পঞ্চম সংখ্যা । ] হইতে পড়া বেদবাক্য । “আর্য্যর মধ্য-এশিয়া হইতে ভারতে আসিয়াছেন”, “খৃষ্টজন্মের দুইহাজার বৎসর পূৰ্ব্বে বেদরচনা হইয়াছে”, এ সকল কথা আমরা বই হইতে পড়িয়াছি— বইয়ের অক্ষরগুলো কাটকুটহীন নিৰ্ব্বিকার— তাহারা শিশুবয়সে আমাদের উপরে সম্মোহন প্রয়ােগ করে—তাই আমাদের কাছে আজ এ সমস্ত কথা একেবারে দৈববাণীর মত । ছেলেদের প্রথম হইতেই জুনাইতে হইবে, এই সকল আনুমানিক কথা কতকগুলা যুক্তির উপর নির্ভর করুিতেছে। -সেই সকল যুক্তির মূল উপকরণগুলি যথাসম্ভব তাছাদের সম্মুখে ধরিয়া তাহীদের নিজেদের অনুমানশক্তির উদ্রেক করিতে হইবে। বইগুলা যে কি করিয়া তৈরি হইতে থাকে, তাহ প্রগ্রম হইতেই অল্লে-অল্পে ক্ৰমে-ক্রমে তাহারা নিজেদের মনের মধ্যে অনুভব করিতে থাকুক, তাহ হইলেই বইয়ের যথার্থ ফল তাহারা পাইবে, অথচ তাহার অন্ধশাসন হইতে মুক্তিলাভ করিতে পারিবে—এবং নিজের স্বাধীন উদ্যমের দ্বারা জ্ঞানলাভ করিবার যে স্বাভাবিক মানসিক শক্তি,তাহা ঘাড়ের উপরে-বাহির হইতে বোঝাচাপানো বিস্তার দ্বারায় আচ্ছন্ন ও অভিভূত হইবে না—বইগুলোর উপরে মনের কৰি অক্ষুণ্ণ থাকূিবে। বালক অন্নমাত্রও যেটুকু শিখিবে, তখনি তাহা প্রয়োগ করিতে শিখিবে। তাহা হইলে শিক্ষা তাহার উপরে চাপিয়া বসিবে না ; শিক্ষার উপর সে-ই চাপিয়া বসিবে। এ কথায় সায় দিয়া যাইতে অনেকে দ্বিধা করেন না, কিন্তু কাজে লাগাইবার বেল আপত্তি করেন। তাহারা মনে করেন, বালকদিগকে এমন अरुंग्रं★ । २९७ করিয়া শিক্ষা দেওয়া অসম্ভব। তাহারা যাহাঁকে • শিক্ষা বলেন, তাহা এমন করিয়া দেওয়া অসম্ভব বটে। র্তাহারা কতকগুলা বই ও কতকগুলা বিষয় বাধিয়া দেন –নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট প্রণালীতে তাহার পরীক্ষা লওয়া হয়—ইহাকেই তাহারা বিদ্যাশিক্ষা দেওয়া বলেন এবং যেখানে সেইরূপ শিক্ষা দেওয়া হয়, তাহাকেই বিদ্যালয় বলা হয়। বিদ্যাজিনিষটা যেন একটা স্বতন্ত্র পদার্থ ; শিশুর মন হইতে সেটাকে যেন তফাৎ করিয়া দেখিতে হয়—সেটা যেন বইয়ের পাতা এবং অক্ষরের সংখ্যা–তাঁহাতে ছাত্রের মন যদি পিষিয়া যায়, সে যদি পুথির গোলাম হয়, তাহার স্বাভাবিক বুদ্ধি যদি অভিভূত হইয়। পড়ে, সে যদি নিজের প্রাকৃতিক ক্ষমতাগুলি চালনা করিয়া জ্ঞান অধিকার করিবার শক্তি অনভ্যাস ও উৎপীড়নবশত চিরকালের মত হারায়, তবু ইহা বিদ্যা—কারণ ইহা এতটুকু ইতিহাসের অংশ, এতগুলি ভূগোলের পাতা, এত কটা অঙ্ক, এবং এতটাপরিমাণ বিএৈল, এ, রে, সি, এল, এ, ক্লে ! শিশুর মন যতটুকু শিক্ষার উপরে সম্পূর্ণ কর্তৃত্বলাভ করিতে পারে, অল্প হইলেও সেইটুকু শিক্ষাই শিক্ষা,-আর যাহা শিক্ষানাম ধরিয়া তাহার মনকে আচ্ছন্ন করিয়া দেয়, তাহাকে পড়ানোবলিতে পার, কিন্তু তাহ শেখানো নহে ৷ মানুষের পরে মানুষ অনেক অত্যাচার করিবে জানিয়াই বিধাতা তাঁহাকে শক্ত কঁরির গড়িয়াছেন, সেইজন্ত গুরুপাক অশ্বাস্ত খাই জঙ্গীর্ণে ভুগিয়াও মানুষ বাচিয়া থাকে—এবং শিশুকাল হইতে শিক্ষার দুৰ্ব্বিষহ উৎপীড়ন সদ্ধ করিয়াও সে খানিকটাপরিমাণে বিদ্যালভিও করে ও
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/২৩০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।