পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৩৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●ዓወ बछघस्तनि । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, কাৰ্ত্তিক । নাই, যত দোষ বঙ্গদেশের বায়ুর ও ভূমির— ও বিধাতার । - ইংরেজ বলিলেন—“বৎস, বুঝিবে , না কেন ? তুমি বুদ্ধিমান, কঠিন কথাও সহজে যুধিতে পার । এক্ষণে আর একটা কথা বুঝিয়া লও। যে ব্যক্তি প্রকৃতিগত্যা দুৰ্ব্বল, ভীরু ও কাপুরুষ, পরাধীনতা স্বীকার করিয়া শাস্তভাবে তাহার জীবনধারণ করা উচিত ; শাসনকৰ্ত্তারা কৃপাপরবশ হইয় তাহাকে যেটুকু অনুগ্রহ করেন, তজ্জন্তই তাহার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত । শাসনকৰ্ত্তার কার্য্যে তাহার হৃদয়ে বিশেষ ব্যথা লাগিলেও তাহার আর্তনাদ করা অসঙ্গত। কেন না, সহিষ্ণুতাই অধীন ব্যক্তির প্রধান বা একমাত্র ধৰ্ম্ম ।" বাঙালী বলিলেন, “প্রভো, নিশ্চয়ই— সকলই আপনার কৃপা । সাফ, বুঝিতেছি,আমরা অতি অধম, অতি দুৰ্ব্বল, অতি কাপুরুষ—চিরকাল, চিরকাল। এক্ষণে আপনার ভবসাগরে আমাদিগের তরণীর কর্ণধার। এখন আমাদের একমাত্র ভরসা ঐ গৌরাঙ্গের শ্ৰীচরণ।” এই বলিয়া বাঙালী নিজের নৌকার চাল ছাড়িয়া নিদ্রিত হইল। তরণী কোন দিকে বাইবে, কোন দিকে যাওয়া উচিত, তাহ লক্ষ্য করিল না, এই নিদ্রা—মোহ, আত্মসন্মানবিসর্জন, আত্মাবমানন, নিশ্চেষ্টতা। নৌকায় দুইএকটা ধাক লাগিল। বাঙালীর ঘুম ভাঙিল। বাঙালী দেখিল, নৌক৷ ক্রমেই অধঃপাতের দিকে যাইতেছে। নৌকাতে জল উঠিতেছে। কেহ কেহ বলিলেন—“নিজের নৌকা • একেৰায়ে অস্তের হাতে সঁপিয়া-দিয়া নিজে স্থানে নিৰ্ব্বোধের কাজ। ইংরেজমানির মতলব ভাল হইলেও এ মাঝি এ গাঙের পানি চেনে না, চড়া ও ঘুণো জানে না ; কি জানি, নৌকা যদি ডুবে যায়। বাঙালি, তুমি ইংরেজমাঝির পাশে বোস, তাকে মাঝে মাঝে সম্ঝাইয়া দাও । ইংরেজ তোমাকে যত অকৰ্ম্মণ্য, ভীরু, তুৰ্ব্বল ও কাপুরুষ ভেবেছেন, তুমি তত অকৰ্ম্মণ্য-অপদার্থ নহ। তোমাদের দেশে পুৰ্ব্বে বীরপুরুষ জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন । দেশবিদেশে তাহাদের জয়পতাকা উড়িয়ছিলু। এই দেশ, এই জলবায়ুতে, যখন তাছাদের বীরত্ব যুঁটিয়াছিল, তোমাদিগের বীরত্ব ফুটিবে না কেন ?” বাঙালী বলিল—“বলেন কি ? ? অামাদিগেরই পুৰ্ব্বপুরুষগণ এককালে প্রবলপরা: ক্রান্ত স্বাধীনজাতি ছিলেন?” উত্তর-—“ই, কেবল স্বাধীন নহেন ; তাহাদিগের বিজয়বাহিনী গিরিশৃঙ্গনি:স্বতনদীবৎ দূরে, বহুদূরে ধাবমান হইয়া, নানা দেশ, নান: জনপদ বঙ্গীয় ভূপতির শাসনাধীন করিয়া, শত্রুদিগের দুর্গশিখরে, রাজপ্রাসাদশিরে বঙ্গীয়বিজয়বৈজয়ন্তী স্থাপিত করিয়াছিল।” মোহাভিভূত মুমুধু বাঙালী এই সঞ্জীবনী বাৰ্ত্ত শ্রবণ করিয়া নবজীবন লাভ করিল । “স্থানীয়-জলবায়ু-জনিত অনিবাৰ্য্য হুৰ্মলতাভীরুতা”র একটা উপকথা যাহা ইংরেজমুখে শুনিয়া বিশ্বাস করিয়াছিল, এবং বিশ্বাস করিয়া হাত-পা ছাড়িয়া-দিয়া অসাড় হইয় গুইয়া পড়িয়াছিল, এক্ষণে সেই উপকথা সে অবিশ্বাস করিল ; ব্যাধিযুক্ত রোগীর স্কার কেবল উঠিয়া বসিল, তাহা নহে, উল্লাসে লাফাইয়া উঠিল । এবং অতীতকালের মুদূরবর্তী দেশ হইতে আগত একটা তুমুল জয়জয়কারশন্স শুনিভে পাইল ।