নবম সংখ্যা। ] সৌন্দর্য্যবোধ । * 863. চেষ্টাই প্রাণিসমাজের একমাত্র চেষ্টা নয়। দল বাধিবার, পরস্পরকে সাহায্য করিবার ইচ্ছা, ঠেলিয়া উঠিবার চেষ্টার চেয়ে অল্প প্রবল নহে ; বস্তুত নিজের বাসনাকে খৰ্ব্ব করিয়াও পরম্পরকে সাহায্য করিবার ইচ্ছাই প্রাণীদের মধ্যে উন্নতির প্রধান উপায় হইয়াছে। তবেই দেখিতেছি, একদিকে প্রত্যেকের স্বাতন্ত্রোর ক্ষুপ্তি এবং অন্যদিকে সমগ্রের সস্থিত সামঞ্জস্ত, এই দুই নীতিই একসঙ্গে কাজ করিতেছে। অহঙ্কার এবং প্রেমু, বিকর্ষণ এবং আকর্ষণ স্বষ্টিকে একসঙ্গে গড়িয়া তুলিতেছে। স্বাতন্ত্র্যেও পূর্ণতালাভ করিব এবং মিলনেও নিজেকে পূর্ণভাবে সমর্পণ করিব, ইহা হইলেই মানুষের সার্থকতা ঘটে। অর্জন করিয়া আমার পুষ্টি হইবে এবং বর্জন করিয়া আমার আনন্দ হইবে, জগতের মধ্যে এই দুই বিপরীত নীতির মিলন দেখা যাইতেছে । ফলত, নিজেকে যদি পূর্ণ করিয়া না সঞ্চিত করি, তবে নিজেকে পূর্ণরূপে দান করিব কি করিয়া! সে কতটুকু দান হইবে । যত বড় অহঙ্কার, তাহ বিসর্জন করিয়া তত বড় C3 || এই যে আমি, অতি ক্ষুদ্র আমি, এত বড় জগতের মাঝখানেও সেই আমি স্বতন্ত্র। চারিদিকে কত তেজ, কুত বেগ, কত বস্তু, কত ভার, তাহার আর সীমা নাই, কিন্তু আমার অহঙ্কারকে এই বিশ্বব্রহ্মাও চূর্ণ করিতে পারে নাই..আমি এতটুকু হইলেও স্বতন্ত্র। আমার যে অহঙ্কার সকলের মধ্যেও ক্ষুদ্র-আমাকে , ঠেলিয়া রাখিয়াছে, এই অহঙ্কার যে ঈশ্বরের ভোগের জন্য প্রস্তুত হইতেছে। ইহা নিঃশেষ করিয়া তাহাকে দিয়া ফেলিলে তবেই যে আনন্দের চূড়ান্ত । ইহাকে জাগাইবার সমস্ত দুঃসহ দুঃখের তবেই যে অবসান । ভগবানের এই ভোগের সামগ্ৰীটিকে নষ্ট করিয়া ফেলিবে কে ? 線 আমাদের স্বাতন্ত্রাকে ঈশ্বরে সম্পূর্ণ সমর্পণ করিবার পূর্ববর্তী অবস্থায় যত কিছু দ্বন্দ্ব। তখনই একদিকে স্বার্থ, আর একদিকে প্রেম ; একদিকে প্রবৃত্তি, আর একদিকে নিবৃত্তি । সেই দোলায়মানু অবস্থায়, এই দ্বন্দ্বের মাঝখানেই যাহা সৌন্দর্য্যকে ফুটাইয়া তোলে, যাহা ঐক্যের আদর্শ রক্ষা করে, তাহাকেই বলি মঙ্গল। যাহা একদিকে আমার স্বাতন্ত্র্য, অন্যদিকে অষ্ঠের স্বাতন্ত্র্য স্বীকার করিয়াও পরস্পরের আঘাতে বেসুর বাজাইয়া তোলে না, যাহী” স্বতন্ত্রকে এক সমণ্ডের শাস্তি দান করে, যাহা দুই অহঙ্কারকে এক সৌন্দর্য্যের পরিণয়স্থত্রে বাধিয়া দেয়, তাহাই মঙ্গল। শক্তি স্বাতন্ত্রাকে বাড়াইয়া তোলে, মঙ্গল স্বাতন্ত্র্যকে সুন্দন্তু করে, প্রেম স্বাতন্ত্র্যকে বিসর্জন দেয়। মঙ্গল-সেই শক্তি ও প্রেমের মাঝখানে থাকিয়া প্রবল অর্জনকে একান্ত বিসর্জনের দিকেই অগ্রসর করিতে থাকে। এই দ্বন্দ্বের অবস্থাতেই মঙ্গলের রশ্মি লাগিয়া মানবসংসারে সৌন্দৰ্য্য প্রাতঃসন্ধ্যার মেঘের মত বিচিন্ত্র হইয় উঠে। নিজের সঙ্গে পরের, স্বার্থের সঙ্গে প্রেমের যেখানে সংঘাত, সেখানে মঙ্গলকে রক্ষা করা বড় সুন্দর এবং ੋ কঠিন। কবিত্ব যেমন সুন্দর তেমনি সুন্দর, এবং কবিত্ব যেমন কঠিন তেম্নি কঠিন। % \ কবি যে ভাষায় কবিত্বপ্রকাশ করিতে
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪৫৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।