নবম সংখ্যা । ] সৌন্দৰ্য্যবোধ । 8లిరి আপাতত যেটুকু উন্নতি দেখা যাইতেছে, তাহার • মূল কারণ নিজেদের মধ্যে ঐক্য, অর্থাৎ দলের মধ্যে পরস্পরের প্রতি ধৰ্ম্মরক্ষা ; আবার এই উন্নতি যখন নষ্ট হইবে, তখন এই ঐক্যকেই নষ্ট হইবার কারণ বলিয়া বসিব না, তখন বলিব অন্তের প্রতি অধৰ্ম্মাচরণই তাহদের পতনের কারণ। যদি দেখি একই লোক বাণিজ্যে প্রচুর টাকা করিয়া ভোগে তাহ উড়াইয়া দিয়াছেন, তবে এ কথা বলিব না যে, যাহার টাকা নষ্ট করিতে পারে, টাকা-উপাজর্জনের পন্থা তাহারাই জানে ; বরং এই কথাই বলিব টাকা রোজগার' করিবার ব্যাপারে এই লোকটি হিসাবী ছিলেন, সেখানে তাহার সংঘম ও বিবেচনাশক্তি সাধারণ লোকের চেয়ে অনেক বেশি ছিল ; আর টাকা উড়াইবার বেলা তাহার উড়াইবার কোক হিসাবের বুদ্ধিকে ছাড়াইয়া গিয়াছে। কলাবান্ গুণীরাও যেখানে বস্তুত গুণী, সেখানে তাহারা তপস্বী ; সেখানে যথেচ্ছাচার চলিতে পারে না ; সেখানে চিত্তের সাধনা ও ংযম আছেই। অল্প লোকই এমন পুরাপুরি বলিষ্ঠ যে, তাহাদের ধৰ্ম্মবোধকে যোলোআন কাজে লাগাইতে পারেন। কিছু-নাকিছু ভ্ৰষ্টতা আসিয়া পড়ে। কারণ, আমরা সকলেই হীনতা . হইতে পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হইয়া চলিয়াছি, চরমে আসিয়া দাড়াই নাই। যে-কোনো স্থায়ী বড়জিনিষ গড়িয়া তুলি, তাহা আমাদের অন্তরের ধৰ্ম্মবুদ্ধির সুাহায্যেই ঘটে, ভ্রষ্টতার সাহায্যে নহে। গুণী ব্যক্তিরাও যেখানে তাহাদের কলারচনা স্থাপন করিয়াছেন, সেখানে তাহাদের কিন্তু জীবনে আমরা চরিত্রই দেখাইয়াছেন ; যেখানে তাহদের জীবনকে নষ্ট করিয়াছেন, সেখানে চরিত্রের অভাব প্রকাশ পাইয়াছে। সেখানে, তাহদের মনের ভিতরে ধর্মের একটি সুন্দর আদর্শ আছে, রিপুর টানে তাহার বিরুদ্ধে গিয়া পীড়িত হইয়াছেন। গড়িয়া তুলিতে সংযম দরকার হয়, নষ্ট করিতে অসংযম। ধারণা করিতে সংযম চাই, আর মিথ্যা বুঝিতেই অসংযম। এখানে কথা উঠিবে, তবেই ত একই মানুষের মধ্যে সৌন্দৰ্য্যবিকাশের ক্ষমতা ও চরিত্রের অসংযম একত্রেই থাকিতে পারে ; তবে ত দেখি, বাঘে-গোরুতে এক ঘাটেই জল খায়। o বাঘে-গোরুতে এক ঘাটে জল খায় না বটে, কিন্তু সে কখন ? যখন বাঘও পূর্ণত পাইয়া উঠিয়াছে, গোরু ও পুর্ণগোরু হইয়াছে। শিশু-অবস্থায় উভয়ে এক সঙ্গে খেলা করিতেও পারে-বড় হইলে বাঘও বাপ দিয়া • পড়ে, গোরুও দৌড় দিতে চেষ্টা করে। • তেমুনি সৌন্দর্য্যবোধের যথার্থ পরিণতভাব কখনই প্রবৃত্তির বিক্ষোভ, চিত্তের অসংযমের সঙ্গে একক্ষেত্রে টিকিতে পারে না। পরস্পর পরস্পরের বিরোধী। যদি বল কেন বিবুেধ তাহার কারণ আছে। বিশ্বামিত্র বিধাতার সঙ্গে আড়াআড়ি করিয়া একটা জগৎ স্বষ্টি করিয়াছিলেন। সেটা তাহার ক্রোধের স্মৃষ্টি, দম্ভের স্বষ্টি,— সুতরাং সেই স্বই বিধাতার জগতের সঙ্গে মিশ খাইল না—তাহাকে স্পৰ্দ্ধা করিয়া আঘাত করিতে লাগিল—খাপছাড়া স্বষ্টিছাড়া হইয়া রছিল, চরাচরের সঙ্গে স্বর মিলাইতে পারিল ।
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪৪৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।