8to বিস্ময়চিহ্লের দ্বারা চিহ্ণিত করিয়াছে ; নির্জন দ্বীপের সমুদ্রতটকে মানুষ পাহাড়ের গায়ে কারুকৌশলপূর্ণ গুহা খুদিয়া চিহ্রিত করিয়াছে, বলিয়াছে, ইহা আমার হৃদয়কে তৃপ্ত করিল ; এই চিন্তুই বম্বাইয়ের হস্তিগুহ । পুৰ্ব্বমুখে দাড়াইয়ী মানুষ সমুদ্রের মধ্যে হুর্য্যোদয়ের মহিমা দেখিল, অমনি বহুশতক্রোশ দূর হইতে পাথর আনিয়া সেখানে আপনার করজোড়ের চিন্তু রাখিয়া দিল, তাহাই কণারকের মন্দির । সত্যকে যেখানে মানুষ নিৰিড়রূপে অর্থাৎ আনন্দরূপে, অমৃতরূপে উপলব্ধি করিয়াছে, সেইখানেই আপনার একটা চিহু কাটিয়াছে। সেই চিকুই কোথাও বা মূৰ্ত্তি, কোথাও বা মন্দির, কোথাও বা তীর্থ, কোথাও বা রাজধানী। সাহিত্যও এই চিন্তু। বিশ্বজগতের যে-কোনো ঘাটেই মানুষের হৃদয় আসিয়া ঠেকিতেছে, সেইখানেই সে ভাষা দিয়া একটা স্থায়ী তীর্থ বাধাইয়া দিবার চেষ্টা করিতেছে—এমূনি করিয়া বিশ্বতটের সকল স্থানকেই সে মানবযাত্রীর হৃদয়ের পক্ষে ব্যবহারযোগ্য, উত্তরণযোগ্য করিয়া তুলিতেছে। এমনি করিয়া মানুষ জলে-স্থলে-আকাশে, শরতে বসন্তে-বর্ষায়, ধৰ্ম্মে কৰ্ম্মে-ইতিহাসে बछवस्थfन ! [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, গোঁধ। অপরূপ চিকু কাটিয়া-কাটিয়া সত্যের সুন্দর মুর্তির প্রতি মানুষের হৃদয়কে নিয়ন্ত আহবান করিতেছে। দেশে-দেশে কালেকালে এই চিহ্ল, এই আহবান কেবলি বিস্তৃত হইয়া চলিতেছে। জগতের সর্বত্রই মানুষ সাহিত্যের দ্বারা হৃদয়ের এই চিহ্ল গুলি যদি না কাটিত, তবে জগৎ আমাদের কাছে আজ কত সঙ্কীর্ণ হইয়া থাকিত, তাহ আমরা কল্পনাই করিতে পারি না । আজ এই চোখে-দেখা কানে-শোনা জগৎ যে বহুলপরিমাণে আমাদের হৃদয়ের জগৎ হইয়া উঠিয়াছে, ইহার প্রধান কারণ মানুষের সাহিত্য হৃদয়ের আবিষ্কারচিহ্লে জগৎকে মণ্ডিত করিয়া তুলিয়াছে। সত্য যে পদার্থপুঞ্জের স্থিতি ও গতির সামঞ্জস্ত, সত্য যে কাৰ্য্যকারণপরম্পর, সে কথা জানাইবার অন্ত শাস্ত্র আছে—কিস্ত সাহিত্য জানাইতেছে, সত্যই আনন্দ, সত্যই অমৃত। সাহিত্য উপনিষদের সেই মন্ত্রকে অহরহ ব্যাখ্যা করিয়া চলিয়াছে —“রসে। বৈ স: রসং হেবায়ং লব্ধ নন্দীভবতি ।” তিনিই রস ; এই রসকে পাইয়াই মানুষ আনন্দিত হয়। ঐরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪৫৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।