eNOS, আহারে বসিয়া গেল। পঞ্জাবীরা উচ্ছিষ্ট বিচার করে না, আহার করিতে করিতে উচ্ছিষ্টহস্তেই ডাল-তরকারি-রুটি তুলিয়া লইতে লাগিল। একটি যুবতী বিধবা তাহার ক্ষুদ্র ঘটটি রাখিয়া কোন কথা না বলিয়া আমার বড় লোটাটি তুলিয়া লইল । আমি বিস্মিতভাবে মুখের দিকে তাকাইলে হাসিয়া হিন্দীতে বলিল, “তোমার লোটায় অনেক জল ধরে, তারি জন্য লইতেছি। তুমি ততক্ষণ আমাদের লোট লইয়া কাজ কর।” আমি বলিলাম, “স্বচ্ছন্দে আপনার লোটা লইতে পারেন, যে কয়দিন ইচ্ছ, আপনাদের নিকটে রাখুন।” তার পর, রমণী হাসিতে হাসিতে লোট লইয়া চলিয়া গেল। সেই উহাদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় । তাহার পর, দেবদর্শনের জন্য বাসা হইতে বাহির হইলেক্ট একটি মন্দিরের বাগানের প্রাচীর হইতে এক বৃহৎকায় বানর হপ, করিয়া আমাদের সম্মুখে আসিয়া পড়িল। এই ব্যাপারে সকলেই ছত্রভঙ্গ হইয়া পড়িল । আমি কিছু বেশি দূরে গিয়া পড়িয়াছিলাম, সুতরাং রমণীর আমাকে ঠাট্টা করিবার বিলক্ষণ অবসর পাইল। কিছুদূর অগ্রসর হইলেই তেঁতুলগাছের অগ্রভাগ হইতে কতকগুলি বানর শব্দ করিয়া উঠিল। এক রমণী বলিল, “মহারাজ, সাবধান।” আর একজন বলিল, “মহারাজ, পালাও।” অপর একজন বলিল, “এবার আর রক্ষা নাই ।” এইরূপে সারাপথ বানরের কিচমিচি ও সঙ্গে সঙ্গে পঞ্জাবী মহিলাদের ঠাট্টা শুনিতে শুনিতে আমি জালাতন হইয়া পড়িলাম। আমি অপরাঙ্গে বঙ্গদর্শন । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, কাৰ্ত্তিক আকাশে একটু মেঘের সঞ্চার দেখিয়াই ছাতা হাতে করিয়া গিয়াছিলাম। একটি দেবমন্দির হইতে দুরন্থ অপর দেবমন্দিরে যাইতে পথে বাগানের ধারে মাঠের মধ্যে বিলক্ষণ একপশলা বৃষ্টি আসিল । আমি যেই ছাতাটি খুলিয়াছি, অমুনি সকলে হাসিতে হাসিতে আসিয়া আমার ছাতার মধ্যে হাজির হইল । আমি সরিতে সরিতে ছাতার বাহিরে গিয়া পড়িলাম। অগত্য পরোপকারের ভাণ করিয়া ছাতাটি তাহীদের মস্তকে রাথিয়া সরিয়া দাড়াইলাম। আমাকে ভিজিতে দেখিয়া একটি প্রবীণ বিধবা ( বয়স ৪০ বৎসরের অধিক নহে, ইনিই এই তীর্থর্যাত্রিসম্প্রদায়ের মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষা অধিকবয়স্ক ) বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “তোরা বড় বেয়াদব, মহারাজকে ছষ্ঠতা দে, উনি ভিজিতেছেন।” তাহার এ কথায় বড় কর্ণপাত করিল না । যতক্ষণ বৃষ্টি হইল, ততক্ষণ তাহারা ছাতাটি লইয়া টানাটানি করিল, বৃষ্টি থামিয়া গেলে আমার হাতে দিল । আমি অগ্রে অগ্ৰে চলিলাম। আবার বানরের কথা, আবার হাসির তরঙ্গ বহিতে লাগিল । প্রধান প্রধান দেবমন্দিরগুলির দর্শন শেষ হইলে যখন বাসার দিকে ফিরিতেছি, তখন একটি কৌতুকাবহ ঘটনা ঘটিল। এক বাগানের নিকট পৌছিলে একদল বানর তাড়া খাইয়া সদলবলে উত্তরদিকে ছুটিতেছিল, আমরা তাহদের মাঝখানে পড়িয়া গেলাম। এই সময় ঐ রমণীগণের মধ্যে একটি যুবতীর দুই স্কন্ধে হঠাৎ, দুইটি বানরশিশু • লাফাইয়া পড়িল । সকলের গতিরোধ হইল। আমরা দেখিয়া অবাক । , রমণী নিৰ্ভীক, নড়িল-চড়িল না, বরং সঙ্গিনী- *
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৩৪৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।