ততঃ কিম । 8es তাইার বিরাম নাই। কিন্তু প্রত্যেক মানুষের ংসারলীলার যখন শেষ আছে, তখন মানুষ যদি একটা সম্পূর্ণতার উপলব্ধিকে না জানিয়া প্রস্থান করে, তবে তাহার কি হইল ? বাহিরে কিছুর শেষ নাই, কেবলি একটা হইতে আর একটা বাড়িয়াই চলিয়াছে। এই চিরচলমান বহিঃসংসারের দোলায় দুলিয়া আমরা মানুষ হইয়াছি—আমার পক্ষে একদিন সে দোলার কাজ ফুরাইলেও কোনোদিন একেবারে তাহার কাজ শেষ হুইবে না। .এই কথা মনে করিয়া, আমার যতটুকু সাধ্য, এই প্রবাহের পথকে আগে ঠেলিয়া দিতে হইবে । ইহার জ্ঞানের ভাণ্ডারে আমার সাধ্যমত জ্ঞান, ইহার কৰ্ম্মের চক্রে আমার সাধ্যমত বেগ সঞ্চার করিয়া দিতে হইবে । কিন্তু,তাই বলিয়া বাহিরের এই অশেষের মধ্যে আমিসুদ্ধ ভাসিয়া গেলে নষ্ট হইতে হইবে । * অন্তরের মধ্যে একটা সমাধার পন্থা আছে। বাহিরে উপকরণের অন্ত নাই, কিন্তু অন্তরে সন্তোষ আছে ; বাহিরে দুঃখবেদনার অস্ত নাই, কিন্তু অস্তরে ধৈর্য্য আছে ; বাহিরে প্রতিকূলতার অন্ত নাই, কিন্তু অন্তরে ক্ষমা আছে ; বাহিরে লোকের সহিত সম্বন্ধভাবের অন্ত নাই, কিন্তু অস্তরে প্রেম আছে ; বাহিরে সংসারের অন্ত নাই, কিন্তু আত্মাতে আত্মা সম্পূর্ণ। একদিকের অশেষের দ্বারাতেই আর একদিকের অখণ্ডতার উপলব্ধি পরিপূর্ণ হইয়া থাকে। গতির দ্বারাতেই স্থিতিকে মাপিয়া লইতে হয়। এইঞ্জন্ত ভারতবর্ষ মানুষের জীবনকে যেরূপে বিভক্ত করিয়াছিলেন, কৰ্ম্ম তাহার মাঝখানে ও মুক্তি তাহার শেষে। দিন যেমন চার স্বাভাবিক অংশে বিভক্ত— Gł পূৰ্ব্বাকু, মধ্যাহ্ব,অপরাহ্ল এবং সায়াহ,ভারতবর্ষ জীবনকে সেইরূপ চারি আশ্রমে ভাগ করিয়াছিল । এই বিভাগ স্বভাবকে অনুসরণ করিয়াই হইয়াছিল। আলোক ও উত্তাপের ক্রমশ বৃদ্ধি এবং ক্রমশ হ্রাস যেমন দিনের অাছে, তেমনি মানুষেরও ইন্দ্রিয়শক্তির ক্রমশ উন্নতি এবং ক্রমশ অবনতি আছে। সেই স্বাভাবিক ক্রমকে অবলম্বন করিয়া ভারতবর্ষ জীবনের আরম্ভ হইতে জীবনান্ত পৰ্য্যস্ত একটি অখও তাৎপৰ্য্যকে বহন•করিয়া লইয়া গেছে। প্রথমে শিক্ষা, তাহার পরে সংসার, তাহার পরে বন্ধনগুলিকে শিথিল কর, তাহার পরে মুক্তি ও মৃত্যুর মধ্যে প্রবেশ ;–ব্রহ্মচৰ্য্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও প্রব্রজ্য। e আধুনিককালে আমরা জীবনের সঙ্গে মৃত্যুর একটা বিরোধ অনুভব করি। মৃত্যু যে জীবনের পরিণাম, তাহা নহে, মৃত্যু যেন জীবনের শত্রু । জীবনের পর্বে পর্কে আমরা অক্ষমভাবে মৃত্যুর সঙ্গে ঝগড়া করিয়া চলিতে থাকি। যৌবন চলিয়া গেলেও আমরা যৌবনকে টানাটানি করিয়া রাখিতে চাই। ভোগের আগুন নিবিয়া আসিতে থাকিলেওঁ আমরা নানাপ্রকার কাঠখড় জোগাইয়া তাহাকে জাগাইয়। রাখিতে চাই। ইঞ্জিয়শক্তির হ্রাস হইয়া আসিলেও আমরা প্রাণপণে কাজ করিতে চেষ্টা করি । মুষ্টি যখন স্বভাবতই শিথিল হইয়া মাসে, তখনে আমরা কোনোমতেই কোনে কিছুর দখল ছাড়িতে চাই না। প্রভাত ও মধ্যাহূ ছাড়া আমুদের জীবনের আর কোনো অংশকে আমর কিছুতেই স্বীকার করতে ইচ্ছা করি না t অবশেষে যখন আমাদের চেয়ে প্রবলতর শক্তি
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪১৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।