নবম সংখ্যা । ] সৌন্দৰ্য্যবোধ। દબ লের অমুকুল এবং নিখিল তাহার অনুকূল । আমাদের পুরাণে লক্ষ্মী কেবল সৌন্দৰ্ঘ্য এবং ঐশ্বৰ্য্যের দেবী নহেন, তিনি মঙ্গলের দেবী। সৌন্দৰ্য্যমূৰ্ত্তিই মঙ্গলের পূর্ণমূৰ্ত্তি এবং মঙ্গলমূৰ্ত্তিই সৌন্দর্য্যের পূর্ণস্বরূপ। সৌন্দয্যে ও মঙ্গলে যে জায়গায় মিল আছে. সে জায়গাটা বিচার করিয়া দেখা যাক । আমরা প্রথমেই দেখাষ্টয়াছি, সৌন্দৰ্য্য প্রয়োজনের বাড়া । এইজন্য তাঙ্গকে আমরা " ঐশ্বয বলিয়া মানি। এইজন্য তাহ আমাদিগকে নিছক স্বার্থসাধনের দারিদ্র্য হুইতে প্রেমের মধ্যে মুক্তি দেয় । মঙ্গলের মধ্যেও আমরা সেই ঐশ্বযর্ণ দেখি । যখন দেখি, কোনো বীরপুরুষ ধর্মের জন্য স্বার্থ ছাড়িয়াছেন, প্রাণ দিয়াছেন, তখন এমন একটা আশ্চর্য পদার্থ আমাদের চোখে পড়ে, যাহা আমাদের সুখতঃখের চেয়ে বেশি, আমাদের স্বার্থের চেয়ে বড়, আমাদের প্রাণের চেয়ে মহৎ । মঙ্গল নিজের এই ঐশ্বয্যের জোরে ক্ষতি ও ক্লেশকে ক্ষতি ও ক্লেশ বলিয়া গণ্যই করে না। স্বার্থের ক্ষতিতে তাহার ক্ষতি হইবার জো নাই। এইজন্য সৌন্দৰ্য যেমন আমাদিগকে স্বেচ্ছাকৃত ত্যাগে প্রবৃত্ত করে, মঙ্গলও সেইরূপ করে । সৌন্দয্য জগদ্ব্যাপারের মধ্যে ঈশ্বরের ঐশ্বৰ্য্যকে প্রকাশ করে, মঙ্গলও মানুষের জীবনের মধ্যে তাহাই করিয়া থাকে ; মঙ্গল, সৌন্দর্যকে শুধু চোখের দেখা নয়, শুধু বুদ্ধির বোঝা নয়, তুহিকে আরো ব্যাপক, আরো গভীর করিয়া মানুষের কাছে আনিয়া দিয়াছে ; তাহা ঈশ্বরের সামগ্রীকে অত্যন্তই মানুষের সামগ্ৰী করিয়া তুলিয়াছে। বস্তুত মঙ্গল মঙ্গুষের নিকটবৰ্ত্তী অন্তরতর সৌন্দৰ্য্য ; এইজন্যই তাঁহাকে আমরা অনেকসময় সহজে স্ননার বলিয়া বুঝিতে পারি না—কিন্তু যখন বুঝি, তখন আমাদের প্রাণ বর্ষার নদীর মত ভরিয়া উঠে। তথন আমরা তাহার চেয়ে রমণীয় আর কিছুই দেখি না। --> ফুলপাত, প্রদীপের মালা এবং সোনারূপার থালি দিয়া যদি ভোজের জায়গা সাজাইতে পার, সে ত ভালই, কিন্তু নিমন্ত্রিত যদি যজ্ঞকৰ্ত্তার কাছ হইতে সমাদর না পায়,— হৃদ্যতা না পঞ্চয়, তবে এ সমস্ত ঐশ্বন ও সৌন্দয্য তাহার কাছে রোচে না, কারণ এই হৃদ্যতাই অস্তরের ঐশ্বর্য্য, অন্তরের প্রাচুর্য্য। হৃদ্যতার মিষ্টহাস্য, মিষ্টবাক্য, মিষ্টব্যবহার এমন সুন্দর যে, তাহা কলার পাতাকেও সোনার থালার চেয়ে বেশি মূল্য দেয়। সকলের কাছেই ীৈ দেয়, এ কথাও বলিতে পারি না । বহু আড়স্বরের ভোজে অপমানস্বীকার করিয়াও প্রবেশ করিতে প্রস্তুত, এমন লোকও অনেক দেখা যায়। কেন দেখা যায় ? কারণ; ভোজের বড় তাৎপৰ্য্য, বৃহৎ সৌন্দর্য্য সে বোঝে না । বস্তুত থাওয়াটা বা সজ্জাটাই ড়োজের প্রধান অঙ্গ নহে। কুঁড়ির পাপড়িগুলি যেমন নিজের মধ্যেই কুঞ্চিত, তেমনি স্বার্থরত মানুষের শক্তি নিজের দিকেই চিরদিন সঙ্কুচিত, একদিন তাহার বাধন ঢিলা করিয়া তাহাকে পরাভিমুখ করিবামাত্র ফোটফুলের মত বিশ্বের দিকে, তাহার মিলনমাধুর্য্যময় অতি সুন্দর বিস্তার ঘটে— যজ্ঞের সেই ভিতরদিকটার গভীরতর মঙ্গলসৌন্দৰ্য্য যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ দেখিতে পায় না, তাহার কাছে ভোজ্যপেয়ের প্রাচুর্য্য ও সাজসজ্জার আড়ম্বর
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪৪৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।