চায়, সে ভাষা ত তাহার নিজের স্বষ্টি নহে। কবি জন্মিবার বহুকাল পূৰ্ব্বেই সে ভাষা আপনার একটা স্বাতন্ত্র্য ফুটাইয়া তুলিয়াছে। কবি যে ভাবটি যেমন করিয়া ব্যক্ত করিতে চায়, ভাষা ঠিক তেমনটি করিয়া রাশ মানে না । তখন কবির ভাবের স্বাতন্ত্র্য এবং ভাবপ্রকাশের উপায়ের স্বাতন্ত্র্যে একটা দ্বন্দ্ব হয় । যদি সেই দ্বন্দ্বট কেবল দ্বন্দ্ব-আকারেই পাঠকের চোখে পড়িতে থাকে, তবে পাঠক কাব্যের নিন্দ করে, বলে, ভাষার সৱে ভাবের মিল হয় নাই। এমন স্থলে কথাটার অর্থগ্রহ হইলেও তাহা হৃদয়কে তৃপ্ত করিতে পারে না । যে কবি ভাবের স্বাতন্ত্র্য এবং ভাষার স্বাতন্ত্র্যের অনিবাৰ্য্য দ্বন্দুকে ছাপাইয়া সৌন্দর্য্যরক্ষা করিতে পারেন, তিনি ধন্ত হন। যেটা বলিবার র্কেথা, তাহা পুরা বলা কঠিন, ভাষার বাধাবশত কতক বলা যায় এবং কতক বলা যায় না— কিন্তু তবু সৌন্দৰ্য্যকে ফুটাইয়া তুলিতে হইবে, কবির এই কাজ। ভাবের যেটুকু ক্ষতি হইয়াছে, সৌন্দর্য্য তাহার চেয়ে অনেক বেশি পুরণ"করিয়া দেয়। তেমনি আমাদের স্বাতন্ত্র্যকে সংসারের মধ্যে প্রকাশ করিতেছি ; সে সংসার ত আমার নিজের হাতে গড়া নয় ; সে আমাকে পদে পদে বাধা দেয় । যেমনটি হইলে সকল দিকে আমার পুরা বিকাশ হইতে পারিত, তেমন আয়োজনটি চারিদিকে নাই ; সুতরাং সংসারে আমার সঙ্গে বাহিরের দ্বন্দ্ব আছেই। কাহারো জীবনে সেই দ্বন্ধটাই কুৈবলি-চোখে পড়িতে থাকে, সে কেবলি বেস্থরই বাজাইয়া তোলে। আর কোনো কোনো গুণী সংসারে এই অনিবাৰ্য্য দ্বন্ধের মধ্যেই সঙ্গীত স্বষ্টি করেন, তিনি बंछमश्रमि । s گهیه ੀਬ l তাহার সমস্ত অভাব ও ব্যাঘাতের উপরেই সৌন্দৰ্য্য রক্ষণ করেন । মঙ্গলই সেই সৌন্দর্য্য। সংসারের প্রতিঘাতে র্তাহীদের অবাধ স্বাতন্ত্র্যবিকাশের যে ক্ষতি হয়, মঙ্গল তাহার চেয়ে অনেক বেশি পূরণ করিয়া দেয়। বস্তুত ৰম্বের বাধাই মঞ্চলের সৌন্দর্য্যকে প্রকাশিত হইয়া উঠিবার অবকাশ দেয় ; স্বার্থের ক্ষতিই ক্ষতিপূরণের প্রধান উপায় হইয়া উঠে। এমনি করিয়া দেখা যাইতেছে, স্বাতন্ত্র্য আপনাকে সফলতা দিবার জন্তই আপনারই খৰ্ব্বত স্বীকার করিতে থাকে ; নহিলে তাহ বিরুতিতে গিয়া পৌঁছে এবং বিকৃতি বিনাশে গিয়া উপনীত হইবেই। স্বাতন্ত্র্য যেখানে মঙ্গলের অনুসরণ করিয়া প্রেমের দিকে না গেছে, সেখানে সে বিনাশের দিকেই চলিতেছে । অতিবৃদ্ধিদ্বারা সে বিকৃতিপ্রাপ্ত হইলে বিশ্বপ্রকৃতি তাহার বিরুদ্ধ হইয় উঠে ; কিছুদিনের মত উপদ্রব করিয় তাহাকে মরিতেই হয় । অতএব মানুষের স্বাতন্ত্র্য যখন মঙ্গলের সহায়তায় সমস্ত দ্বন্দ্বকে নিরস্ত করিয়া দিয়া সুন্দর হইয়া উঠে, তখনই বিশ্বাত্মায় সহিত মিলনে সম্পূর্ণ আত্মবিসর্জনের জন্ত সে প্রস্তুত হয় । বস্তুত আমাদের দুর্দান্ত স্বাতন্ত্র্য মঙ্গলসোপান হইতে প্রেমে উত্তীর্ণ হইয়। তবেই সম্পূর্ণ হয়,—সমাপ্ত হয় । এই প্রেম বলিতে কি বুঝায় । না, সত্য যেখানে আমাদের . কাছে এতই নিরতিশয় সত্য যে, তাহাই আনন্দ । এই চঞ্চল সংসারে আমরা সত্যের আস্বাদ কোথায় পাই ? যেখানে আমাদের • মল বসে। রাস্তার লোক আসিতেছে-যাইতেছে, তাহারা আমাদের কাছে ছায়া ; তাহীদের
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪৫৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।