যষ্ঠ সংখ্যা। ] ৰঙ্কিমচন্দ্র ও স্বদেশীভাব। ኟፃ¢ এই ভাব ঘটে নাই—যতদিন উভয়ে পার্থক্য ছিল, ততদিন উন্নতি ঘটে নাই। যখন উভয় সম্প্রদায়ের সামঞ্জস্ত হইল, সেইদিন হইতে শ্ৰীবৃদ্ধি-আরম্ভ। রোম, এথেন্স, ইংলণ্ড এবং আমেরিকা ইহার উদাহরণস্থল।” বঙ্কিমবাবু এখানে দেখাইলেন যে, ভদ্রলোক এবং ইতরলোকের মঙ্গল অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্বদ্ধ। কিন্তু তিনি কেবলমাত্র উভয়ের দৃঢ় সম্বন্ধ দেখাইয়া ক্ষান্ত থাকিতে পারেন নাই। স্বদেশের ইতরলোকের . অর্থাৎ অধিকাংশ লোকের অবস্থা কি, তাহা তিনি পৰ্য্যালোচনা করিয়াছেন ; পর্য্যালোচনা করিয়া তাহার স্বদেশপ্রেম ব্যথিত হইয়াছে, ব্যথিত হইয়া তাহার কোমলহৃদয় নিপীড়িত নিরক্ষর স্বদেশীগণের জন্ত দেখুেব শিক্ষিতলোকের নিকট করুণ-আবেদন করিয়াছে। সাধারণলোকের শোচনীয় অবস্থার উন্নতির জন্য বঙ্কিমবাবু যে পথ নির্দেশ করিয়াছেন, তাহা অনুসরণ করিয়া, সাধারণশিক্ষার নিশান ধরিয়া, যদি এক্ষণে আমরা পবিত্র অভিযানে নির্গত হই, তাহা হইলে আমরা নিশ্চয়ই মহৎ কাৰ্য্য সম্পাদন করিতে পারিব। কেন না, আজ সহসা মরা গাঙে বান ডাকিয়াছে, স্বদেশীভাবের জোয়ার আসিয়াছে । স্বদেশপ্রেমিক নাবিকগণ, . এখন একবার “হরি হরি” বোল দিয়া, একবার “বন্দে মাতরং” বলিয়া, নৌকা খুলিয়া দিন। জোয়ারের টানে সনূসৰু করিয়া দূরস্থ গ্রামে সত্বর পৌছিবেন। সেথানে° নিরক্ষর দীনদরিদ্র কৃষকগণ আপনাদের বোঝাই নৌকার প্রতীক্ষা করি“তেছে। তাহারা জ্ঞানের জন্ত ক্ষুধার্ত, আপনাদের প্রেমের জন্ত পিপাসু । সেখানে গিয়া গরিব স্বদেশীদিগকে ভ্রাতৃভাবে আলিঙ্গন করুন ; তাহাদের অশ্রুমোচন করুন ; তাঁহা- • দের সহস্রন্থঃখজর্জরিত প্রাণকে, তাহাদের নিত্য-আতঙ্ক-কম্পিত জীবনকে আঃ “ সিত করুন ; তাহাদিগকে এমন শিক্ষা ও জ্ঞান দিন, যাহাতে তাহারা দারিদ্র্যদুঃখ হইতে আপনিই নিস্কৃতিলাভ করিতে পারিবে। এমন জ্ঞান দিন, যাহাতে তাহারা নিজের স্বার্থ, নিজের স্বত্ব বুঝিতে পারিবে ; স্বদেশ যে কি, তাহা বুঝিতে পরিবে ; ভগবান মনুষ্যমাত্রকে যে অধিকার দিয়াছেন, সে অধিকার লাভ করিতে পারিবে । যে সকল দরিদ্র স্বদেশীব্যক্তি গ্রামে গ্রামে আপনাদিগকে প্রতীক্ষা করিতেছে এবং আমি এখানে যাহাদিগকে প্রধানত লক্ষ্য করিতেছি, বঙ্কিমবাবু তাহাদিগকে ভুলিয়া যান নাই । আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক কৃষক, তাহ বলা বাহুল্য। এই কৃষকসম্প্রদায়ের উপকার করিতে হইলে, পাছে এমন - কোন কথা বা কাজের অবতারণা করিতে হয়, যাহাতে ধন ও ক্ষমতাশালী জমিদারসম্প্রদায়ের অসন্তোষ হইতে পারে, বোধ হয় যেন এই আশঙ্কায় অধিকাংশ লেখক ও বক্তা এ বিষয়ে কিছু বলিতে চাহেন না। কিন্তু বঙ্কিমবাবুর হৃদয়ে খাটি স্বদেশীভাব ছিল, তাই তিনি জমিদারগণের অসঙ্গত অসন্তোষের আশঙ্কায় কর্তব্যসাধন হইতে নিরস্ত হন নাই। তাই তিনি বলিয়াছিলেন যে— o “আমরা জমীদারের দ্বেষক নহি, কোন জমীদারকর্তৃক আমাদিগের অনিষ্ট হয় নাই। বরং অনেক জমীদারকে আমরা বিশেষ
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/২৮২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।