সপ্তম সংখ্যা । ] রাইবনী দুর্গ। HIN তলগ করিয়াছিলেন । কৃষ্ণপ্রিয়া আর বড় বাটীর বাহির হয় না, অন্ত বালকবালিকার সঙ্গে খেলা করে না, –দিনদিন কেমন ম্রিয়মাণ হইতেছিল। দেখিয়া তিনি তার জন্ত নুতনরকম খেলার ব্যবস্থা করিলেন । বনকুঞ্জগ্রামের দীঘিগুলিতে বারমাস জলচর পক্ষার চরিতে আসিত, সে কথা পূৰ্ব্বে বলিয়াছি। মাত কন্যাকে সঙ্গে লইয়া প্রত্যহ তাঁহাদের জন্য দুইবেলা আহারযোজনা করিতেন। ক্রমশ ধান্ত ও অঞ্চলকণার লোভে তাহদের দূর হইতে দেখিতে পাইলে তাহারাও উল্লাসে তীরের নিতান্ত কাছে সাতার দিতে আসিত। এই খেলা কৃষ্ণপ্রিয়ার এরূপ ভাল লাগিল যে, কিছুদিনের অভ্যাসে যখন তখন সে একলাটি দীঘির ধীরে গিয়া বসিত, মার সঙ্গ দরকার হইত না । উমাপ্রসন্ন সৰ্ব্বসুলক্ষণা কন্যাঁর এই জীবসেবামুরাগ লক্ষ্য করিয়া মুগ্ধ হইলেন্স। তিনি নারায়ণী দেবীর আতিথ্যগ্রহণ করিয়া আত্মপরিচয় দিলেন এবং আগমনের উদ্দেশু গোপন করা বিহিত মনে করিলেন না । এখন উমাপ্রসন্ন দাসের যশঃপ্রভা সমগ্র উৎকলপ্রদেশে বিকীর্ণ হইয়াছিল। নারায়ণী দেবী তাহার দ্যায় অতিথি লাভ করিয়া পরম সৌভাগ্য জ্ঞান করিলেন এবং আত্মসঙ্কল্প বিধাতার অনুমোদিত নহে স্থির বুঝিয়া দাসমহাশয়ের প্রস্তাব অঙ্গীকার করিয়া লইলেন। এই বিবাহের পচিবৎসর পরে পদাঙ্কনারায়ণ ভূমিষ্ঠ হইল। শিবাপ্রসন্ন তখন দ্বাত্রিংশদুবর্ষীয় যুবাপুরুষ। ইহার কিছুকাল পরে শশাঙ্কনারায়ণ এবং উমাপ্রসন্ন প্রায় একইসময়ে স্বর্গারোঙ্কণ করিলেন । কাজেই "নিজ ও রাজসংসারের সকল ভার তাহার উপর পড়িয়ছিল। রাইবনীদুর্গের দ্যায় বিজনপ্রদেশে বৈধব্যাবস্থায় অপেক্ষাকৃত হীনভাবে বাস করিতে রাণী কৃষ্ণুপ্রিয়া আদৌ ইচ্ছুক ছিলেন ন । কিন্তু শিবাপ্ৰসন্নের পরামর্শে মাতা নারায়ণী দেবীর স্তায় কন্যাও শেষে বুঝিরাছিলেন, ভাল হউক মন্দ হউক, সেই তাহার সকল গৌরবের স্থান। প্রথম-প্রথম সৌদামিনী দেবী বৎসরের অধিকাংশ রাণীর অভিভাবিক|স্বরূপ রাইবনীতে থাকিতেন এবং সেই সময় হইতে পদাঙ্কনারায়ণ র্তাহার বড় অম্বুগত হইয়াছিল। এই সকল পরিবর্তনের মধ্যে কৃষ্ণপ্রিয়। বাল্যসখা রাধাচরণকে একেবারে ভুলে নাই। তাহাকে মনে করিয়া সময়ে-সময়ে দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিত। সে মনঃকষ্ট স্নেহশীল নিরুদ্ধেশ ভ্রাতার জন্ত কনিষ্ঠার অবশুসহনীয়-শোকোচ্ছাস-তুল্য, তাহার বেশী আর কিছু মহে । আর রাধাচরণ –তাহার" কথা পরে হইবে । ক্রমশ ।
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৩৬৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।