চতুর্থ সংখ্যা । ] পত্রালী । Yly? ঐযুক্ত বাবু যোগেশচন্দ্র রায় সাহিত্য- যে অফুরন্ত, এ ধন যে অসীম ! কিন্তু বিনাজগতে স্থপরিচিত। দেশে সাধারণ-জ্ঞান- সাধনায় এই উপভোগ সম্ভবপর নহে। সেই বিস্তারসম্বন্ধে তাহার কোন পণ্ডিত বন্ধুর সহিত কথাবার্ত হয় ও উক্ত বন্ধু ‘পত্রচ্ছলে’ সাধারণ পাঠকপাঠিকার উপযোগী কতকগুলি প্রবন্ধ যোগেশবাবুকে লিখিয়া পাঠান। ‘তন্মধ্যে ২০খানি পত্র যথাসম্ভব সম্পূর্ণ করিয়া পত্রালী নামে প্রকাশিত হইয়াছে। পত্রচ্ছলে দার্শনিক গভীর তত্ত্ব প্রভৃতির আলোচনা বাংলাসাহিত্যে বোধ হয় এই নূতন এবং ইহা অনেক ভবিষ্য উদ্যমের পথপরিদর্শক হইবে বলিয়া আশা করিতে পারা যায়। যোগেশবাবুর সম্পাদিত প্রবন্ধগুলি সুরম্য ও সুপাঠ্য হইয়াছে । আলোচ্য বিষয়গুলি বৈজ্ঞানিক বটে, কিন্তু সেজন্য কোন পাঠকপীঠিকার বিজ্ঞানের বিভীষিকায় ভীত হইবার কারণ নাই। প্রবন্ধগুলি উপন্যাসের মত সরস ও চিত্তবিনোদক। প্রকৃতি সৌন্দর্য্যময়ী—তাহার সৌন্দর্যের তিনিই তুলনা । সেই সৌন্দর্য উপলব্ধি করিতে হইলে অনেক তপস্তা আবশ্লাক । প্রকৃতি রহস্তময়ী—গোলাপের দলের স্তায় কুরে স্তরে তাহার মাধুর্য্য লুক্কায়িত। বিনা আরাধনায় সেই রমণীয়তা অনুভূত হয় না । তুমিআমি একখানা প্রস্তরখণ্ড ঘৃণার সহিত দূরে নিক্ষেপ করিতে পাৰুি, কিন্তু অপর কোন সৌভাগ্যবান সেই প্রস্তরখণ্ড হইতে কত কালের সংগুপ্ত কত তথ্য আবিষ্কার করিবেন । আমাদের চতুর্দিকে কত বৃক্ষলতা, আকাশে অসংখ্য উারকারাজি প্রভৃতি বিদ্যমান থাকিয়া প্রকৃতির অশেষ ধন ও সৌন্দর্য্যের সাক্ষ্যপ্রদান করিতেছে—কিন্তু আমরা কয়জন এই বিপুল ঐশ্বর্য ও রূপ উপভোগে সমর্থ হই ? এ রূপ 9 সাধনা যাহার আছে, তিনিই যথার্থ চক্ষুষ্মান, অপর সকলে চক্ষু থাকিতেও অন্ধ। কর্ণ সকলেরই আছে বটে, কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গীতশ্রবণ কয়জনের অদৃষ্টে ঘটিয়া থাকে ? পঞ্চেস্ক্রিয় সকলেরই আছে, কিন্তু ‘প্রকৃতিবৈচিত্র্য’ প্ৰাণে প্রাণে অনুভব করিতে হইলে সেই সমস্ত ইঞ্জিয়ের যথার্থ বিকাশ আবশ্যক। প্রবন্ধলেখক ভাগ্যবান –তিনি প্রকৃতিবু রসাস্বাদে সমর্থ। তাই তিনি গ্রন্থের প্রারম্ভে লিখিয়াছেন— “শুনিবে কি, এখন আমি কি করিয়া দিন কাটাই ? আমি এখন সৌন্দৰ্য্যধ্যানে নিরস্তর ডুবির আছি। বিধাতা এত সৌন্দৰ্য্য আমাদের জন্ত চারিদিকে সাজাইয়া রাখিয়াছেন, পূৰ্ব্বে দেখিতে পাই নাই ! এমন সুন্দর জগৎ, এমন মনোমোহন বেশ পরিয়া আমাদের জন্ত প্রতীক্ষা করিতেছে! প্রকৃতি এখন মধুর হাসিতে মধুরতর বোধ হইতেছে!...স্বষ্টি কি প্রেমময় ।” • * * আজ বাসন্তী পূর্ণিমার রাত্রি—আকাশে চাদ হাসিতেছে । চাদের জ্যোৎস্নামাখা হাসিতে উদাস প্রাণে কত অতীতের স্মৃতি, কত ভবিষ্যতের আশা জাগাইয়া দিতেছে। পিতামহী পৌত্রপৌত্ৰাদিগকে প্রবুদ্ধ রাখিবার জন্য চাদসম্বন্ধে কত রূপকথা বলিতেছেন, আর বালকবালিকার হা করিয়া সেই সমস্ত কথা শ্রবণ করিতেছে। স্নেহময়ী জননী সন্তানকে নিদ্রিত করিবার জন্য চাদের মা বুড়ীকে বারবার আহবান করিতেছেন। কিন্তু “এ পাশে বসিয়া বুড়ী চিরদিনু হুতা কাটিতেছে, আদৌ নড়ৈ না, চর্কটিও নড়ে
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১৮৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।