পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৰম সংখ্যা । ] সৌন্দৰ্যবোধ। 89S তাহারা আজ মানুষ হইয়া উঠিয়াছে,—যে কেবল ইন্দ্রিয়েরই দোহাই মানিত, সে আজ প্রেমের ৰশ মানিয়াছে। আজ ক্ষুধা লাগিলেও আমরা পশুর মত রাক্ষসের মত যেমন-তেমন করিয়া খাইতে বসিতে পারি না—শোভনতাটুকু রক্ষা না করিলে আমাদের খাইবার প্রবৃত্তিই চলিয়া যায়। অতএব এখন আমাদের খাইযার প্রবৃত্তিই একমাত্র নহে, শোভনতা তাহাকে নরম করিয়া আনিয়াছে। আমরা ছেলেকে লজ্জা দিয়া বলি, ছিছি অমন লোভার মত খাইতে আছে । সেরূপ থাওয়া দেখিতে কুন্ত্রী। সৌন্দর্য্য আমাদের প্রবৃত্তিকে সংযত করিয়া আনিয়াছে । জগতের সঙ্গে আমাদের কেবলমাত্র প্রয়োজনের সম্বন্ধ না রাখিয়া আনন্দের সম্বন্ধ পাতাইয়াছে। প্রয়োজনের সম্বন্ধে আমাদের দৈন্ত, আমাদের দাসত্ব আনন্দের সম্বন্ধেই আমাদের মুক্তি । তবেষ্ট দেখা যাইতেছে, পরিণামে সৌন্দৰ্য্য মানুষকে সংযমের দিকেই টানিতেছে। মানুষকে সে এমন একটি অমৃত দিতেছে, যাহা পান করিয়া মানুষ ক্ষুধার রূঢ়তাকে দিনে দিনে জয় করিতেছে। অসংযমকে অমঙ্গল বলিয়া পরিত্যাগ করিতে যাহার মনে বিদ্রোহ উপস্থিত হয়, সে তাহাকে অসুন্দর বলিয়া ইচ্ছা করিয়া ত্যাগ করিতে চাহিতেছে। সৌন্দৰ্য যেমন আমাদিগকে ক্রমে ক্রমে শোভনতার দিকে, সংযমের দিকে আকর্ষণ করিয়া আনিতেছে, সংযমও তেমনি আমাদের সৌন্দর্ঘ্যভোগের গভীরতা বাড়াইয়া দিতেছে। স্তদ্ধভূর্বে নিবিষ্ট হইতে না জানিলে আমরা সৌন্দর্য্যের মৰ্ম্মস্থান হষ্টতে রস উদ্ধার করিতে পারি না। একপরায়ণী সতী স্ত্রীই ত প্রেমের २ যথার্থ সৌন্দৰ্য উপলব্ধি করিতে পারে, স্বৈরিণী ত পারে না । সতীত্ব সেই চাঞ্চল্যবিহীন সংযম, যাহার দ্বারা গভীরভাবে প্রেমের নিগুঢ়রস লাভ করা সম্ভব হয়। আমাদের সৌন্দৰ্য্যপ্রিয়তার মধ্যেও যদি সেই সতীত্বের সংযম না থাকে, তবে কি হয় ? সে কেবলই সোদর্ঘ্যের বাহিরে বাহিরে চঞ্চল হইয়া ঘুরিয়া বেড়ায় ; মত্ততাকেই আনন্দ বলিয়া ভুল কবে ; যাহাকে পাইলে সে একেবারে সব ছাড়িয়া স্থির হইয়া বসিতে পারিত, তাহাকে পায় না । যথার্থ সৌন্দৰ্য্য সমাহিত সাধকের কাছেই প্রত্যক্ষ, লোলুপ ভোগীর কাছে নহে। যে লোক পেটুক, সে ভোজনের রসজ্ঞ হইতে পারে না । পোষ্যরাজ ঋষিকুমার উতঙ্ককে কহিলেন, যাও অন্তঃপুরে যাও, সেখানে মহিষীকে দেখিতে পাইবে। উতঙ্ক অন্তঃপুরে গেলেন, কিন্তু মহিষীকে দেখিতে পাইলেন না । অশুচি হইয় কেহ সতীকে দেখিতে পাইত না—উতঙ্ক তখন অশুচি ছিলেন। 鬱 বিশ্বের সমস্ত সৌন্দর্যের, সমস্ত মহিমুর অন্তঃপুরে যে সতী, যে লক্ষ্মী বিরাজ করিতেছেন, তিনিও আমাদের সমুথেই আছেন, কিন্তু শুচি ন হইলে দেখিতে পাইব না। যখন বিলাসে হাবুডুবু থাই, ভোগের নেশায় মাতিয়া বেড়াই, তখন বিশ্বজগতের আলোকবসন সতীলক্ষ্মী আমাদের দৃষ্টি হইতে অন্তধান করেন। এ কথা ধৰ্ম্মনীতিপ্রচারের দিক্ হইতে বলিতেছি না ; আনন্দের দিক্ হইতে— যাহাকে ইংরেজীতে আর্ট বলে—তাহারই তরফ হইতে বলিতেছি । আমাদের শাস্ত্রেও বলে, কেবল ধৰ্ম্মের ভুন্তে নয়, সুখের জন্যও সংযত হইবে । সুখার্থ সংযতো ভবেৎ। অর্থাৎ