রাইবনীদুর্গ। সপ্তম পরিচ্ছেদ । অশ্বারোহি-দুইজন অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী হইলে দাসমহাশয় চিনিলেন, অগ্রবর্তী স্বয়ং কুমার পদাঙ্কনারায়ণ। অপর ব্যক্তির যোদ্ধবেশ, তিনি সম্পূর্ণ অপরিচিত। উভয়ে আরো কাছে আসিলে দেখা গেল, যোদ্ধৃবেশীর শিরস্ত্রাণ মহারাষ্ট্রীয় । তা ছাড়া, তাহার সাজসজ্জায় এমন-একটা সাদাসিধে ভাব অথচ পারিপাট্য লক্ষিত হইতেছিল, যাহা কেবল শুদ্ধসত্ব ব্রাহ্মণেই সম্ভব । * x কুমার অগ্রসর হইয়া আনন্দে ও উৎসাহে বলিলেন, “দাদামহাশয়, তোমার জন্ত অতিথি ! এনেছি। মহাশয়, ইনিই আমার দাদামহাশয় ।” পদাঙ্কনারায়ণ এই বলিয়া অশ্ব হইতে অবতরণ করিলেন এবং স্বয়ং আগন্তুককে নামাইয়া-লইয়া চিরপরিচিতের মত তাহার দাদামহাশয়ের জিন্মা করিয়া দিলেন । ইহাতে এতটা সরল বালকত অথচ সমাগত অতিথির জষ্ঠ সন্ত্রমব্যস্ততা প্রকাশ পাইল যে, তাহারা উভয়ে মুগ্ধ হইয়া উচ্চহাস্ত করিলেন । চড়কের দোল তখনও পুরামাত্রায় চলিতেছিল। কুমার অপ্রতিভ হইয়া সেদিকে ছুটিয়া গেলেন। শিবাপ্ৰসন্ন আগন্তুককে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, “এই চৈত্রসংক্রান্তির মেলা আমার বংশের আদিপুরুষের স্থাপিত, জায় তাহারই প্রতিষ্ঠিত মহেশ্বর ও ভবানীর পূজা ইহার উপলক্ষ্য। মহাশয় অশ্বারোহী সৈন্ত লইয়া এদিকে আসিতেছেন শুনিয়া এই জনসমুদ্র চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু আপনি স্বয়ং ব্রাহ্মণ, হিন্দুকুলচূড়া মহারাজা শিবাজীর প্রতিনিধি, ধৰ্ম্মার্থ সমাগত হিন্দুদের প্রতি কেন অত্যাচার করিবেন ? ইহাই বুঝাইয়া আমি ইহাদের থামাইয়া রাখিয়াছি।” আগস্তুক প্রতিভরে দাসমহাশয়ের করস্পর্শ করিলেন । সকলকে শুনাইয়া উচ্চকণ্ঠে বলিলেন, “হিন্দুধৰ্ম্মের গৌরবরক্ষাই মহারাজা শিবাজী ও র্তার পরবর্তীদের উদ্দেশু। হিন্দুস্থানের এমনই ছদিন উপস্থিত যে, এ কথা লোকে সস্তুস বিশ্বাস করিতে চায় না। কিন্তু দেবাদিদেব মহাদেব আর মা ভবানী জানেন, ভিতরের কথা তাঁহাই ।” শুনিয়া জনমণ্ডলী নিৰ্ভয়ে “জয় শিবশভু" উচ্চারণ করিয়া উঠিল। স্বৰ্য্যাস্তের তখন বেশী দেরি ছিল না। শিবপ্রসন্ন তাহার অতিথিকে সমাগত বাগদী ও কৈবৰ্ত্তদের লাঠি ও তরবারি খেলা কিছুক্ষণ মাত্র দেখাইয়া মেলা ভাঙিবার ইঙ্গিত করিলেন । দেখিতে দেখিতে সে জনস্রোত মিলাইয়া গেল। 影 塗 কুমার এই অবসরে পুনরায় অশ্বারোহণ করিয়া শিবপ্রসরের সমীপবর্তী হইলেন। বলিলেন, "দাদামহাশয়, একটা কথা তোমার
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/২১৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।