&ዓ8 বঙ্গদর্শন। [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, আশ্বিন। একখানি ইংরেজি উপন্যাস লিখিয়াছিলেন, wgzone on The Captive Lady নামক একখানি কাব্য ইংরেজিতে রচিয়াছিলেন ; কিন্তু চুইজনই অসামান্তধীশক্তিসম্পন্ন। দুইজনেই শীঘ্রই স্বস্ব ভ্রম বুঝিয়া স্বদেশীভাষাতে জীবন উৎসর্গ করিলেন। একজন বঙ্গভাষায় নব গদ্যে অমৃত ঢালিলেন, আর একজন নুতন পষ্ঠে অপূৰ্ব্ব মধুচক্র’ রচনা করিলেন। সাহেবিয়ানামুগ্ধ মধুসূদন প্রথমে— পরধনলোভে মত্ত, করেন ভ্রমণ পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচারপরে পাইলেন কালে মাতৃভাষারূপ খনি, পূর্ণ মণিজালে । বঙ্কিমবাবু বাল্যকালের পর আর “পরধনলোভে মত্ত” হন নাই, অল্পবয়সেই তিনি মাতৃভাষারূপ খনি হইতে মণিজাল আহরণ করিয়াছেন। আমি অন্যত্র বলিয়াছি, এখামেও আবার বলি, মাতৃভাষা জাতীয়হৃদয়ে প্রবেশ করিবার একমাত্র পথ, আপামর সাধারণের কর্ণস্বরূপ । মার কোলে বসিয়া মার মাইয়ের দুধ খাইতে খাইতে যে ভাষায় মার মধুমাখা কথা শুনিয়াছেন, জনকের মাঙ্গল্যগৰ্ত্তীর উপূদেশ যে ভাষায় শুনিয়াছেন, ভগ্নী কোমল-কমনীয় স্মিতসম্ভাষণে যে ভাষায় হৃদয়ে আলোক ছড়াইয়াছিল, প্রিয়ার প্রাণারাম প্রণয়পুষ্পাঞ্জলি যে ভাষায় দয়িতচরণে নিবেদিত, যন্ত্রণায় প্রাণ ছট্ফট্ করিলে যে ভাষায়- ভগবানকে ডাকি, ভবলীলার অবসানে গঙ্গাসৈকৃতশারী হইলে যে ভাষায় জীবনে-মরণে, বাল্যে-বীৰ্দ্ধক্যে, প্রণয়ে-শোকে, উৎসবে-বিপদে যে ভাষা প্রাণে প্ৰাণে মিশ্রিত—সেই মাতৃভাষা ; সেই চিরপ্রিয়,সেই চিরপূত, সেই চিরপূজনীয়, সেই নিরুপমা মাতৃভাষা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠভাষা আর কি হইতে পারে ? স্বদেশকে উন্নত করিবার, স্বদেশকে মাতাইবার এমন শক্তি আর কিসের আছে ? স্বদেশপ্রেমও যখন প্রতিভার সহিত মিশ্রিত হয়, তখন আপনা-আপনি মাতৃভাষার কোলে গড়াইয়া পড়ে এবং স্বজাতীয় সাধারণ লোকের গলা জড়াইয়া প্রাণ খুলিয়া আলাপ করে। বঙ্কিমবাবু তাহাই করিয়াছিলেন। বঙ্কিমবাবু কেবল উচ্চশ্রেণীর লোক লইয়া বিব্রত হন নাই। মুখ দীনদরিদ্র স্বদেশীয়দের জন্ত তিনি যেমন ভাবিয়াছিলেন,তিনি যেমন লিখিয়াছিলেন, তেমন আর কয়জন বাঙালী লিখিয়াছেন, কয়জন বাঙালী ভাবিয়াছেন। বঙ্কিমবাবু বেশ হৃদয়ঙ্গম করিয়াছিলেন যে, দীনদরিদ্র সাধারণ লোকের উন্নতি না হইলে স্বদেশের প্রকৃত উন্নতি কদাপি হইবে না। এ বিষয়ে তাহার অতি সারবান্ কথা উদ্ধৃত করিলাম— “প্রধান কথা এই যে, এক্ষণে আমাদিগের উচ্চশ্রেণী এবং নিম্নশ্রেণীর লোকের মধ্যে পরস্পর সহৃদয়ত কিছুমাত্র নাই। উচ্চশ্রেণীর কৃতবিস্ত লোকের মুর্থ দরিদ্রলোকদিগের কোন দুঃখে দুঃখী নহেন । * * এরূপ কোন দেশ হয় নাই যে, ইতরলোকে চিরকাল এক অবস্থায় রহিল, ভদ্রলোকদিগের অবিরত শ্ৰীবৃদ্ধি হইতে লাগিল। বরং যে যে সমাজের বিশেষ উন্নতি হইয়াছে, সেই সেই সমাজে উভয় সম্প্রদায় সমকক্ষ, বিমিশ্রিত এবং সহৃদয়তাসম্পন্ন। যতদিন
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/২৮১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।