক্তপাত হইল। ভূতা ও দাসীরা ইহাতে কুপিত হইয়া উঠিলে, তুিনি অবগুণ্ঠনের ভিতর হইতে আমাদের দিকে সহস্তে চাহিয়া ইঙ্গিতে সকলকে নিবারণ করিলেন। দীনদুঃখী এবং এই পাপ তাপময় সংসারের সকল শ্রেণীর আর্তের প্রতি তার যে অনিৰ্ব্বচনীয় আড়ম্বরমাত্রশূন্ত করুণার ভাব প্রতিনিয়ত দেখিতাম, তাহাতে ইহাই বুঝিতাম যে, র্তার কাছে ছোট-বড় পাপিপুণ্যাত্মা সকলেই সন্তানতুল্য। কিন্তু পাপের প্রতি যে মৰ্ম্মাত্তিক ঘৃণা অনুদিন তিনি পোষণ করিতেন, তাহাও কার্য্যে প্রকাশ পাইত। একদিন প্রাণ্ডুকালে অন্দরে খবর আসিল, একটি স্ত্রীলোক তাহার কাছে নালিশ করিতে আসিয়াছে। উহার অসচ্চরিত্রতার কথা মহারাণীমাতার গোচর হইয়াছিল। দেখা করিলেন না, কিন্তু যাহাত্ত্বে সে স্ববিচার পুব, তাহার ব্যবস্থা ,করিয়া দুলেন। আপনার লোক কেহ, -আত্মীয়ই ইউক আর আশ্রিতই হউক,—কোন অন্যায় কি অযশের কাজ করিয়াছে শুনিবামাত্র তিনি কেবল অজস্র অশ্রুপুত করিতেন। অপরাধী- ইহাতেই শাসিত হইত, অন্ত কোনরূপ দণ্ডদান করিতে তিনি জানিতেন না। আমার পুঠিয়াবাসের প্রথমবৎসর বর্ষাকালে প্রবল বন্ত উপস্থিত । হওয়ায় গরিব রাষ্ট্ৰয়তের বড় ಫ್ಲ পড়ে। পুঠিয়ার রাজাদের • বিষয়-আশয় অংশমত অনেককাল ভাগ-বাটোয়ার হইয়া থাকিলেও সকল অংশের প্রজার এই সময়ে তাহার সাহায্য তুল্যরূপে লাভ করিয়াছিল। রাজবাটীর সম্মুখে স্ত্রীপুরুষের জন্ত অল্পবস্ত্র ও গবাদির জন্য খাদ্য বিতরণের যথেষ্ট আয়োজুন হইয়াছিল। র্তাহার বিশেষত্ব এই দেখিতাম যে, বাহিরবাটীর চীলের কোঠায় আশ্রয় লইয় খড়খড়ির পথে নিজে সমস্ত পৰ্য্যবেক্ষণ করিতেন। তখনকার করুণ মুখচ্ছবি আজও আমার মনে পড়িতেছে। ইহার কিছুকাল পরে একবার অগ্নিদাহে পুঠিয়ার প্রায় সকল লোকের খড়োবাড়ী পুড়িয়া যায়। লোকের কষ্টের কথা শুনিয়া তিনি তাহ মোচনের বন্দোবস্ত যথাসাধ্য করিয়াছিলেন, ইহা বলা বাহুল্য। কিন্তু সেই সঙ্গে দুইতিনদিন তাহাকে যে দয়ায় গলিয়া-গিয়৷ অশ্রুবিসর্জন করিতে দেখিয়াছিলাম, তাহাতেই আমার হৃদয় স্পর্শ করিয়াছিল। রাজবাটতে সৰ্ব্বদাই প্রায় পৰ্ব্বাদি উপলক্ষে সমরোহে ব্ৰাহ্মণ প্রভৃতি ভোজন করান হইত। ৰাজসামগ্ৰী চুরী যাওয়ার কথা শুনিলে হাসিয়া তিনি.(লিড়ন,
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।