ᎼᎼ8 আসিয়া পাক, করিয়া দিতেন । ইহার কেহ না থাকিলে স্বয়ং রন্ধন করিয়া লইতেন । ১২৮৯ সালের আশ্বিনমাসের দৈনন্দিন লিপি পড়িয়া দেখিতেছি, মাতা যখন অতিশয় অসুস্থ, তখন র্তাহার জ্যেষ্ঠতাতপত্নী উপযুপিরি দুইদিন আসার পর তৃতীয় দিনে তিনি বলিতেছেন যে, কাল আর তাকে আসিতে হইবে না, কাল ব্রত, নিজেই আলুনি পাক করিয়া লইবেন । ফলত এ সকল ব্যাপারে সুস্থ শরীরে যেরূপ কঠোর সংযম তিনি আচরণ করিতেন, পীড়াদির সময়ও তাহার অন্যথা হইত না । পূজাৰ্চনায় শাস্ত্রসন্মত সৰ্ব্ববিধ বশুদ্ধির দিকে তিনি সতর্ক দৃষ্টি রাথিতেন, নিজে পঞ্জিকা দেখিয়া প্রত্যহ সন্ধ্যাবন্দনাদি করিতেন এবং পুরোহিতের মন্ত্ৰোচ্চারণ অশুদ্ধ না হয়, তাহার ব্যবস্থায় কখন অমনোযোগী হইতেন না। আমার সমক্ষে একদিন, শ্ৰীযুক্ত কুঞ্জ ভাষ্কাকে বলিলেন যে, ভট্টাচাৰ্য্যমহা. শঙ্ককে বলিও ত যে, পূজা প্রভৃতি যেন ভাল করিয়া শিক্ষা করেন । ঐদিন গল্প করিয়াছিলেন, তাহার পিতৃদেবের জীবিতকালে একদিন শ্রাদ্ধোপলক্ষে তিনি মাতাকে বলিয়াছিলেন—“পুরোহিতের মন্ত্ৰোচ্চারণ শুদ্ধ হয় না। তুমি ত তাহার সঙ্গে কথা কও না । গিরিসিদ্ধাস্ত তোমার পুনরায় মন্ত্র বলাইবে, তখন তুমি বলিও।” তান্ত্রিক মতের মধুপানাদির অনুশাসন মহারাশমাতা মনে করিতেন না। একনি তীব্র বিষ্কপ করিয়া । ঐ মতকে “মুখাসিন্ধু বলিয়াছিলেন। হিস্থস্থানের প্রায়ু সমস্ত প্রধান তীর্থ স্থান তিনি দর্শন করিয়াছিলেন। প্রত্যেক ৰঙ্গদর্শন । ও-বাড়ী (পিত্রালয় ) হইতে জেঠাইমাতা তীর্থে গিয়া [ së 74, afwa ! তাহার নামে একএকটি ফল ত্যাগ করিতেন। তাহার নিজমুখে পরিত্যক্ত ফলের একটি তালিকা আমি একবার সংগ্ৰহ করিয়াছিলাম । নিজের ধৰ্ম্মবিশ্বাস কঠোর হিন্দুয়ানিসম্মত হইলেও তাঙ্কার মত সাধারণত বড় উদার ছিল। এদেশের সকল ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের খবরাখবর লইতেন এবং উপাসনাগৃহাদিনিৰ্ম্মাণ জল্প সাহায্যপ্রার্থনা করিলে কাহাকেও তিনি বিমুখ করিতেন না। ত্রিশবৎসর পূৰ্ব্বে পুটিয়ার ন্যান্থ হিন্দুসমাজে ব্রাহ্মধৰ্ম্ম প্রচার করিতে কেহ গেলে তাহার দাড়াইবার স্থান না হওয়ার কথা । কিন্তু মহারাণীমাত ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের একজন প্রচারককে রাজবাটীতে উপাসনাদি করিবাৰু অনুমতি দিয়াছিলেন এবং নিমন্ত্রণ করিয়া অতিশয় যত্নের সহিত র্তাহাকে আহারাদি করাইয়াছিলেন। প্রচারকমহাশয় নিরামিষভোজী জানিয়া স্বহস্তে তিনি কয়টি তরকারী প্রস্তুত করিয়াছিলেন । জয়পুরী ( সন্মোহরের ) শ্বেতপ্রস্তরের থালা ও তাঁহারই শতাধিক পাত্রে অভ্যাগত অতিথিমহাশয়ের জন্য ভোজনগৃহের অৰ্দ্ধেক স্থান সেদিন পূর্ণ হইয়াছিল, দীর্ঘকাল পরে তাহ আমার মনে পড়িতেছে । তিনি নিজহস্তে পাত্রগুলির নাগাল পাইতেছিলেন না। পাচক ব্রাহ্মণগণ তাহা ক্রমশ অগ্রসর করিয়া দিতেছিল। মহারাণীমাতার অতিথিসৎকার জাতিধৰ্ম্মনিৰ্ব্বিশেষে এইরূপেই সচরাচর সম্পন্ন হইত। এক দিকে স্বধৰ্ম্মে প্রগাঢ় নিষ্ঠার জন্ত তিনি যেমন হিন্দুসমাজের আদর্শ ছিলেন, অপর পক্ষে তাহার মহৎ চরিত্র ও উদারতার দরুণ অপরাপর সম্প্রদায়ের লোকেরাও তেমনি
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/২০১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।