శిషిa থাকিয়াও, যখন সেই সব বিগতবসন্ত উপবনগুলির বিষণ্ণতা মনে করি,—দুর্ভিক্ষের কথা মনে করি, তখন যে ভারত দুকূলবস্ত্রাবৃত দেয়ালের বাহিরে অবস্থিত, সেই ভারত আবার আমার মনে পড়িয়া যায়। সর্দারশ্রেণীর যে যুবকটি আমাকে এই প্রাসাদে আনিয়াছিলেন এবং যিনি মধুর-সৌজন্তসহকারে আমাকে সমস্ত দেখাইতেছিলেন, তিনি যেন পরীরাজ্যের লোক। র্তাহার শুভ্র পরিচ্ছদ ; মাথায় গোলাপী রেশমের টুপি ; কানে মুক্ত ; এবং গলায় দুই নহরের পান্নার কষ্ঠ । ভারতীয় ও পারস্যদেশীয় পুরাতন ক্ষুদ্রায়তন চিত্রপটে যেরূপ চেহারা সচরাচর দেখা যায়, তাহার মুখশ্ৰী সেইরূপ অপূৰ্ব্বসুন্দর। এমিই ত তাহার দীর্ঘায়ত চক্ষু, তাহাতে আবার কজ্জলরেখায় আরো দীর্ঘীকৃত হইয়াছে। নাক খুব সরু ; রেশমনিন্দী কালো গোপ ; গালের রক্ত সিন্দুরের মত লাল ;–স্বচ্ছ তৃণমণিসদৃশ ত্বকের উপর যেন একটা গোলাপীরঙের ছোপ দেওয়া । নগরের অপরপাশ্বে গোয়ালিয়ারের প্রাচীন রাজাদিগের সমাধিমন্দির ; এই অঞ্চলটি একেবারে নিস্তব্ধ। উদ্যানের মধ্যে এই সকল বেলেপাথরের কিংবা মাৰ্ব্বেলের মন্দিরগুলি অবস্থিত, উহার চূড়াগুলা প্রকাও ‘সাইপ্রেস্তরুর মত উৰ্দ্ধদিকে ক্রমস্বক্ষ । এখুন যতগুলি গগনস্পর্শ সমাধিমন্দির তছে, তন্মধ্যে যেটিতে ভূতপূৰ্ব্ব মহারাজ কিয়ৎ-বৎয়র হইতে চিরনিদ্রায় মগ্ন, সেই মন্দিরটি সৰ্ব্বাপেক্ষ জমকালো। তাহাতে বেলে ও মাৰ্ব্বেল পাথরের চমৎকার কাজ। এবং বঙ্গদর্শন । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, আশ্বিন । সেইখানে একটা কালে মাৰ্ব্বেলের বুষ বসিয়া আছে। ইহা ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্মের একটি পরমারাধ্য সাঙ্কেতিক চিন্তু। এই রাজকীয় সমাধিমন্দিরটির নিৰ্ম্মাণকাৰ্য্য শেষ না হইতে হইতেই, ইহারি মধ্যে পক্ষীরা ইহাকে আক্রমণ করিয়াছে। পেচক, ঘুঘু, টিয়াপাখী ঝাকেবাকে আসিয়া মন্দিরের চূড়ায় বাসা বাধিয়াছে। চূড়ায় উঠিবার সিঁড়ি সবুজ ও ধূসর পক্ষে সমাকীর্ণ। চূড়াটা খুব উচ্চ ; চুড়ার উপর হইতে—“চিকণে”র মত কাজকরা বাড়ী, প্রাসাদ, অবসাদ-ম্ৰিয়মাণ উদ্যান, পাথরের বড়বড়-মন্দিরচুড়া-সমেত সমস্ত নগরটাই দৃষ্টিগোচর হয়। মাথার উপর— আকাশে, কাকচিলের ঘোরপাক দিয়া উড়িতেছে। ভারতবর্ষে প্রায়ই যাহা দেখা যায়—নগরের আশপাশ ভগ্নাবশেষে আচ্ছন্ন ; পুরাতন পেয়ালিয়ার, পুরাতন বাসস্থান,— দুর্নিবার কালপ্রভাবে, খেয়ালের অবসানে, কিংবা যুদ্ধবিগ্রহের ভাগ্যবিপৰ্য্যয়ে পরিত্যক্ত হইয়াছে। যে সময়ে মহাভাগ হিন্দুজাতি বিদেশীয় দাসত্ব স্বীকার করে নাই, স্বাধীনভাবে জীবনযাত্রা নিৰ্ব্বাহ করিত, বীরগৰ্ব্বে গৰ্ব্বিত ছিল, লড়াঙ্ক ছিল—সেই বীরযুগের বিরাটু দুর্গসমূহ এ দেশের সর্বত্র যেরূপ দেখিতে পাওয়া যায়, সেইরূপ একটি দুর্গ দিগন্তের একটা কোণ জুড়িয়া রহিয়াছে। ঐ অদূরে, একশত গজের অধিক উচ্চ খাড়া শৈলের উপর, দেড়ক্রোশব্যাপী বগ্রপ্রাকার, ঘোরদর্শন প্রাসাদসৌধবিলী, রাজমুকুটের দ্যায় শোভা পাইতেছে। " . পরিশেষে, ভস্মের আভাবিশিষ্ট্র—পাংশুবর্ণ খুব পশ্চাগে যে স্থানট সৰ্ব্বাপেক্ষ পবিত্ত— পত্রের আভাবিশিষ্ট দুর দিগন্ত গড়াইতে
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/২৯৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।